ভারতীয় সিনেমা যতই প্রযুক্তি, বাজেট ও তারকাখ্যাতির দিক থেকে বিস্তৃত হচ্ছে, ততই একটি প্রশ্ন ক্রমাগত জোরালো হচ্ছে— এত প্রতিশ্রুতিশীল শুরু সত্ত্বেও কেন একের পর এক বড় সিনেমা শেষ পর্যন্ত হতাশ করছে? বাজেট আছে, তারকারা আছেন, চিত্রনাট্যের ধারণাও আলাদা— তবুও সিনেমাগুলোর মূল সমস্যা যেন একটি জায়গাতেই আটকে আছে: 'টোনাল ব্যালান্স'।
জেইলার: আবেগ থেকে অতিরিক্ত ফাজলামি
রজনীকান্ত অভিনীত ‘জেইলার’ সিনেমাটি প্রথমার্ধে দর্শকদের হৃদয় জয় করে ফেলে। ‘কাভালা’ গানে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া এবং থালাইভার ক্যারিশমা— সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল দক্ষিণের একটি মহাকাব্যিক থ্রিলার আসতে চলেছে।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে হঠাৎ করেই আবির্ভাব ঘটে ব্লাস্ট মোহনের (সুনীল) এবং রেডিন কিংসলির অপ্রয়োজনীয় কমেডির। কাহিনির ধারাবাহিকতা ছিন্ন করে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ সংলাপ ও বেখাপ্পা মেজাজ সিনেমাটিকে নামিয়ে আনে এক প্রকার সস্তা সিটকম পর্যায়ে।
আগামীতে ‘জেইলার ২’ যদি সত্যিই আসে, তবে নির্মাতাদের আরও সংযত, প্রসঙ্গসাপেক্ষ হিউমার আর স্থিতিশীল আবেগের জায়গা খুঁজতে হবে।
কাল্কি ২৮৯৮ এডি: ভাঙা ছন্দে বিচ গানের হানা
প্রভাস, অমিতাভ বচ্চন ও দীপিকা পাড়ুকোনকে নিয়ে তৈরি ‘কাল্কি’ সিনেমা শুরু করে এক পরিশীলিত, ডিসটোপিয়ান পৌরাণিক মহাবিশ্বের ছবি। অমিতাভের চরিত্র ‘অশ্বত্থামা’ দর্শকদের মধ্যে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে।
কিন্তু সেই গাঢ় আবহকে ছিন্ন করে হঠাৎই প্রবেশ করে রক্সি চরিত্র (দিশা পাটানি), বিচ পোশাক, বিচ গান আর দিলজিত দোসাঞ্জের বিটে ডান্স— যেন সিনেমার হৃদয় খুঁজেই পাওয়া যায় না।
‘কাল্কি ২’-এর নির্মাতা নাগ অশ্বিনকে পরবর্তী কিস্তিতে অবশ্যই ঘরানাগত শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।
অ্যানিমেল: ব্যথা থেকে বিচ্ছিন্ন প্রেম
রণবীর কাপুর অভিনীত ‘অ্যানিমেল’ সিনেমাটি পিতৃতন্ত্র ও এক গভীর বিষণ্ণতার গল্প দিয়ে শুরু করে। কিন্তু হঠাৎ করেই গল্প মোড় নেয় এক দীর্ঘ রোমান্স ও সিডাকশন ট্র্যাকে, যেখানে জয়া চরিত্রের সঙ্গে প্রেম পরিণত হয় রোলস রয়েস উপহারে। এমন প্রেক্ষাপটের বাস্তবতা ও আবেগহীনতা দর্শকদের হতবাক করে।
সন্ধীপ রেড্ডি ভাঙ্গা পরিচালিত পরবর্তী সিনেমা ‘স্পিরিট’-এ নির্মাতার আবেগপ্রবণ গল্প বলা থাকতেই পারে, তবে সেই আবেগ যেন আত্মমুগ্ধতা বা অতিরিক্ততার ফাঁদে না পড়ে।
নির্মাতারাই কি নিজেদের সিনেমা ডুবাচ্ছেন?
বর্তমান দর্শক অনেক বেশি পরিণত, তাদের আবেগ-রসবোধ, ভাবনার গভীরতা অনেক। সেখানে সিনেমার গল্প হঠাৎ করেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে গেলে দর্শক সেটিকে বিশ্বাসযোগ্যতা থেকে ছিন্ন করে দেন।
‘জেইলার ২’, ‘কাল্কি ২’ ও ‘স্পিরিট’ — এই তিনটি ছবিই এখন এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে পরিচালক যদি আত্মনিয়ন্ত্রণ আর গল্পের প্রতি নিষ্ঠা দেখাতে পারেন, তাহলে হয়তো সিনেমাগুলো নিজেদের পায়ে কুড়ুল না মেরে, বলিউড ও দক্ষিণী সিনেমার ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করতে পারবে।
এফপি/ টিএ