বুধবার বিকেল থেকেই বাজার-সদাই ট্রলারে তুলছিলেন আলাউদ্দিন মিস্ত্রি। পিরোজপুর জেলার পাড়েরহাট বন্দর এলাকার এই জেলের মনে আজ অনেক আনন্দ। সন্ধ্যায় বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশে ট্রলারের ইঞ্জিন চালু করবেন।
আলাউদ্দিন বলেন, এইবার আশা করছি খালি হাতে ফিরমু না। ঝড়-বন্যার আভাস নাই। মোটামুটি সাতদিন সাগরে থাকার বাজার করেছি। মাছ ধরা পড়লে ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে পারবো।
আলাউদ্দিনের সংসার প্রায় দুইমাস অনেকটা অভাব অনটনে কেটেছে। কষ্ট করে সংসার চালালেও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সাগরে যাননি।
দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্রগামী লক্ষাধিক জেলের মনেও আলাউদ্দিন মিস্ত্রির মত আনন্দ। সাগরে মাছ ধরার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে ১১ জুন মধ্যরাতে। ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের জেলেরা ট্রলার নিয়ে সাগর অভিমুখে যাত্রা করেছে।
মৎস অধিদপ্তর বলছে, উপযুক্ত সময়ে প্রজনন হওয়ায় এবার কাঙ্ক্ষিত মাছ জেলেরা পাবেন। এতে করে ইলিশসহ অন্যান্য মাছের দাম কমে আসবে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য ২০১৫ সাল থেকে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় বিভিন্ন মেয়াদে মৎস আহরণে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে সরকার। এতে করে দেশে মৎস সম্পদে যেমন সমৃদ্ধ হচ্ছে তেমনি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আসছে। ২০২৩ সালের ২০ পর্যন্ত সমুদ্র সীমায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছিল সরকার।
পরে দেশের মৎস্য গবেষক, জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিন্যাসের দাবি করলে চলতি বছর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে ৫৮ দিনে নিয়ে আসে। এই দফায় ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত সমুদ্রে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা ছিল।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস অফিস জানিয়েছে, বিভাগের ছয় জেলায় নিবন্ধিত ৪ লাখ ২১ হাজার ৯৩ জন জেলের মধ্যে এক লাখ ৪৬ হাজার ২৯ জন সমুদ্রগামী জেলে। এসব জেলেরা সাধারণত সাত হাজার ৪০৫টি মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে সমুদ্রে যান।
মঠবাড়িয়া উপজেলার খেতাছিড়া গ্রামের জেলে আজহারুল ইসলাম বলেন, এক ট্রিপ মাছ ধরতে সাগরে যেতে ৪/৫ লাখ টাকার খরচ হয়। বাজারে সবকিছুর দাম বেশি থাকায় খরচ বেড়েছে। আমরা নিবন্ধিত জেলে হয়েও কোনও আমলে সরকারি সব সহায়তা পাই না। এবার এক ট্রিপ চাল পেয়েছি। বাকি চাল আর পাবো কিনা জানি না।
তিনি বলেন, সরকার আরেকটু সচেতন হলে আমাদের কষ্টে থাকতে হতো না।
এ বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় মৎস অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলফাজ উদ্দিন শেখ বলেন, ৫৮ দিনের নিষিদ্ধকালীন সময়ের মধ্যে ৪২ দিনের সরকারি সহায়তার বরাদ্দ বিতরণ করা হয়েছে। বাকি সহায়তা আরেক ধাপে দেওয়া হবে। আমরা বরাদ্দের সকল চাল এখনো পাইনি। আসামাত্র জেলেরা পেয়ে যাবেন।
তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞে উঠে যাওয়ায় বাজারে মাছের আমদানি বাড়বে বলে আশা করছি। এতে করে ইলিশসহ সকল মাছের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে।
পিএ/টিএ