আজ সোমবার (২ জুন) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বেশ হবে। বাজেট তো দেশের মানুষের জন্য। কিন্তু অনেকেই বাজেট নিয়ে আগ্রহ দেখান না। অথচ সাধারণ মানুষেরও বাজেটের দিকে মনোযোগ বাড়ানো উচিত। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, বাজেটের কোন কোন দিকে নজর রাখবেন তারা। সাধারণত বাজেটের আটটি বিষয়ে জনগণ বেশি নজর রাখেন।
১. মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য
বাজেটে পণ্যের ওপর শুল্ক বা কর বাড়লে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনে বড় প্রভাব ফেলে। সুতরাং দাম বাড়বে, এমন কোনো কর বা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে কি না সেদিকে লক্ষ রাখা দরকার সাধারণ নাগরিকদের।
২. করনীতি ও করের বোঝা
বাজেটে নতুন কর আরোপ বা বিদ্যমান করের হার পরিবর্তন সাধারণ মানুষের ব্যয় বাড়াতে পারে। বাংলাদেশে বেতনভোগী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণিরাই হচ্ছেন কর আদায়ের সহজ লক্ষ্যবস্তু। নতুন বাজেটে কাদের লক্ষ্য করে কর বা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, সেটা জানা গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং এদিকেও নজর থাকবে।
৩. কর্মসংস্থান ও বেকারত্ব
এই সময়ের বড় সমস্যা হচ্ছে বিনিয়োগ মন্দায় কর্মসংস্থানের সুযোগ কম সৃষ্টি হচ্ছে। সুতরাং বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য নতুন কোনো উদ্যোগ আছে কি না, সেটা দেখা গুরুত্বপূর্ণ।
৪. শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ
সরকারি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ খাতে কখনোই পর্যাপ্ত বাজেট রাখা হয় না। নতুন বাজেটে এ দুই খাতে বাজেট বাড়ল না কমল, সেটাও জানা দরকার। কেননা এই খাতে বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি পেলে সেবা উন্নত হবে, যা থেকে প্রত্যক্ষভাবে নাগরিকেরা উপকৃত হবেন।
৫. করমুক্ত আয়ের সীমা
টানা তিন বছর উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ দেখছেন দেশের সাধারণ মানুষ। ফলে বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হলে কিছুটা স্বস্তি পাবে দেশের মানুষ। এতে ক্রয়ক্ষমতাও বাড়বে।
৬. উন্নয়ন প্রকল্প ও অবকাঠামো
নিজ এলাকায় রাস্তা, সেতু, বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ ইত্যাদি অবকাঠামো খাতে নতুন কোনো প্রকল্প বা বরাদ্দ আছে কি না, সে বিষয়েও মানুষের আগ্রহ থাকবে।
৭. ঋণ ও বাজেট–ঘাটতি
সরকার কি বাজেট–ঘাটতি পূরণের জন্য বেশি ঋণ নিচ্ছে—এ তথ্য জানা দরকার। ঋণ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বেশি নেওয়া হচ্ছে, নাকি বৈদেশিক ঋণ বেশি নিচ্ছে তার ওপর নির্ভর করবে ভবিষ্যতে সুদ পরিশোধের চাপ কতটা বাড়বে। এই চাপ অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
৮. স্বচ্ছতা
বাজেটের ব্যয় ও আয়ের হিসাব স্বচ্ছভাবে প্রকাশ করা হলে নাগরিকেরা বুঝতে পারেন তাঁদের করের টাকা কোথায় ব্যয় হচ্ছে। এতে সরকারের জবাবদিহিও নিশ্চিত হয়। সুতরাং বাজেট কতটা স্বচ্ছ, সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রসঙ্গত, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার চূড়ান্ত করা হয়েছে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। আজ সোমবার (২ জুন) প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে এই বিশাল বাজেট প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চলে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। জাতীয় অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ এ সভায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত বাজেট প্রস্তাবনা সর্বসম্মতভাবে অনুমোদন পায়।
এসএন