সুকুমার রায়ের আবোল তাবোলের ‘ননসেন্স’ ছড়াগুলো কৌতুকের আড়ালে তখনকার সমাজের ব্যঙ্গোক্তি। সেই আবোল তাবোল-কে জুড়ে সায়ন্তন ঘোষালের ‘ম্যাডাম সেনগুপ্ত: আবোল তাবোল রহস্য’ ছবিটা সমাজের সমালোচনা না হয়ে শুধু ‘ননসেন্স’ই হয়ে গিয়েছে।
গল্পের শুরু হয় কলেজ ক্যাম্পাসে একটি ছাত্রীর মৃত্যু দিয়ে। সেই ছাত্রী, অনন্যা বিখ্যাত কার্টুনিস্ট অনুরেখা সেনগুপ্তের (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত) একমাত্র মেয়ে। মেয়ের খুনের সমাধান করতে তিনি কলকাতা ফেরেন অনেক বছর পরে। তিনি যতই স্বনামধন্য হোন না কেন, এক জন কার্টুনিস্টের যে এয়ারপোর্টে পুলিশ কর্ডন লাগে তা জানা ছিল না। অসৎ পুলিশ অফিসার থেকে খুনি, সবাই তাঁকে ‘ম্যাডাম সেনগুপ্ত’ বলে সম্বোধন করে।
অনুরেখা বা ম্যাডাম সেনগুপ্তকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন তাঁর ছোটবেলার বন্ধু, খবরের কাগজের সম্পাদক রঞ্জন মুখার্জি (রাহুল বোস)। আজকের দিনে মিডিয়া অফিসের টেবিলে কম্পিউটারের জায়গায় একগাদা ফাইল থাকে সেটাও জানা ছিল না। রঞ্জনের ছেলে অনন্যার ক্লাসমেট। অনন্যার পর আরও কয়েকটা খুনের ঘটনা ঘটে আর প্রত্যেকটা খুনের পর কেউ রঞ্জনের অফিসের সিঁড়িতে ‘আবোল তাবোল’-এর একটা কোনও চরিত্রের পুতুল রেখে যায়। কিন্তু রঞ্জন বা ম্যাডাম সেনগুপ্ত এক বারও সে কথা পুলিশকে জানান না। পর পর কলকাতা শহরে এতগুলো খুন হয়, পুলিশ ক্রাইম সিনে যায় ঠিকই। কিন্তু এভিডেন্স তুলে দেন ম্যাডাম সেনগুপ্তের হাতে।
সন্দেহের তির নাট্যকার এবং সুকুমার রায় বিশেষজ্ঞ সাত্যকি সেনের (কৌশিক সেন) দিকে। সাত্যকি অনুরেখার প্রাক্তন স্বামী এবং অনন্যার বাবা। তিনি পলাতক। কিন্তু সত্যি কি তিনি খুনি?
খুনের অনুসন্ধানটা মূলত অনুরেখা আর রঞ্জনই চালান। কলকাতা পুলিশ এতটাই ‘অপদার্থ’ যে, ক্রাইম সিনে গিয়ে তারা কিছু পায় না। কিন্তু ঠিক পরের মুহূর্তেই অনুরেখা আর রঞ্জন সেখান থেকে ভিকটিম বোর্ড খুঁজে বার করেন। রঞ্জন যদি জানতেনই কী ভাবে সাত্যকি পর্যন্ত পৌঁছোনো যায়, সেটা তিনি ছবির দু’ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরে বললেন কেন?
আর ক্লাইম্যাক্স সিনের কথা তো ছেড়েই দিন। এই দুই অনুসন্ধানী জুটি যখন খুনির মুখোমুখি হতে যান, তখন পুলিশকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করেন না। আমাদের দেশের বন্দুকের আইন তো আমেরিকার মতো নয়, তা হলে সবার কাছে বন্দুক থাকে কী করে?
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত আর রাহুল বোসের অভিনয় বেশ কঠিন, ভাবলেশহীন। অনুরেখা বা রঞ্জন, কারও জন্য সহানুভূতি তৈরি হয় না। শুধু সন্তান হারানোর শোকের কথা বললেই তো আর শোকের বিহ্বলতা প্রকাশ পায় না।
ছবিতে বাকি চরিত্রে আছেন খরাজ মুখোপাধ্যায়, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় এবং অনন্যা চট্টোপাধ্যায়। তাঁদের অভিনয় ভালই লাগে। সুব্রত দত্ত বিশেষ ভাবে নজর কাড়েন। তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ অফিসারের চরিত্রে। চরিত্রটা বিশ্বাসযোগ্য না হলেও সুব্রতর অভিনয় বেশ ভাল। ছবিটা চলাকালীন অডিয়েন্স থেকে যে সব মন্তব্য কানে আসে, তার মধ্যে “জানতই যখন তখন এতক্ষণ বলেনি কেন?” আর “পুলিশ কোথায়?” আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে। এঁরা অনেকেই এন্ড ক্রেডিটের আগেই হল থেকে বেরিয়ে গেলেন।
ছবির শুরু হওয়ার সময় সুকুমার রায়ের নাতি পরিচালক সন্দীপ রায়কে কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। কিন্তু কী ভেবে তিনি এই ছবিটার সঙ্গে যুক্ত হলেন, তা বুঝে পেলাম না।