২০১৪ সালে ভারত বাংলাদেশে গরু রপ্তানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ওই বছরের আগেই, ২০১৩ সালে ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু আমদানি হয়েছিল ২৩ লাখ। তবে ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় নির্ভরতা কমিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে হাঁটে বাংলাদেশ। স্থানীয় খামারিরা উদ্যোগ নিয়ে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে ঘুরে দাঁড়ান।
বর্তমানে বাংলাদেশে গরু আমদানি প্রায় শূন্যের কোটায়। যদিও এখনো সীমান্তের ৩-৪টি করিডর দিয়ে গরু অনুপ্রবেশের চেষ্টা চলে, তবে সীমান্তরক্ষীদের কড়াকড়ির কারণে সেটিও অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
চলতি ২০২৫ সালের কোরবানির ঈদের জন্য সারাদেশে ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৫৪৪টি খামারে প্রস্তুত হয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি কোরবানির উপযোগী পশু। এর মধ্যে রাজশাহী বিভাগে রয়েছে সবচেয়ে বেশি—৪৩ লাখ ৪৪ হাজার ৪৯টি। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ (১৯ লাখ ৭৪ হাজার ৭৪টি) এবং তৃতীয় অবস্থানে খুলনা (১৪ লাখ ৩৪ হাজার ৫৮৭টি)। রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও খুলনা—এই তিন বিভাগ থেকেই আসবে মোট পশুর প্রায় ৭০ শতাংশ, যার মধ্যে ৩৫ শতাংশ রাজশাহী বিভাগ একাই জোগান দেবে।
চাহিদার তুলনায় এবারে প্রায় ২০ লাখ ৬৮ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকবে বলে জানায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। বিশ্লেষকদের মতে, দেশি পশুতেই এবারের কোরবানির ঈদের মোট অর্থনীতি ছাড়িয়ে যেতে পারে এক লাখ কোটি টাকা।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, “দেশীয় পশুতেই এবারের কোরবানি সম্ভব হবে। খামারিরা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। মাঠপর্যায়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে যাতে অবৈধ পশু অনুপ্রবেশ না ঘটে। পশুর হাটেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।”
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত অর্থবছরে দেশে কৃত্রিম প্রজনন করা হয়েছে ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার পশুর। এর মধ্যে গাভি ও বকনাতে হয়েছে ৩৮ লাখ ৮১ হাজার। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বাছুর উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১৭ লাখ এবং ব্রিডিং বুল থেকে সিমেন উৎপাদন হয়েছে ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার ডোজ।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ও বিএলআরআই-এর সাবেক মহাপরিচালক ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, “সরকার যে চাহিদার হিসাব করছে, বাস্তবে সেটি আরও বেশি হতে পারে। ইফেকটিভ চাহিদা মেটাতে পশুর দাম সহনীয় রাখা জরুরি।”
বিশ্লেষকরা আরও বলেন, বহু প্রতিষ্ঠান এখনো পুরাতন বীজ (সিমেন) দিয়ে প্রজনন চালাচ্ছে, ফলে কাঙ্ক্ষিত ফল মিলছে না। একইসঙ্গে গরু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়া, ব্রিডিং এবং কৃত্রিম প্রজননে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ডা. মো. বয়জার রহমান বলেন, “দেশে পশু উৎপাদনে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, মোটাতাজাকরণ, মানসম্পন্ন ব্রিড এবং সরকারি-বেসরকারি সহায়তা খামারিদের স্বনির্ভর করেছে। তবে দেশীয় জাত সংরক্ষণের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে।”
এসএন