২০২৫ সালে মুক্তি পেলে ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ ছবিটি চলতো না বলে মন্তব্য করেছেন অনুপম খের। সিনেমায় ভালোবাসার গল্পগুলোর উপস্থাপন সময়ের সঙ্গে কীভাবে বদলেছে, এমনটা বলতে গিয়ে সম্প্রতি ইন্ডিয়া টুডে-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কথা বলেন বলিউডের এই প্রবীণ অভিনেতা।
তিনি স্পষ্টভাবে জানালেন, যদি আজকের দিনে, অর্থাৎ ২০২৫ সালে, ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ প্রথমবার মুক্তি পেত, তাহলে সেটি চলতো না।
এরপর অনুপম খের বলেন, ‘আমাদের চারপাশে যা কিছু ঘটে, তারই প্রতিফলন দেখা যায় সিনেমায়—হোক সেটা গানে, ভাষায় বা ভালোবাসা প্রকাশের উপায়ে।
আগে রোমান্সে একটা আবেদন, এক ধরনের দীর্ঘশ্বাস ছিল।’
পুরনো দিনের সিনেমার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘তখন ভালোবাসার কথা সরাসরি বলা হতো না। প্রেমে পড়তেও সময় লাগত। কারও সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে যাওয়ার আগেও ধাপে ধাপে প্রেম, তারপর বিয়ে, তারপর যৌনতা—এই রকম ছিল।
আর এখন? আজ প্রেম, কাল সেক্স। এতে ভুল কিছু নেই, আমি কাউকে বিচার করছি না। কিন্তু এখন এভাবেই দেখানো হয়।’
রোমান্টিক সিনেমার প্রতি তার টান উল্লেখ করে অনুপম বলেন, ‘আমি এমন এক প্রেমের গল্প দেখতে চাই, যেখানে একটা আবেদন থাকবে।
সেই কারণেই হাম দিল দে চুকে সানাম আমার কাছে এত সুন্দর একটা রোমান্টিক ছবি। সঞ্জয় লীলা বানসালী সেই অনুভূতিটা দারুণভাবে তুলে ধরেছিলেন।’
এরপর সেই সাক্ষাৎকারে তিনি খানিকটা দার্শনিক ভঙ্গিতে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন, ‘কিন্তু এখন একটা গলাব্যথার মতো অস্থিরতা—রোমান্টিক সিনেমার সেই সৌন্দর্য কোথায়? বলুন তো, শেষ কবে একটা সত্যিকারের রোমান্টিক সিনেমা দেখেছেন? ঠিক তাই। নেই।’
আগের যুগে প্রেমের গল্প বলা কেন সহজ ছিল, এমন প্রশ্নের উত্তরে খের বলেন, ‘সমাজ বদলে গেছে। আর সিনেমা সমাজেরই প্রতিফলন।
এখন আপনি যদি একটা পুরনো ধাঁচের প্রেমের গল্প বানান, খুব অল্প সংখ্যক মানুষই সেটা দেখতে যাবেন।’
এরপর অভিনেতাকে প্রশ্ন করা হয়, ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ যদি ২০২৫ সালে প্রথম মুক্তি পেত, তাহলে কি সেটা চলতো?
অনুপম খের সোজাসুজি উত্তর দেন, ‘না, আমি মনে করি না সেটা চলতো। এখন এটা চলে, কারণ এতে একটা নস্টালজিক ভ্যালু আছে। কিন্তু এখন প্রথমবার বানানো হলে, সেই প্রভাব থাকতো না। যেমন- Gone with the Wind —আজকে বানালে সেটা আগের মতো হৃদয়ে পৌঁছাতো না। সময় বদলেছে, জীবন বদলেছে। তখন, ’৯০-এর দশকে, জোড়া জোড়া পালিয়ে বিয়ে করত। কিন্তু দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে-তে প্রথমবার একজন নায়ক বলল, ‘তোমার বাবাকে রাজি করিয়ে তবে বিয়ে করব।’ এটা ছিল নতুন এক ধারণা। বাবাও ছেলেকে বলছে, ‘তুই লন্ডনে ফেল করেছিস? ভালো কথা। আমরাও তো সবাই ইন্ডিয়ায় ফেল করেছিলাম।’ এসব চরিত্র ছিল মাটির কাছাকাছি। এখন তো সব কিছু বদলে গেছে।’
তবু খের বিশ্বাস করেন, ‘ভালোবাসা একটা আবেগ হিসেবে টিকে আছে—শুধু একে প্রকাশ করার পদ্ধতিটা প্রজন্মে প্রজন্মে বদলে যাচ্ছে। মূল সত্তা এক থাকলেও, ভালোবাসা বোঝা, দেখানো ও বলা—সবই সময়ের সাথে বদলায়।’
এসএম/টিকে