যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য আলোচনায় বিরল খনিজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ইঙ্গিত

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মঙ্গলবার জানিয়েছেন, তারা একটি কাঠামোগত চুক্তিতে পৌঁছেছেন, যা বাণিজ্য বিরোধে সাময়িক অস্ত্রবিরতির পথে ফেরার সুযোগ করে দেবে এবং চীনের বিরল খনিজ রপ্তানিতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পথ তৈরি করবে। তবে এই চুক্তি দীর্ঘস্থায়ী বাণিজ্য বিরোধ মেটানোর খুব একটা ইঙ্গিত দেয়নি।

দুই দিনের টানা আলোচনা শেষে, লন্ডনে মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, ‘এই কাঠামোটি গত মাসে জেনেভায় স্বাক্ষরিত সমঝোতার ভিত্তিতে বাস্তব রূপ দেওয়ার একটি পদক্ষেপ। এতে দ্বিপাক্ষিক পাল্টা শুল্ক কমানোর প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে।

তবে জেনেভার সেই চুক্তি কার্যকর হতে গিয়ে চীনের বিরল খনিজের ওপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এর জবাবে ট্রাম্প প্রশাসন চীনের ওপর কিছু প্রযুক্তিপণ্যের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে, যার মধ্যে ছিল সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন সফটওয়্যার ও রাসায়নিক উপাদান।

লুটনিক জানান, লন্ডনে হওয়া চুক্তির ফলে কিছু মার্কিন রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে, যদিও তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনুমোদনের জন্য ফিরে যাবো, চীনা পক্ষ প্রেসিডেন্ট শি’র অনুমোদন নেবে এবং দুইপক্ষ সম্মত হলে এই কাঠামো বাস্তবায়ন করা হবে।

চীনের ভাইস কমার্স মন্ত্রী লি চেংগ্যাংও আলাদা এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘উভয় পক্ষই, রাষ্ট্রপ্রধানদের সাম্প্রতিক ফোনালাপ ও জেনেভা বৈঠকে হওয়া সমঝোতা অনুসারে একটি কাঠামোগত চুক্তিতে পৌঁছেছে।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কাঠামো চুক্তি জেনেভার বোঝাপড়া ভেঙে পড়া থেকে রক্ষা করতে পারে, তবে এটি এখনো ট্রাম্পের একতরফা শুল্ক আরোপ ও চীনের রপ্তানি নির্ভর অর্থনৈতিক মডেল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অভিযোগের সমাধান দেয়নি।

শুল্ক বৃদ্ধির সম্ভাবনা এবং বিনিয়োগকারীদের প্রতিক্রিয়া

উভয় দেশ আগামী ১০ আগস্টের মধ্যে একটি বিস্তৃত চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারলে, বিদ্যমান শুল্ক হার প্রায় ৩০ শতাংশ থেকে বেড়ে যথাক্রমে ১৪৫ শতাংশ (যুক্তরাষ্ট্র) এবং ১২৫ শতাংশ (চীন) হয়ে যাবে। এতে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ক্রিস ওয়েস্টন বলেন, ‘কতটা বিরল খনিজ যুক্তরাষ্ট্রে আসবে এবং মার্কিন চিপ রপ্তানি কতটা সহজ হবে তা নির্ধারণ করবে বাজারের গতি।’

লুটনিক বলেন, বিরল খনিজ ও চুম্বক রপ্তানিতে চীনের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা চুক্তির মূল বিষয়গুলোর একটি ছিল। এ ছাড়া, যখন ওই খনিজ আসেনি, তখন যুক্তরাষ্ট্র কিছু পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছিল—সেগুলোও পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা হবে। চীনের এই পদক্ষেপ বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল। পাল্টা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিপণ্যের রপ্তানি বন্ধ করে দেয়।

বিশ্বব্যাংক এরই মধ্যে ২০২৫ সালের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ০.৪ শতাংশ কমিয়ে ২.৩ শতাংশ করেছে, যার অন্যতম কারণ হিসেবে তারা শুল্ক বাড়া এবং অনিশ্চয়তাকে উল্লেখ করেছে।

লুটনিক বলেন, ট্রাম্প ও শির ফোনালাপই লন্ডনের এই চুক্তিতে গতি আনে। গত মে মাসে চীনের যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ৩৪.৫ শতাংশ কমেছে—মহামারির পর এটি সবচেয়ে বড় পতন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আপিল আদালত ট্রাম্পের একতরফা ৩৪ শতাংশ শুল্ক বহাল রেখেছে, যদিও নিম্ন আদালত এগুলোর আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। এই রায় চীনের ওপর মার্কিন চাপ জারি রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এসএম/টিকে   


Share this news on:

সর্বশেষ

img
নেতানিয়াহুর দেশের হামলায় নিহত ইরানের বিমানবাহিনীর প্রধানসহ অন্তত ২০ জেষ্ঠ কমান্ডার Jun 13, 2025
img
ছাভার সাফল্যের পরও স্পাই ইউনিভার্সে নেই ভিকি Jun 13, 2025
img
গণতন্ত্রের পথে মেঘের ছায়া পড়লে বৃষ্টি হয়ে আসে জিয়া পরিবার Jun 13, 2025
img
‘সবকিছু যখন অনিশ্চয়তার মধ্যে চলে যাচ্ছিল, তখন এই দুই নেতা জাতিকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন’ Jun 13, 2025
img
‘ইরানকে সমঝোতায় আসতে হবে, সবকিছু শেষ হওয়ার আগেই’ Jun 13, 2025
img
অপারেশন রাইজিং লায়ন সম্পর্কে অজানা তথ্য Jun 13, 2025
img
বিএনপি মানুষের সংকটকালীন দল : সাদিক Jun 13, 2025
img
আগামী নির্বাচনে দেশপ্রেমিক শক্তিকে বিজয়ী করতে হবে : গোলাম পরওয়ার Jun 13, 2025
img
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বাইরে থাকবে, সেটা নিশ্চিত Jun 13, 2025
img
ভিপি নুরকে অবরুদ্ধ করার ঘটনায় পটুয়াখালীতে মানববন্ধন Jun 13, 2025
img
শাহরুখের সঙ্গে বাস্তবধর্মী প্রেমের ছবিতে ফিরতে চান কাজল! Jun 13, 2025
img
সারা বিশ্বে নেতানিয়াহুর দেশের দূতাবাস বন্ধের সিদ্ধান্ত Jun 13, 2025
img
নানা নাটকীয়তা শেষে মায়ের কোলে ফিরলেন সমু Jun 13, 2025
img
শেখ হাসিনা ও জয়সহ ২২২ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের Jun 13, 2025
img
২১ বছর পর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার Jun 13, 2025
img
‘বিদেশে নির্বাচন নিয়ে বৈঠক গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী’ Jun 13, 2025
img
বিএনপির জয়, ফেব্রুয়ারিতেই হয়! : পিনাকী ভট্টাচার্য Jun 13, 2025
img
চট্টগ্রামে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ২ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত Jun 13, 2025
img
রণবীর কাপূরের প্রাক্তন প্রেমিকাকে বিয়ে করেছিলেন সঞ্জয়! Jun 13, 2025
img
‘আর আর আর’-এ আট মিনিটের কেমিওর জন্য পারিশ্রমিকের রেকর্ড গড়েছিলেন অজয় দেবগন Jun 13, 2025