হার দিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় ওয়ানডে জিতে সিরিজে সমতা ফেরায় টাইগাররা। ফলে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচটি ছিল সিরিজ নির্ধারণী। গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে ৯৯ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ।
পাল্লেকেলেতে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৮৫ রান সংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কা। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১২৪ রান করেছেন কুশল মেন্ডিস। জবাবে খেলতে নেমে ৩৯ ওভার ৪ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৮৬ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ।
২৮৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ইনিংসের প্রথম দুই ওভারে ১৫ রান তুললেও সেই ধারা অব্যাহত রাখতে পারেনি টাইগাররা। তৃতীয় ওভারের শেষ বলে ফিরেছেন তানজিদ হাসান তামিম। ১৩ বলে ১৭ রান করা এই ওপেনারকে বোল্ড করেছেন আসিথা ফার্নান্দো। তাতে ১৯ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি।
তিনে নেমে পুরোপুরি ব্যর্থ নাজমুল হোসেন শান্ত। তামিমের দ্রুত বিদায়ে বাড়তি দায়িত্ব ছিল অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের কাঁধে। কিন্তু উল্টো ডাক খেয়ে দলের বিপদ আরো বাড়িয়েছেন শান্ত। দুশমন্থা চামিরার গুড লেংথের বলে বোল্ড হয়েছেন তিনি।
২০ রানে ২ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন ইমন ও তাওহিদ হৃদয়। দুজনের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিল বাংলাদেশ। তবে উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারলেন না ইমন। ১৪তম ওভারে ভেল্লালেগেকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সীমানার কাছে ধরা পড়েন। সাজঘরে ফেরার আগে ৪৪ বলে ২৮ রান করেছেন এই ওপেনার।
ইমন ফেরার পর মেহেদি হাসান মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন হৃদয়। উইকেটে এসে শুরু থেকেই শট খেলা মিরাজ ভালো শুরু করেছিলেন। তার ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে গিয়ার খেলার মোড় ঘুরে যেতে পারতো। তবে হঠাৎ বাজে এক শট খেলে আউট হয়েছেন তিনি। ২৫ বলে ২৮ রান করেছেন অধিনায়ক।
ছয়ে নেমে আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি শামীম হোসেন। দলের জন্য তার উইকেটে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু ব্যর্থ শামীম। হাসারাঙ্গাকে এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিংয়ের শিকার হয়েছেন।
বাকিদের ব্যর্থতার মাঝেও এদিন এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করছিলেন তাওহিদ হৃদয়। ৭৫ বলে স্পর্শ করেন ব্যক্তিগত ফিফটি। তবে মাইলফলক ছোঁয়ার পর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। দুশমন্থা চামিরার দুর্দান্ত এক ইনসুইংয়ে বোল্ড হয়েছেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৭৮ বলে ৫১ রান।
হৃদয়ের বিদায়ে বাংলাদেশ ম্যাচ থেকে অনেকটাই দূরে সরে যায়। আর লোয়ার মিডল অর্ডারে তানজিম সাকিব-তাসকিন আহমেদরা দ্রুত ফিরলে হারের প্রহর গুনতে থাকে বাংলাদেশ! শেষদিকে জাকের আলি একাই লড়াই করার চেষ্টা করেছেন। তবে তার ২৭ রানের ইনিংস কেবলই হারের ব্যবধান কমিয়েছে।
এর আগে নতুন বলে শুরুটা ভালোই করেছিলেন বাংলাদেশের দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও তানজিম হাসান সাকিব। তাদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে লঙ্কানরা। সেই চাপ আরো বাড়িয়েছেন সাকিব। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে দলকে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন এই পেসার। খানিকটা বাড়তি বাউন্স করা বল মাদুস্কার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে জমা পড়ে। এই ওপেনার ১ রান করে ফিরলে ভাঙে ১৩ রানের উদ্বোধনী জুটি।
দ্রুত উইকেট হারালেও তিনে নেমে উড়ন্ত শুরু করেন কুশল মেন্ডিস। আরেক প্রান্তে থাকা পাথুম নিশাঙ্কাও দ্রুতই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। তাতে প্রথম পাওয়ার প্লেতে এক উইকেট হারিয়ে ৫১ রান তুলে শ্রীলঙ্কা।
বড় হতে থাকা দ্বিতীয় উইকেট জুটি ভাঙেন তানভীর ইসলাম। আগের দুই ম্যাচেই দুর্দান্ত বোলিং করা এই বাঁহাতি স্পিনার ১৫তম ওভারে সাজঘরে ফিরিয়েছেন পাথুম নিশাঙ্কাকে। পারভেজ ইমনের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৪৭ বলে ৩৫ রান করেন এই ওপেনার।
ইনিংসের ১৯তম ওভারে প্রথমবার আক্রমণে আসেন মিরাজ। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেটের দেখা পেয়েছেন অধিনায়ক। ইনিংসের ২১তম ওভারের শেষ বলটি অফ স্টাম্পের ওপর গুড লেংথে করেছিলেন মিরাজ। টার্ন করে ভেতরের দিকে যাওয়া বল ব্যাটে খেলতে পারেননি কামিন্দু মেন্ডিস, তার প্যাডে যেয়ে আঘাত হানে। তাতে লেগ বিফোরের আবেদন করলে সাড়া দেন আম্পায়ার। সাজঘরে ফেরার আগে ২০ বলে ১৬ রান করেছেন কামিন্দু।
১০০ রানে তৃতীয় উইকেট হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। এরপর চারিথ আসালঙ্কাকে সঙ্গে নিয়ে বড় জুটি গড়েন কুশল মেন্ডিস। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটারের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে মাঝের ওভারগুলোতে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। অবশেষে সেই জুটি ভেঙেছেন তাসকিন আহমেদ।
উইকেটে এসে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন আসালঙ্কা। দ্রুতই তুলে নেন ব্যক্তিগত ফিফটি। ৮ চারে ৬০ বল খেলে এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি। তবে ফিফটির পর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৪১তম ওভারের তৃতীয় বলটি লো ফুলটস করেছিলেন তাসকিন, সেখানে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে ধরা পড়েন আসালঙ্কা। ৫৮ রান করে অধিনায়ক ফেরায় ভাঙে ১২৪ রানের জুটি।
গত ম্যাচে ফিফটি করে কুশল আজ সেঞ্চুরি পেয়েছেন। মাত্র ৯৫ বলে তিন অঙ্কে পৌঁছান এই টপ অর্ডার ব্যাটার। সেঞ্চুরির পরও দেখে-শুনেই খেলার চেষ্টা করছিলেন। তবে শামীমের দারুণ এক ক্যাচে ফিরতে হয়েছে তাকে। এই অফ স্পিনারকে ফিরতি ক্যাচ দেওয়ার আগে ১১৪ বলে করেছেন ১২৪ রান।
লোয়ার মিডল অর্ডারে জানিথ লিয়ানাগে, দুনিথ ভেল্লালেগে দ্রুত ফিরলে রানের গতি কমে যায়। তবে শেষদিকে ভানিন্দু হাসারাঙ্গা ও দুশমন্থা চামিরা ভালো ব্যাটিং করেছেন। তাতে ২৮০ পেরোয় লঙ্কানদের সংগ্রহ।
এসএন