আগামী নির্বাচনে দেশপ্রেমিক শক্তিকে বিজয়ী করতে হবে : গোলাম পরওয়ার

‘স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় আগামী নির্বাচনে দেশপ্রেমিক শক্তিকে বিজয়ী করতে হবে। বাংলাদেশ আর কোনো বিদেশি প্রভুর কথায় দেশ চালাবে না। নিজেরাই নিজেদের শক্তি নিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ’ বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

শুক্রবার (১৩ জুন) সাতকানিয়ার কেরানীহাটে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

গোলাম পরওয়ার বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিচার সময়ের দাবি। তিনি যেভাবে মানুষ হত্যা করেছে, তার বিচার এ সরকারের অধীনে হওয়া উচিত। দেশের সব সেক্টরে সংস্কার প্রয়োজন। তবে নির্বাচনের জন্য যেসব সংস্কার প্রয়োজন, সেসব সেক্টরে অবশ্যই সংস্কার করতে হবে। অন্যথায় আরেকটি ফ্যাসিস্ট হাসিনা তৈরি হবে। সরকারের কাছে আমাদের কয়েকটি প্রস্তাব জানানো হয়েছিল— স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিনিধি নির্বাচিত করে ক্ষমতা হস্তান্তর করা দরকার। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন করার দাবি জানানো হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়নের জন্য প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে দুটি সমস্যা বিদ্যমান ছিল— এক, ফ্যাসিবাদ ও কর্তৃত্ববাদ কায়েম হয়েছিল। দুই, দিল্লির তাবেদারি করে হাসিনা দেশ চালিয়েছেন। আমাদের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করে বিদেশি অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সচেতন দেশবাসীর কাছে বলতে চাই, আমরা একটি স্বাধীন ভূখণ্ড, একটি মানচিত্র পেয়েছি। কিন্তু স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অর্থনীতি ও রাজনীতির নীতিকে হাসিনা ধূলিসাৎ করেছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে কোনো বিরোধী দল যায়নি, ভোটকেন্দ্রে ভোটাররাও যায়নি। এমনকি এরশাদও নির্বাচনে যেতে চায়নি, ভারত তাকে জোর করে নির্বাচনে পাঠিয়েছে।

এমপি প্রার্থীর নাম ঘোষণায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরীকে মনোনীত করা হয়েছে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জামায়াতের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আনুগত্যের ক্ষেত্রে সংগঠনের অনেক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে অপরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করে মন্তব্য করা এই সংগঠনের ঐতিহ্য নয়। তাই আশা করি, সংগঠনের ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষার্থে সবাই কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে সংগঠনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়বে। নিয়মতান্ত্রিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে আল্লাহ আমাদের সহায় হবেন, আল্লাহ আমাদের বিজয় দান করবেন, ইনশাআল্লাহ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জনাব মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, এ আসনের বৈঠকের জন্য আমিরে জামায়াত মকবুল আহমদ সাহেবও গ্রেপ্তার হয়েছেন। জাতির স্বার্থে, দ্বীনের স্বার্থে ও সমঝোতার স্বার্থে বিভিন্ন জায়গায় আমাদের প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে। সেজন্য আমিরে জামায়াত নিজের আসনও জাতির স্বার্থে ছেড়ে দিতে পারেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, বৈঠকে সব শুনে ময়দানে গিয়ে বিপরীত দিকে চলা ইসলামের সৌন্দর্য নয়। আমাদের কয়েকজন সেটা নিজেদের চরিত্রে লালন করছেন। তাই আমাদের চিন্তাচেতনা সবসময় সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থাকা দরকার। কোনো অবস্থায় দ্বিমুখী আচরণ করা যাবে না। সত্যকে সত্য, ন্যায়কে ন্যায় এবং অন্যায়কে অন্যায় হিসেবে ঘোষণা দেওয়াই সর্বোত্তম জিহাদ। সারা দেশের জনশক্তিরা সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার কথা বললে অন্তর থেকে দোয়া করে। কিন্তু এ সংগঠনের জনশক্তিকে ঠিক সেভাবে নিজেদের মূল্যায়ন করে নিজেদের মান উন্নত করে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের এ আসনসহ সব আসনে বিজয় দান করবেন, ইনশাআল্লাহ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, এ আসনের জন্য সাবেক এমপি আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী অনেক বেশি পরিচিত। এ আসনের অতীতের সব ত্যাগের চেয়েও আরও বেশি ত্যাগ স্বীকার করে ইতিহাস সৃষ্টি করার জন্য একটি সুন্দর বিজয়ের রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। এবারে আমাদের স্বপ্ন সম্ভাবনার বাংলাদেশ। এবারে আমাদের স্বপ্ন—ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত পরাজয়। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

ইনশাআল্লাহ, বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আমির আনোয়ারুল আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল শাহজাহান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহসান উল্লাহ ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য অধ্যাপক জাফর সাদেক।

এসএম/টিকে   

Share this news on:

সর্বশেষ

img
টাঙ্গাইলে শর্টসার্কিট থেকে আগুন, পুড়ল পাঁচ দোকান Jun 14, 2025
img
রাজামৌলিকে ছাড়াও সুপারস্টারডম—নিজের শর্তে পথ গড়ছেন আল্লু অর্জুন Jun 14, 2025
img
তিন নায়ক নিয়ে লোকেশ ইউনিভার্সে আসছে ‘কাইথি ২’ Jun 14, 2025
img
চ্যাটজিপিটির ব্যবহারে বাড়ছে বৈশ্বিক পানি ও বিদ্যুৎ-এর চাহিদা Jun 14, 2025
img
একই ধরনের ছবির পেছনে ছুটছেন প্রযোজকরা : ডাকোটা জনসন Jun 14, 2025
img
ভিসা জটিলতায় নাকাল বাংলাদেশি পর্যটকেরা Jun 14, 2025
img
নির্বাচন ইস্যুতে আজ প্রতিক্রিয়া জানাবে জামায়াতে ইসলামী Jun 14, 2025
img
ইরানের জনগণকে বিদ্রোহ করার ডাক দিলেন নেতানিয়াহু Jun 14, 2025
img
ফাইনালে সেঞ্চুরি করে ইতিহাস গড়লেন মার্করাম Jun 14, 2025
img
১০ মাসের লুকোচুরি শেষে লন্ডনে ধরা দিলেন রেজাউল করিম Jun 14, 2025
img
সন্ধ্যার মধ্যে দেশের ৭ অঞ্চলে বজ্রসহ ঝড়ের আভাস Jun 14, 2025
img
‘টগর’-এর ভরাডুবি নিয়ে যা বললেন নায়ক আদর আজাদ Jun 14, 2025
img
সুভাষের সাথে হাতাহাতি! পুরনো কাণ্ড নিয়ে মুখ খুললেন সালমান Jun 14, 2025
img
যমুনা সেতুতে ২৪ ঘণ্টায় টোল আদায় ৩ কোটি ৪৩ লাখ Jun 14, 2025
img
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দেশের গণতন্ত্রের জন্য সুসংবাদ: মির্জা ফখরুল Jun 14, 2025
img
চলমান সংঘাতের মাঝেই মোদিকে ফোন নেতানিয়াহুর Jun 14, 2025
img
চুরি জায়েজ করতে নতুন তত্ত্ব দাঁড় করানো হচ্ছে : আব্দুন নূর তুষার Jun 14, 2025
img
ঈদের ছুটি শেষে ভোগান্তি পেরিয়ে ঢাকায় ফিরছে মানুষ Jun 14, 2025
img
পেজেশকিয়ান-নেতানিয়াহুকে ফোন পুতিনের, দিলেন মধ্যস্থতার প্রস্তাব Jun 14, 2025
img
চাকরির লোভে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে : মানব পাচার চক্রের মূলহোতা গ্রেফতার Jun 14, 2025