আদানির বকেয়া ৩৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করল বাংলাদেশ

ভারতের আদানি পাওয়ার লিমিটেডকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ৩৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বকেয়া পরিশোধ করেছে। গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের বিপরীতে এই বকেয়া তৈরি হয়েছিল ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত।

মঙ্গলবার বিদ্যুৎ বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করে জানায়, বিদ্যুৎ বিল আদায়ের পুনরুদ্ধার ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভর্তুকির সমন্বয়ের মাধ্যমে এই পরিশোধ সম্পন্ন হয়েছে।

পাওয়ার ডিভিশনের সচিব ফারজানা মমতাজ বলেন, আদানিকে বকেয়া অর্থ মিটিয়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে কেন্দ্রটির উৎপাদন চালু রাখতে আর কোনো ঝুঁকি নেই। তবে তিনি জানান, কয়লার মূল্য নির্ধারণ নিয়ে এখনো কিছু মতবিরোধ রয়ে গেছে।

অপরদিকে, আদানি পাওয়ার লিমিটেড জানিয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থ পরিশোধ করায় প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার সারচার্জ মওকুফ করেছে। তাদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, এই অর্থ ৩০ জুনের মধ্যে পরিশোধ করা না হলে অতিরিক্ত চার্জ আরোপ হতো।

এর আগে ১৭ জুন আদানির দুই প্রতিষ্ঠান- আদানি এনার্জি সল্যুশনস লিমিটেড (এইএসএল) ও আদানি পাওয়ার লিমিটেড (এপিএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনিল সারদানা বাংলাদেশ সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে বকেয়া দ্রুত পরিশোধের অনুরোধ করেন। চিঠিতে তিনি সতর্ক করেন, অর্থ না দিলে গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে, যা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় সংকট ডেকে আনবে।

বর্তমানে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের তীব্র চাপের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে সরকার রেকর্ড ৩.৭৮ বিলিয়ন ডলার সুদ ও আসল পরিশোধ করেছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

বিদ্যুৎ খাতের একাধিক মেগা প্রকল্পের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বড় অঙ্কের অর্থ পরিশোধ এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর চাপ পড়ছে রাজস্ব খাতে, পাশাপাশি ব্যয়বহুল আমদানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের সমন্বয়েও জটিলতা তৈরি হচ্ছে।

বিদ্যুৎ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদানিকে বকেয়া পরিশোধ আপাতদৃষ্টিতে একটি স্বস্তির খবর হলেও এটি মৌলিক কোনো সমাধান নয়।

ব্যয়বহুল দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ও আমদানিনির্ভরতা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও বড় চাপে ফেলতে পারে, বিশেষ করে যখন বিশ্ববাজারে কয়লার দাম ও ডলার সংকট একযোগে বাড়ছে।

এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকার থাকায় আন্তর্জাতিক বিদ্যুৎ-সম্পর্কিত চুক্তিগুলো নিয়ে নতুন করে আলোচনা কিংবা সমঝোতার সুযোগও সীমিত। ফলে সাময়িক স্থিতি ফিরলেও সংকটের মূলে কোনো পরিবর্তন আসছে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আরএম 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
উপদেষ্টাদের নামে প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার, কই আমরা তো মামলা করিনি: আসিফ নজরুল Jun 26, 2025
img
ফেসবুক গ্রুপে হঠাৎ নিষেধাজ্ঞা, ব্যবহারকারীদের ক্ষোভ Jun 26, 2025
img
মেহেরপুর সীমান্তে আরও ৮ জনকে পুশ-ইন করল বিএসএফ Jun 26, 2025
img
পাকিস্তানে ইমরান খানকে সরাতে ‘মাইনাস ওয়ান’ ফর্মুলা সক্রিয়: পিটিআই Jun 26, 2025
img
ভিসাপ্রত্যাশীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জরুরি নির্দেশনা Jun 26, 2025
img
ভিডিও কলে কথা বলতে চাপ দিতেন সারোয়ার তুষার, আরো যত অভিযোগ নিলার Jun 26, 2025
img
জাতিসংঘের পানি কনভেনশনে যোগ দিলো বাংলাদেশ Jun 26, 2025
img
পদ্মা সেতু চালুর তিন বছর পূর্তি আজ, টোল আদায় ২৫৭৯ কোটি টাকা Jun 26, 2025
img
পাঁচ বছর পরও আলোচনায় ‘বুলবুল’ Jun 26, 2025
img
অমিতাভের কণ্ঠ আর শোনা যাবে না ফোনে, সিদ্ধান্ত সরকারের Jun 26, 2025
হারের পর দলকে যে উপদেশ দিলেন সুনীল গাভাস্কর Jun 26, 2025
করিশ্মার জন্মদিনে করিনার আবেগঘন পোস্ট Jun 26, 2025
জেলেনস্কিকে অপমানের পর এবার ‘ভালো মানুষ’ বললেন ট্রাম্প Jun 26, 2025
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করল ইরান Jun 26, 2025
img
১২ দিনের যুদ্ধে অস্ত্র সংকটে ইসরায়েল : এনবিসির প্রতিবেদন Jun 26, 2025
img
বাস্তব ঘটনার রূপান্তর ‘উদয়পুর ফাইলস', মুক্তি পেল ট্রেলার Jun 26, 2025
img
সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়ালকে আদালতে তোলা হবে আজ Jun 26, 2025
img
হাওরে ঘুরতে গিয়ে মাদকসেবন, পাঁচ পর্যটকের কারাদণ্ড Jun 26, 2025
img
থাম্মুদু সিনেমার আগে ‘জয় বগলামুখী’ গানেই বাজল সফলতার ঘণ্টা Jun 26, 2025
img
রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ সাবেক তিন সিইসির বিরুদ্ধে Jun 26, 2025