ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে মঙ্গলবার ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে মঙ্গলবার ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এরপর উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাই যুদ্ধবিরতি নিয়ে অনিশ্চয়তাও আছে। এ অবস্থায় যুদ্ধপরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায় তা নিয়ে সতর্ক পর্যবেক্ষণ করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এর প্রভাব হিসেবে গতকাল আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম সামান্য বেড়েছে। তবে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সরবরাহ ব্যাহত না হওয়া এবং ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকার সম্ভাবনায় দাম এখনো কয়েক সপ্তাহের নিম্নমুখী পর্যায়ে রয়েছে। খবর রয়টার্স।
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম গতকাল ব্যারেলপ্রতি ৪৬ সেন্ট বা দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭ ডলার ৬০ সেন্টে। এ সময় মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ব্যারেলপ্রতি ৪৩ সেন্ট বা দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে পৌঁছায় ৬৪ ডলার ৮০ সেন্টে। আগের দিন মঙ্গলবার ব্রেন্টের দাম ১০ জুনের পর সর্বনিম্ন ও ডব্লিউটিআইয়ের দাম ৫ জুনের পর সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছায়। তবে যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা চালানোর পর জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ মাসে সর্বোচ্চে ।
১৩ জুন ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ইসরায়েল হামলা চালানোর পর দুই দেশের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হয়। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়। এতে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয় এবং জ্বালানি তেলের দাম তাৎক্ষণিকভাবে বেড়ে যায়। তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর মঙ্গলবার দাম প্রায় ৬ শতাংশ কমে যায়। বাজারে তাৎক্ষণিক সরবরাহ ঝুঁকি কমে গেলেও বিনিয়োগকারীরা এখনো পরিস্থিতি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেপি মরগ্যানের বিশ্লেষকরা বলেছেন, ‘ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতির ফলে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে স্থিতি ফিরছে। আমাদের ধারণা, বর্তমানে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সরবরাহ যথেষ্ট রয়েছে।’
তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ভবিষ্যতে আবারো উত্তেজনা বাড়তে পারে, বিশেষত হরমুজ প্রণালি ঘিরে। কারণ বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল এ পথেই পরিবাহিত হয়। যদিও এখন পর্যন্ত ইরান প্রণালিটি বন্ধ করেনি, যা কিছুটা স্বস্তির বিষয়।
এদিকে ট্রাম্প বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির পর ইরান থেকে জ্বালানি তেল কিনতে পারবে চীন।’ তবে হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, এতে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল হয়েছে, এমন কিছু বোঝাচ্ছে না। এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করেনি বলেই ট্রাম্প এমন মন্তব্য করেছেন।
চলতি বছরে চীনের মোট জ্বালানি তেল আমদানির প্রায় ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ এসেছে ইরান থেকে। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে মাত্র ২ শতাংশ। চীনে যুক্তরাষ্ট্র তেকে জ্বালানি তেল আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা রয়েছে।
ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘চীন এখন ইরান থেকে জ্বালানি তেল কিনতে পারবে। আশা করি, তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকেও পর্যাপ্ত জ্বালানি তেল কিনবে।’ এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তেল মজুদের পরিসংখ্যানের দিকেও নজর রাখছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউটের (এপিআই) তথ্যানুযায়ী, ২০ জুন শেষ হওয়া সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের মজুদ ৪২ লাখ ব্যারেল কমেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে বড় কোনো অস্থিরতা না হলে জ্বালানি তেলের সরবরাহ ও চাহিদা প্রায় সমান থাকবে। তাই বাজারে জ্বালানি পণ্যটির মূল্যহ্রাস অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরআর/এসএন