ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পথে তাদের আকাশসীমা ব্যবহার করতে দেওয়ায় ইতালি, ফ্রান্স ও গ্রিস সরকারের কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিন অধিকৃত অঞ্চল বিষয়ক মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক। বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেসকা আলবানিজের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) ওয়ারেন্ট থাকা সত্ত্বেও এসব দেশ আন্তর্জাতিক আইনি বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করে নেতানিয়াহুকে ‘নিরাপদ পথ’ দিয়েছে।
২০২৩ সালে হেগ-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করার অভিযোগে নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। ইতালি, ফ্রান্স ও গ্রিস — এই তিন দেশই রোম সংবিধির স্বাক্ষরকারী এবং আইসিসি-এর সদস্য দেশ।
তবুও নেতানিয়াহু যখন রবিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে যান, তখন তার ফ্লাইট ওই দেশগুলোর আকাশসীমা অতিক্রম করে।
আলবানিজ এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছেন, ‘ইতালি, ফ্রান্স এবং গ্রিসের নাগরিকদের জানার অধিকার আছে যে, আন্তর্জাতিক আইনি শৃঙ্খলা লঙ্ঘন করে নেওয়া প্রতিটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত তাদের সবাইকে দুর্বল ও ঝুঁকির মুখে ফেলে।’
মানবাধিকার আইনজীবী ক্রেইগ মোখিবার একদিন আগেই এক পোস্টে বলেছিলেন, ‘এই দেশগুলো রোম সংবিধির আওতায় তাদের আইনগত বাধ্যবাধকতা ভেঙেছে। গণহত্যার শিকারদের প্রতি অবজ্ঞা দেখিয়েছে এবং আইনের শাসনের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করেছে।’
আলবানিজ তার পোস্টে মোখিবারের বক্তব্যকে সমর্থন করেন।
আগেও পালিয়ে বেড়িয়েছেন নেতানিয়াহু। এই সফর ছিল না নেতানিয়াহুর প্রথম। গত ফেব্রুয়ারিতে, আইসিসির পরোয়ানা থাকা অবস্থায় তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন।
ওই সময় তার বিমান রুট এমনভাবে ঠিক করা হয়েছিল যাতে কোনো আইসিসি সদস্য দেশের আকাশসীমা ব্যবহার না করতে হয়। এরপর এপ্রিল মাসে, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান নেতানিয়াহুকে আমন্ত্রণ জানান এবং হাঙ্গেরি আইসিসি থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়। সেখান থেকে নেতানিয়াহু আবার যুক্তরাষ্ট্রে যান। তার বিমান আয়ারল্যান্ড, আইসল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের আকাশসীমা এড়িয়ে ৪০০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ অতিক্রম করে, যেনো গ্রেফতার হওয়ার ঝুঁকি না থাকে।
আইসিসির সদস্য রাষ্ট্রগুলো সাধারণত গ্রেফতারি পরোয়ানা বহনকারী কোনো ব্যক্তি তাদের মাটিতে থাকলে তাকে হেফাজতে নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রাখে। তবে এই নিয়ম সবসময় কার্যকর হয় না।
উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ আফ্রিকা ২০১৭ সালে সুদানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বাসির আইসিসির ওয়ারেন্ট থাকা সত্ত্বেও তাকে গ্রেফতার করেনি।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো নেতানিয়াহুর ওয়ারেন্ট নিয়ে বিভক্ত। ফ্রান্স বলেছে, নেতানিয়াহুর আইনি দায়মুক্তি আছে। ইতালি এই ওয়ারেন্টের আইনগত বৈধতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। নেতানিয়াহুর যুক্তরাষ্ট্র সফর এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর আকাশসীমা ব্যবহারের বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার এবং কূটনৈতিক দায়বদ্ধতার প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
সূত্র: আলজাজিরা
আরআর/টিএ