নির্বাচনে কালো টাকা-কালো হাতের অপশক্তিকে যুবসমাজ পরাজিত করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেছেন, ‘এবারের ভোটে যদি কোনো অপশক্তি কালো হাত আর কালো টাকা নিয়ে এগিয়ে আসে, যেভাবে জুলাই আন্দোলনে তোমরা বুক চেতিয়ে সফল করেছ সেভাবে সেই কালো অপশক্তিকে তোমরা ব্যর্থ করে দেবে।’
সোমবার (৯ জুন) বড়লেখা উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে উপজেলা জামায়াতের আমিরর এমাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে পৌর শহরে আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য এসব কথা বলেন।
জামায়াত আমির বলেছেন, ‘আবু সাঈদ আমাদের অহংকার, আমাদের সেনাপতি।
মনে রাখা উচিত, বাংলাদেশের মায়েরা শুধুমাত্র একটা আবু সাঈদকে জন্ম দেয়নি। এমন লাখ লাখ আবু সাঈদের জন্ম হয়েছে। কী বলেছিল আবু সাঈদ, সে তার বন্ধুদের দাবি আদায়ের জন্য বলেছিল, হয় আমার অধিকার আমাদের দে। না হয় আমার বুকে একটা গুলি দে, বুক পেতেছি গুলি কর।’
তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম আবু সাঈদ মরে যায়নি। সে বাংলাদেশের জন্য জীবন দিয়ে গেছে। আবু সাঈদের মৃত্যু শুধু বাংলাদেশের বাবা-মায়ের হৃদয়কে নাড়া দেয়নি। গোটা বিশ্বের মানুষকে নাড়া দিয়েছিল।
তার মতো যারা লড়াই করে জীবন দিয়েছে তারাই আমাদের জাতীয় বীর। তাদের বীরের মর্যাদা দিতে হবে। কারণ তাদের কারণে বাংলাদেশ আজ মুক্তি পেয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এবারের ভোটে যদি কোনো অপশক্তি কালো হাত আর কালো টাকা নিয়ে এগিয়ে আসে, যেভাবে জুলাই আন্দোলনে তোমরা বুক চেতিয়ে সফল করেছ সেভাবে সেই কালো অপশক্তিকে তোমরা ব্যর্থ করে দেবে। তোমরা হয়ত ভাবছ, আমাদের ওপর দায়িত্ব দিয়ে তোমরা নির্ভার।
আমরা যেমন জুলাইয়ে তোমাদের নেতৃত্বে লড়াই করেছি, এবারের ভোটের লড়াইও তোমাদের নেতৃত্বে হবে ইনশাআল্লাহ। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠ করতে সবাইকে পাহারাদারের ভূমিকায় থাকতে হবে।’
নির্বাচনে কালো টাকা-কালো হাতের অপশক্তিকে যুবসমাজ পরাজিত করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি দাবি করেন, ইসলামী সমমনা দলগুলো চাঁদাবাজিসহ কোনো অবৈধ কাজের সাথে জড়িত নয়।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের ভেতরে দেবেন। তিনি ইতিমধ্যে বলেছেন, এপ্রিলের প্রথমার্ধে হবে। আমরা বরাবর বলে এসেছি, তিনি যেন তার কথার ওপর অটুট থাকেন। জাতিকে দেওয়া ওয়াদা যেন তিনি রক্ষা করেন। আমরা অবশ্য তাকে বলেছিলাম, রমজানের আগে হলে ভালো হয়। যদি একান্ত কারণে কিছুটা পিছাতে হয়, তাহলে অবশ্যই তা এপ্রিলের পরে হওয়া উচিত নয়। দেশের আবহাওয়া ও সার্বিক বিষয়ে বিবেচনা নিয়ে বলেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সেনাবাহিনীকে জনগণের সাথে দেখতে চাই। আমরা কোনো দলের সাথে দেখতে চাই না। সেনাবাহিনী কোনো দলের না। আবার সেনাবাহিনী কোনো দলের বিপক্ষেও না। সেনাবাহিনী দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের পাহারায় নিয়োজিত। তারা আমাদের অহংকার। সেনাবাহিনী যতদিন পর্যন্ত এই জায়গায় থাকবে আল্লাহ তাআলা তাদের মর্যাদায় রাখবেন। আমরা দোয়া করি, সেনাবাহিনীর এই মর্যাদা যেন আল্লাহ রক্ষা করেন।’
যুবকদের উদ্দেশ্যে জামায়াত আমির বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছর তোমরা ভোট দিতে পারো নাই। এই যুবকরাই লড়াই করে আজকের এই সরকার গঠন করে দিয়েছে। এবার যেসব যুবকদের বয়স ১৮ বছর হবে তাদের প্রত্যেকের ভোট যেন নিশ্চিত করা হয়। প্রবাসে অবস্থানরত ভাইবোনেরা সমানতালে লড়াই করেছে; তারা রেমিট্যান্স বন্ধ করে লড়াই করেছে, লেখালেখি করেছে। এমনকি যে দেশে মিছিল-মিটিং নিষিদ্ধ সেখানে জীবন-চাকরি বাজি রেখে তোয়াক্কা না করে তারা সেসব কর্মসূচি আমাদের সাথে পালন করেছে। তাদের কাছে আমরা ঋণী।
সেই দেশের প্রশাসন তাদের জেলে ভরেছে, শাস্তি দিয়েছে। প্রাথমিক পদক্ষেপে তাদের অনেকেই মুক্ত হয়েছেন। কিন্তু এখনও কিছু কিছু ভাই জেলের ভেতরে রয়ে গেছেন। সরকারকে বলেছি, তাদের অবিলম্বে মুক্তির ব্যবস্থা করেন। সম্মানজনক জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে তাদের পুনর্বাসন করুন। এবং প্রবাসীদের ভোটার অধিকার নিশ্চিত করুন। তাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধা বলবেন আর নাগরিকেত্বের প্রথম অধিকার তাদের ভোট দেবেন না-এটা আমরা মানব না। এবারের ভোটে সব প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং সেই ভোট তারা যেন স্বচ্ছভাবে দেশে কিংবা বিদেশে বসে দিতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’
এসএম/টিএ