জীবন্ত প্রাণীর শরীরে বাসা বেঁধে ধীরে ধীরে মাংস খেয়ে নেয় এক ভয়ংকর পোকা-নিউ ওয়ার্ল্ড স্ক্রিউওয়ার্ম। যুক্তরাষ্ট্রে এই মাংসাশী পোকার আক্রমণে ইতোমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছে বহু গৃহপালিত ও বন্যপ্রাণী। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারাও। এমন বিপদের মুখে এবার রীতিমতো যুদ্ধে নামছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তবে অস্ত্র হাতে নয়, মাঠে নামানো হচ্ছে কোটি কোটি ‘প্রশিক্ষিত মাছি’। এবার ওই পতঙ্গবাহিনীকে রণক্ষেত্রে ‘এয়ারড্রপ’ করার পরিকল্পনা নিচ্ছে মার্কিন কৃষি বিভাগ।
সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্ক্রুওয়ার্মের মাংসভুক লার্ভার থেকে বাঁচতে সুনির্দিষ্ট একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন আমেরিকার কৃষি বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তারা। বিমান থেকে কোটি কোটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ মাছিকে মেস্কিকো এবং দক্ষিণ টেক্সাসের আকাশে ছেড়ে দেবেন তারা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষাক্ত ‘নিউ ওয়ার্ল্ড স্ক্রুওয়ার্ম’ মাছির লার্ভা এতটাই ক্ষতিকর যে, তারা মানুষের শরীরেও আক্রমণ চালাতে পারে। গবাদিপশুর দেহে ক্ষত বা শ্লেষ্মা অংশে স্ত্রী স্ক্রুওয়ার্ম ডিম পাড়ে, সেখান থেকেই জন্ম নেয় ভয়ঙ্কর মাংসভুক লার্ভা। যা মাত্র দু’সপ্তাহে ১ হাজার পাউন্ড ওজনের গরুকেও মেরে ফেলতে সক্ষম, এমনটাই দাবি করেছেন মার্কিন ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাইকেল বেইলি।
এই পোকার বংশ ধ্বংসে জীবাণুমুক্ত পুরুষ মাছিদের এয়ারড্রপের পরিকল্পনা নিয়েছে মার্কিন কৃষি বিভাগ। কারণ, এই প্রজাতির স্ত্রী মাছি জীবনে একবারই সঙ্গমে লিপ্ত হয়, এবং জীবাণুমুক্ত পুরুষের সঙ্গে সঙ্গম ঘটলে ডিম নিষিক্ত হয় না। ফলে নতুন লার্ভার জন্ম হয় না। এতে ধীরে ধীরে কমে যাবে স্ক্রুওয়ার্মের বিস্তার।
প্রথম দফায় বিমান থেকে দক্ষিণ টেক্সাস ও মেক্সিকোর আকাশে কোটি কোটি জীবাণুমুক্ত পুরুষ মাছি ফেলা হবে। বর্তমানে পানামার প্রজনন কেন্দ্রে সপ্তাহে ১১ কোটি ৭০ লক্ষ মাছি তৈরি হচ্ছে, তবে চাহিদা মেটাতে ৪০ কোটির বেশি মাছির প্রয়োজন।
১৯৬২-১৯৭৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ৯,৮০০ কোটি জীবাণুমুক্ত মাছির প্রজনন করে সফলভাবে স্ক্রুওয়ার্ম নির্মূল করেছিল। সেই সময় ‘হুইজ প্যাকার’ নামের একধরনের কাগজের কাপ ব্যবহার করে মাছি ছড়ানো হতো।
চলতি বছরের জুনে মেক্সিকো-গুয়াতেমালা সীমান্তে একটি এয়ারড্রপ মিশনে বিমান দুর্ঘটনায় আহত হন তিনজন। তাই এবার ‘মাছি ক্রেট’ সরাসরি বিমান থেকে ফেলার পরিবর্তে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নামানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের পতঙ্গবিদ অধ্যাপক এডউইন বার্গেস বলেন, রাসায়নিক ব্যবহার করলে পশুর মাংসেও তার প্রভাব পড়ে, যা মানুষ খেলে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এই পদ্ধতিই নিরাপদ।
কানসাস স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পতঙ্গবিদ অধ্যাপক ক্যাসান্দ্রা ওল্ডস জানিয়েছেন, বিপজ্জনক এই লার্ভার হাত থেকে বাঁচতে মাছিদের একটা বিরাট উপনিবেশ গড়ে তোলা ছাড়া অন্য রাস্তা খোলা নেই। স্ত্রী মাছিগুলো ডিম পাড়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ পেয়েই যাবে। আর শারীরিক পুষ্টির জন্য লার্ভাগুলোর মাংস খাওয়া আবশ্যক।
এমকে/টিকে