ডাম্বুলায় একেবারে প্রেসবক্সের সামনে পুরস্কার বিতরণীর মঞ্চ। সেখানে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি বলতে একজন- অধিনায়ক লিটন কুমার দাস। আশেপাশে কোথাও শামীম হোসেনকে দেখা গেল না। তারমানে, ম্যাচসেরার পুরস্কারও উঠছে লিটনের হাতে।
যদিও প্রেসবক্সের জনমন জরিতে ম্যাচসেরা শামীম। ব্যাট হাতে ২৭ বলে ৪৮ রানের ঝড় তোলার পর কুশল মেন্ডিসকে সরাসরি থ্রোতে তিনি রান আউট করার পর থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, বাংলাদেশের জয় অবধারিত। সেটি ৮৩ রান না কত ব্যবধানে হবে, সেটিই যা অনির্ধারিত ছিল!
বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের প্রেসের মতগতি আঁচ করতে পারার কথা নয়। তবে ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে দল থেকে উপস্থাপণ করা হলো শামীম হোসেনকে। ওয়ানডেতে সুযোগ পেয়ে সর্বাত্মক চেষ্টার জন্য প্রশংসিত হয়েছিলেন। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে তাঁর ৫ বলে ১৪ রান বাংলাদেশের ইনিংসকে দেড় শ’ পার করিয়েছিলেন। গতকাল তো জয়ের ভিতই গড়ে দিয়েছেন দুর্ধর্ষ ব্যাটিং করে, ২৭ বলে ৪৮ রানের ইনিংসে উইকেটের চারপাশে মেরেছেন। শামীম হোসেন লাজুক মুখে স্বীকারও করলেন,‘হ্যাঁ, এবি ডি ভিলিয়ার্সের ব্যাটিং আমার সবসময় ভাল লাগে।’
তাই বলে নিজেকে এবিডি ভাবছেন না শামীম,‘আমি চেষ্টা করি সবসময় ইতিবাচক থাকার। টি-টোয়েন্টি খেলাটাই হলো, পজিটিভ যত থাকব, আমি মনে করি তত ভাল।’
ব্যাটে ঝড় তুলেছেন, দুর্দান্ত থ্রোতে কুশল মেন্ডিসকে রান আউট করা শামীম গতকাল একটি ক্যাচ নিয়েছেন, গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়েও বরাবরের মত ক্ষিপ্র। পুরস্কার বিতরণীর মঞ্চে দাঁড়িয়ে অধিনায়ক লিটন দাস ম্যাচে শামীমের প্রভাবের কথা বলেছেন, বিশেষ করে কুশল মেন্ডিসকে সরাসরি থ্রোতে করা রান আউটের ঘটনাটি। কিন্তু জনসমাবেশে নিজের কৃতিত্ব নিয়ে আত্মতৃপ্তির বিষয়টি যতটা সম্ভব আড়াল করে গেছেন শামীম,‘এই জয় অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। এখন আমরা সিরিজে সমতায় এসেছি। আর ফিল্ডিংটা (রান আউট) অনেক ইম্পরট্যান্ট ছিল আমাদের জন্য। তবে এতে বেশি খুশি হওয়ার কিছু নাই। এটা আমাদের প্রতিদিনের কাজ।’
নিজের ব্যাটিং পরিকল্পনা সাধারণ একটি ছকে ফেলে দিয়েছেন শামীম,‘আমি যখনই ব্যাটিংয়ে যাই, আমার সবসময় প্ল্যান থাকে আমি যেন পজিটিভ থাকি। কারণ, যে কারোরই ঝুঁকি নিতে হবে। তাই আমি নিজে থেকে দায়িত্ব নিয়ে ঝুঁকিটা নিয়ে ফেলি।’ ব্যাটে নিয়মিত দলে অবদান রাখছেন তিনি। তবে লম্বা ইনিংস খেলার সুযোগ অতটা পান না। ওদিকে আবার মিডল অর্ডার নড়বড়ে। এই অবস্থায় ব্যাটিং অর্ডারে নিজের পদন্নোতির আশা কী করেন শামীম? তাতে খুব একটা আগ্রহী মনে হলো না তাঁকে। দলে অবদান রাখতে যে কোন পজিশনে ব্যাটিংয়ে রাজি শামীম।
অলরাউন্ড নৈপুণ্যে উদ্ভাসিত শামীম হোসেনের আরও ভাল লাগছে অধিনায়ক লিটন দাস বড় ইনিংস খেলায়,‘অবশ্যই ভাল লাগছে। লিটন ভাই অনেক ভাল ব্যাটিং করেছেন। তাঁর ব্যাটিং অবশ্যই ম্যাচের একটা টার্নিং পয়েন্ট। শুরুতে তিনি রান করেছেন বলেই আমাদের শেষটা ভাল হয়েছে। তাছাড়া অধিনায়কের ফর্মে থাকা দলের জন্যও জরুরি বলে মনে করি।’
জয়ের আনন্দের রাতে কিছু মন্দও খড়কুটোর মত ভেসে আছে। এই যেমন, মিডল অর্ডারে মেহেদী হাসান মিরাজ রান পাচ্ছেন না। লিটনের সঙ্গে তাওহিদ হৃদয়ের ধীরলয়ের ব্যাটিং দুর্ভাবনায় ফেলে দিয়েছিল কিনা দলকে? জিতে উঠে আসা শামীমের কাছে এসব কোন সমস্যাই না,‘আসলে মাঝেমধ্যে একটু আদটু খেলতে হয়। তখন একটা ভাল পার্টনারশিপ দরকার ছিল। কারণ আমাদের পরে ভাল ব্যাটসম্যান আছে। তাই জানতাম রানের গতির ঘাটতিটা আমরা পরে পুষিয়ে নিতে পারব। তাই লিটন ভাই ও হৃদয়ের জুটিটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’ পরবর্তী লক্ষ্যের কথা জানিয়ে গেছেন তিনি,‘আমরা ওয়ানডে সিরিজটা হেরে গেছি। এখানে টি-টোয়েন্টিতে ১-১ করলাম। তাই এই সিরিজ জয়ের সুযোগটা নিতে চাই।’
আরআর