ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় রাতভর হামলার পর রোববার (২২ জুন) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ নামের এই অভিযান সফল হয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলো ‘‘সম্পূর্ণরূপে এবং চূড়ান্তভাবে ধ্বংস’’ করা হয়েছে। তবে তার এই প্রাথমিক সফলতার দাবির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সতর্কতামূলক মূল্যায়নের কোনও মিল পাওয়া যায় না।
প্রাথমিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ধারণা, ফোরদোর অত্যন্ত সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনাটি রোববারের মার্কিন হামলায় গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি। এই হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্তত দু’জন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, মনে হচ্ছে ইরান হামলার আগেই ওই স্থান থেকে ইউরেনিয়ামসহ কিছু যন্ত্রপাতি সরিয়ে নিয়েছে।
মার্কিন এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাও প্রায় একই ধরনের স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মার্কিন হামলায় ফোরদোর অত্যন্ত সুরক্ষিত স্থাপনাটি ধ্বংস হয়নি। তবে স্থাপনাটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অচল হয়ে পড়েছে। মার্কিন এই কর্মকর্তা বলেন, এই স্থাপনাটি ১২টি বাঙ্কার-বাস্টার বোমাও পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারবে না।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এই হামলার ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত মূল্যায়ন এখনও করছে। এই বিষয়ে তারা এখনও চূড়ান্ত কোনও তথ্য জানায়নি। গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট বিষয় হওয়ায় উভয় দেশের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
রাতভর এই হামলায় ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু বানায় যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ফোরদো। ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম এই স্থাপনায় ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের বাঙ্কার বাস্টার বোমা ফেলা হয়।
রোববার সকালের দিকে সংবাদ সম্মেলনে পেন্টাগনের শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাফল্যের দাবির সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন। তবে তারা বলেছেন, চূড়ান্ত মূল্যায়নে আরও সময় লাগবে। দেশটির জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন বলেছেন, প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে, তিনটি স্থাপনাতেই ‘‘গুরুতর ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংস’’ হয়েছে। তবে ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে কি না, তা এখনেই বলা সম্ভব নয়।
আর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তারা পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করছেন। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরায়েলি স্যাটেলাইট ছবি, অতিরিক্ত আকাশপথে তোলা ছবি ও গোয়েন্দা নজরদারির ওপর ভিত্তি করে তারা প্রাথমিক মূল্যায়ন তৈরি করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার কিছুক্ষণ পর স্যাটেলাইটে ধারণ করা নতুন ছবিতে দেখা যায়, বোমার আঘাতে ফোরদোর স্থাপনাটিতে সৃষ্ট গর্ত ও ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন রয়েছে। প্ল্যানেট ল্যাবের তোলা এসব ছবিতে সেখানকার মাটির রঙ ও গঠন পরিবর্তনের লক্ষণ এবং হামলার জায়গাগুলোর কাছে ধুলো ও ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়।
ইসরায়েলি বিশ্লেষকেরা মার্কিন হামলার কয়েকদিন আগের স্যাটেলাইট ছবিও পর্যালোচনা করছেন। তাদের ধারণা, এসব ছবিতে ইরানকে ওই স্থাপনা থেকে ইউরেনিয়াম ও যন্ত্রপাতি সরিয়ে নিতে দেখা যায়।
ম্যাক্সার টেকনোলজিসের প্রকাশিত স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যায়, ফোরদোর স্থাপনার একটি প্রবেশপথের পাশে ১৬টি পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে। লন্ডনের ওপেন সোর্স সেন্টারের বিশ্লেষণে ইরান ওই স্থাপনায় মার্কিন হামলার বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। তবে সেখান থেকে ঠিক কী কী সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল কিংবা আদৌ কিছু সরানো হয়েছিল কি না, এখন পর্যন্ত তা পরিষ্কার নয়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে পেন্টাগনে দায়িত্ব পালন করা ও সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা মিক মালরয় বলেন, ‘‘এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে চালানো হামলা ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিকে দুই থেকে পাঁচ বছর পিছিয়ে দিতে পারে। সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন আগামী কয়েকদিনের মধ্যে করা হবে। তখন হয়তো আরও নির্ভুলভাবে বলা যাবে।’’
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস।
আরএম/টিকে