ভারতের চলচ্চিত্র জগতে নতুন করে বিতর্কের ঝড় তুলেছেন নির্মাতা রাম গোপাল ভার্মা। সম্প্রতি ইন্ডিয়া টিভির ‘শোবিজ’ অনুষ্ঠানে এক খোলামেলা সাক্ষাৎকারে দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির সাফল্য নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন তিনি।
রাম গোপাল ভার্মার মতে, দক্ষিণ ভারতের কিংবদন্তি অভিনেতাদের উত্থানের পেছনে ছিল মূলত হিন্দি ছবির ছায়া। তার ভাষায়, “রাজিনীকান্ত, চিরঞ্জীবী, এন.টি. রামা রাও, রাজকুমার— এরা সবাই মূলত অমিতাভ বচ্চনের ৭০ ও ৮০ দশকের ছবিগুলোর রিমেকে কাজ করে ঈশ্বরতুল্য স্টার হয়ে উঠেছিলেন।”
তিনি বলেন, “চারটি দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিই তখন অমিতাভের ছবির রিমেক বানাচ্ছিল। এখান থেকেই তারা তৈরি করেছিল ঈশ্বরতুল্য তারকারা।”
রাম গোপাল ভার্মা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন, ‘দেওয়ার’ ও ‘অমর া অ্যান্টনি’-র তামিল রিমেকে রাজিনীকান্তের অভিনয়, ‘মুকাদ্দার কা সিকান্দার’-এর রিমেকে চিরঞ্জীবীর অংশগ্রহণ, আর এন.টি. রামা রাও এবং রাজকুমারের বহু হিন্দি রিমেক ভিত্তিক ছবি।
তিনি আরও দাবি করেন, নব্বইয়ের দশকে যখন বলিউড সুর-ভিত্তিক প্রেমের ছবির দিকে ঝুঁকে পড়ে (যেমন ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’), তখন দক্ষিণ ভারতের ইন্ডাস্ট্রি ধরে রাখে পুরনো মসালা সিনেমার ধারা। এই ধারা ছিল অমিতাভ বচ্চনের সময়কার নায়ক-চালিত ছবির আদলে।
তবে এখানেই থেমে থাকেননি রাম গোপাল ভার্মা। তার দাবি, “দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ বাণিজ্যিক পরিচালক সিনেমার গভীরে যান না। ওরা বাস্তবতা বোঝেন, তবে সিনেমার ভাষা বোঝেন না।” এই মন্তব্যকে ঘিরে ইতিমধ্যেই দক্ষিণী চলচ্চিত্র মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অনেকেই একে "এলিটবাদী" এবং "বাস্তবতা-বিচ্যুত" আখ্যা দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, 'পুষ্পা' যখন তৈরি হচ্ছিল, তখন এক প্রযোজক বলেছিলেন, “এই ছবি চলবে না, কারণ আল্লু অর্জুন পান খাচ্ছে আর তার সিক্স-প্যাক নেই!” অথচ আজ সেই ‘পুষ্পা’ দক্ষিণ ভারতের গর্ব।
রাম গোপাল ভার্মার এই মন্তব্য নতুন করে ‘নর্থ বনাম সাউথ’ বিতর্কে আগুন ঢেলেছে। অনেকেই মনে করছেন, 'বাহুবলি', 'আর আর আর', 'কান্তারা', '৯৬' প্রভৃতি মৌলিক দক্ষিণী সিনেমাকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে তার কথায়।
যদিও বিতর্ক সৃষ্টি হলেও, একথা অস্বীকার করা যায় না— রাম গোপাল ভার্মা আবার প্রমাণ করলেন, সত্য হোক বা আধা-সত্য, তার মুখ থেকে বের হওয়া মন্তব্য ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতকে কাঁপিয়ে দিতে পারে।
এসএম/টিএ