লিওনেল মেসির বয়স এখন ৩৮। দুই দশকেরও বেশি সময়ের ফুটবল ক্যারিয়ারে বহু শিরোপা, বহু গল্প, আর অসংখ্য আবেগঘন মুহূর্তের জন্ম দিয়েছেন তিনি। কিন্তু সেই দীর্ঘ ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ‘খারাপ’ অধ্যায় নিঃসন্দেহে তার প্যারিসে (পিএসজি) কাটানো সময়।
বার্সেলোনা ছাড়তে চাচ্ছিলেন না মেসি।
সেটাই ছিল তার ঘর, পরিবার, গড়ে তোলা শহর। কিন্তু ক্লাবের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে বাধ্য হয়েই বিদায় নিতে হয়েছিল তাকে। এরপর কাঁদতে কাঁদতেই বিদায় বলেছিলেন। মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই নাম লেখান পিএসজিতে।
যেন না চেয়েও এক অনাকাঙ্ক্ষিত সম্পর্কের শুরু!
বন্ধু নেইমার আর পরিচিত মুখের উপস্থিতিতে শুরুতে আশা করেছিলেন সহজে মানিয়ে নিতে পারবেন। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। কভিড, প্রি-সিজন না থাকা, প্যারিসের যানজট আর ঠিকমতো বসবাসের ব্যবস্থা না হওয়া—সব মিলিয়ে শুরু থেকেই সব কিছু যেন ব্যস্ত ও বিব্রতকর ছিল। সে সময় মেসি বলেছিলেন, ‘পিএসজিতে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই অখুশি ছিলাম, উপভোগ করতে পারিনি।’
দুই মৌসুমে গোল পেয়েছেন কম, পারফরম্যান্সেও ছিল না বার্সার সেই পুরনো ছায়া। সমর্থকরাও ছিলেন হতাশ। সম্পর্ক ছিল ভঙ্গুর, এমনকি শেষদিকে নিজ দলের সমর্থকদের দুয়োও শুনতে
হয়েছে তাকে। অথচ এই একই মেসি কাতার বিশ্বকাপে ছিলেন দুর্দান্ত, আর্জেন্টিনাকে এনে দিয়েছেন বিশ্বকাপ।
ফলে পিএসজি সমর্থকদের মনে প্রশ্ন—এই মেসি কোথায় ছিলেন আমাদের জার্সিতে?
এদিকে, পিএসজির ভেতরেও চলছিল অস্থিরতা।
তিনজন সুপারস্টার—মেসি, নেইমার ও এমবাপ্পে—তাদের মধ্যে কেউই রক্ষণে কাজ করতে আগ্রহী ছিলেন না, ফলে দল হয়ে পড়ে ভারসাম্যহীন। মেসিকে অনেকেই দেখেছেন কেবল এক মার্কেটিং চুক্তি হিসেবে—যার থেকে খেলোয়াড়ি সাফল্যের চেয়ে অর্থনৈতিক ফায়দাই ছিল বড়।
পিএসজির সঙ্গে শেষ পর্যন্ত মেসি চুক্তি নবায়ন করেননি। পিএসজিও তাকে রাখার ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়েছিল। আলাদা হয়ে যাওয়া তাই ছিল স্বাভাবিক।
তবে শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদ দুই পক্ষের জন্যই আশীর্বাদ হয়। মেসি গেছেন মায়ামিতে, পেয়েছেন তার পছন্দের পরিবেশ আর পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ। আর পিএসজি নিজেদের অর্থনৈতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে এনে তরুণ প্রতিভায় বিনিয়োগ করে অবশেষে বহুল আকাঙ্ক্ষিত চ্যাম্পিয়নস লিগও জিতেছে।
রবিবারের ক্লাব বিশ্বকাপ ম্যাচে মুখোমুখি হবে ইন্টার মায়ামি ও পিএসজি। অনেকে একে ‘বিদ্বেষ, ক্ষোভের ম্যাচ’ বললেও বাস্তবে এটি যেন পুরনো এক সম্পর্কের ভদ্র, শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলন—যেখানে দু’পক্ষই বুঝে গেছে, তারা একে অপরের জন্য ঠিক উপযুক্ত ছিল না।
তাইতো ৩৮তম জন্মদিনে পিএসজির এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে মেসিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ‘সঙ্গে লেখা হয়, ‘রবিবার দেখা হবে।’
সত্যি বলতে, এটি হয়তো ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে ভুল ‘রিবাউন্ড’- অর্থাৎ প্রতিঘাত সম্পর্ক—কিন্তু বিচ্ছেদটি হয়েছে সত্যিই আশীর্বাদস্বরূপ।
পিএ/এসএন