তামিল সিনেমার ইতিহাসে ‘নায়কন’ ছবিটি আজও এক অমর সৃষ্টি। সেই ছবির পরিচালক মণি রত্নম ও অভিনেতা কমল হাসান যখন দীর্ঘ ৩৮ বছর পর আবার একত্রিত হলেন ‘ঠগ লাইফ’ ছবির মাধ্যমে, তখন দর্শকের প্রত্যাশা ছিল তুঙ্গে। সবাই ভেবেছিল, হয়তো আবারও সেই আবেগ, সেই অসাধারণ গল্প বলার জাদু ফিরে আসবে রুপালি পর্দায়।
কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন ছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ‘ঠগ লাইফ’ ছবিটি বক্স অফিসে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। মুক্তির প্রথম দুদিনে ভারতীয় বাজারে ছবিটি আয় করে ২০ কোটি টাকা, কিন্তু মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় দৈনিক আয় নেমে আসে ১.১ কোটিতে। সবমিলিয়ে বিশ্বজুড়ে আয় দাঁড়ায় প্রায় ৯৭ কোটি টাকায়, যা এই কাস্টিং ও প্রোডাকশনের তুলনায় অত্যন্ত কম বলে ধরা হয়।
এই ব্যর্থতা নিয়ে মুখ খুলেছেন মণি রত্নম নিজেই। এক আন্তরিক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “যাঁরা ‘নায়কন’-এর মতো কিছু আশা করেছিলেন, তাঁদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমরা পুরনো কিছু ফিরিয়ে আনতে চাইনি। বরং নতুন কিছু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দর্শক ভিন্ন কিছু আশা করছিলেন।”
তাঁর এই বক্তব্য ছুঁয়ে গেছে সেইসব দর্শকদের, যাঁরা নস্টালজিয়ায় ভাসতে ভাসতেই প্রেক্ষাগৃহে গিয়েছিলেন ‘ঠগ লাইফ’ দেখতে। ছবির তারকাবহুল কাস্টে ছিলেন সিলামবারাসন, তৃষা, জোজু জর্জ, ঐশ্বর্যা লেক্ষ্মী, অশোক সেলভান, নাসার ও অভিরামি। পেছনে ছিল বিশাল টেকনিক্যাল দল—সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন রবি কে. চন্দ্রন, সঙ্গীত দিয়েছেন এ আর রহমান, সম্পাদনায় ছিলেন শ্রীকর প্রসাদ ও অ্যাকশন পরিচালনা করেছেন অ্যানবারিভ।
সবকিছু সত্ত্বেও ছবিটি দর্শকের হৃদয় ছুঁতে পারেনি। যদিও এতে ভেঙে পড়েননি মণি রত্নম। বরং আবার ঘুরে দাঁড়াতে চান তিনি। শোনা যাচ্ছে, এবার তিনি রোমান্টিক একটি ড্রামা বানাতে চলেছেন, যেখানে কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকবেন সিলামবারাসন। এটিই হবে এই অভিনেতার সঙ্গে মণি রত্নমের প্রথম একক কাজ।
এই নতুন প্রজেক্টকে অনেকেই বলছেন পরিচালকের ‘সৃষ্টিশীল পুনর্জন্ম’। স্কেলের বদলে এবার আবেগ ও আন্তরিকতাকে সামনে রেখে গল্প বলবেন তিনি।
‘ঠগ লাইফ’ হয়তো সেই প্রত্যাশিত পুনর্মিলনের গল্প দিতে পারেনি, কিন্তু এই ব্যর্থতাকে শক্তিতে রূপ দিতে প্রস্তুত এক কিংবদন্তি। অতীত নয়, বরং ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে নতুন গল্প বুনতে চাচ্ছেন তিনি। সিনেমাপ্রেমীরা অপেক্ষায় আছেন, এই নতুন অধ্যায় কতটা আন্তরিক, তীক্ষ্ণ ও হৃদয়ছোঁয়া হয়।
এফপি/এসএন