মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা বিশ্ববাজারে বড়সড় প্রতিক্রিয়া ফেলেছে। সংঘাত থেকে সম্ভাব্য সরে আসার ফলে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে স্বর্ণ ও তেলের দামে। মঙ্গলবার (২৪ জুন) মূল্যবান ধাতু স্বর্ণের দাম দুই সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার গ্রিনিচ মান সময় ০২:৫৭-এ স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম কমে প্রতি আউন্স ৩,৩৫১.৪৭ মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়, যা ১১ জুনের পর থেকে সর্বনিম্ন। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোল্ড ফিউচার মার্কেটে স্বর্ণের দাম ০.৯% কমে প্রতি আউন্স ৩,৩৬৫.৩০ ডলারে নেমে আসে। বিশ্ববাজারে এই পতনের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রশমনের সম্ভাবনার কারণে স্বর্ণের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ হ্রাস পেয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে অনেকেই নিরাপদ সম্পদ হিসেবে স্বর্ণে বিনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প যখন ঘোষণা দিলেন যে ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে, তখনই সেই মনোভাব বদলে যায়। টেস্টিলাইভের গ্লোবাল ম্যাক্রো বিশ্লেষক ইলিয়া স্পিভাক বলেন, “আমেরিকা ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা হ্রাসের লক্ষণ দেখা দেওয়ার পরই স্বর্ণের দাম কমলো।”
উল্লেখ্য, ১৩ জুন ইসরায়েল আকস্মিকভাবে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। তার জবাবে ইরানও একাধিক পাল্টা হামলা করে। তেহরান কাতার, ইরাক ও সিরিয়ার মার্কিন ঘাঁটিতে মিসাইল নিক্ষেপ করে। এই টানাপোড়েনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালায়, যা যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। সবমিলিয়ে, ১২ দিনের সংঘর্ষের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সোমবার এক ঘোষণায় জানান যে ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
তবে, এই যুদ্ধবিরতির বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি ইসরায়েল। ইরানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি ইঙ্গিত করলেও, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, ইসরায়েল তার আগ্রাসন বন্ধ না করা পর্যন্ত কোনো যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে না। এই অনিশ্চয়তার মধ্যেও ট্রাম্পের ঘোষণাই বাজারে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
স্বর্ণের মতোই যুদ্ধবিরতির আশায় তেলের দামেও উল্লেখযোগ্য হ্রাস লক্ষ্য করা গেছে। মঙ্গলবার এক সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন দামে বিক্রি হয়েছে অপরিশোধিত তেল। এ থেকে বোঝা যায়, বাজারে আতঙ্ক অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে এবং বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষাকৃত ঝুঁকিপূর্ণ খাতগুলোতে ফিরে যাচ্ছেন।
তথ্যসূত্র : রয়টার্স
আরএম/এসএন