দক্ষিণ আফ্রিকার এক আদালত বৃহস্পতিবার এক মাকে তার ছয় বছরের মেয়েকে বিক্রি করার অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে। তবে শিশুটির এখনো কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এই ঘটনা দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
৩৫ বছর বয়সী র্যাকুয়েল স্মিথ তিন মাস ধরে চলা বিচার প্রক্রিয়ায় দোষী সাব্যস্ত হন এবং রায় ঘোষণার সময় শান্তভাবে আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মামলার শুরুতেই র্যাকুয়েল এবং আরও দুই পুরুষ অভিযুক্তকে তার মেয়ে জশলিন স্মিথকে অপহরণ ও মানবপাচারের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
বিচারক নাথান এরাসমাস বৃহস্পতিবার রায়ে বলেন, ‘আসামি কোনো অনুশোচনা প্রকাশ করেনি।’ তিনি আরো বলেন, সাজা ঘোষণার আগের দিন পর্যন্তও ওই মা মিথ্যা বলেই যাচ্ছিলেন।’ অপর দুই পুরুষকেও একই দিন শিশু অপহরণ ও দাসত্বে বিক্রির অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যা দক্ষিণ আফ্রিকায় এসব অপরাধের সর্বনিম্ন শাস্তি।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে শিশু জশলিন নিখোঁজ হয়। সে তার মা, দুই ছোট ভাইবোন এবং মায়ের প্রেমিকের সঙ্গে সালদানহা বে-তে একটি ছোট কুঁড়েঘরে থাকত। পুলিশ, নৌবাহিনী ও স্থানীয়রা মেয়েটিকে খুঁজে বেড়ালেও তাকে আর পাওয়া যায়নি।
শিশুটির ছবি পুরো শহরজুড়ে লাগানো হয়, এরপর জাতীয় সংবাদমাধ্যমেও তা প্রচার হয়। অনুসন্ধানের দুই সপ্তাহ পর পুলিশ তার মা র্যাকুয়েল, মায়ের প্রেমিক জ্যাকুইন অ্যাপলিস এবং তাদের এক বন্ধু স্টিভেনো ভ্যান রাইন-কে গ্রেপ্তার করে।
প্রসিকিউশন জানায়, র্যাকুয়েল মাদকাসক্ত ছিলেন এবং তিনি তার মেয়েকে মাত্র ২০ হাজার র্যান্ড (প্রায় ১ হাজার ১০০ মার্কিন ডলার)-এ বিক্রি করেছিলেন। ঘটনাটির প্রতি জনসাধারণের আগ্রহ এতটাই বেশি ছিল যে আদালত প্রক্রিয়া সালদানহা বে-র একটি কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় এবং তা জাতীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
বিচার চলাকালে ওই মা ও অপর দুই অভিযুক্ত সাক্ষ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।
২ মে তাদের দোষী সাব্যস্ত করার সময় বিচারক রায় দেন যে, শিশুটিকে দাসত্বে বিক্রি করা হয়েছে। প্রসিকিউশন পক্ষ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের দাবি জানায় এবং বিচারকের কাছে অনুরোধ করে, যেন তিনি এ বিষয়টি বিবেচনায় নেন যে মেয়েটি এখনও নিখোঁজ।
দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় প্রসিকিউশন কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র এরিক এনটাবাজালিলা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা তাকে পাইনি, আমরা জানি না সে কোথায়, তাই রাষ্ট্র তার হয়ে আদালতে কণ্ঠস্বর তুলে ধরেছে, কারণ সে নিজে এখানে নেই।’ তবে এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। মেয়ে কোথায় — এ বিষয়ে র্যাকুয়েল স্মিথ কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি, এমনকি মেয়েটির পিতৃবংশীয় দাদী রিটা ইয়নের অনুরোধের পরও না।
রিটা ইয়ন জানান, জশলিনের দুই ছোট ভাইবোন প্রায়ই তার খোঁজ করে। রায় ঘোষণার পর টিভি চ্যানেল নিউজরুম আফ্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো জশলিনকে খুঁজে পাচ্ছি না। এটা খুব কষ্টদায়ক, আমরা জানি না সে কোথায়, কী খাচ্ছে বা কী পান করছে, কিংবা যে মানুষগুলো তাকে নিয়ে গেছে তারা কেমন ব্যবহার করছে।’ সূত্র : নিউইয়র্ক পোস্ট
আরএ/টিএ