বেলুচিস্তান কখনও পাকিস্তানের অংশ হবে না : বালোচ নেতা কাজী রেহান

পাকিস্তানের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য বেলুচিস্তানের সবচেয়ে পুরোনো এবং বৃহত্তম স্বাধীনতাকামী রাজনৈতিক দল বালোচ ন্যাশনাল মুভমেন্ট (বিএনএম)-এর জ্যেষ্ঠ নেতা কাজী দাদ মোহাম্মদ রেহান ফের স্বাধীনতার প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান দৃঢ়ভাবে স্পষ্ট করেছেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “বেলুচিস্তান কখনও পাকিস্তানের অংশ হবে না।”

অতি সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এএনআই নিউজকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কাজী রেহান। সেখানে তিনি বলেছেন, “পাকিস্তানে আমরাই প্রথম রাজনৈতিক দল, যারা পার্লামেন্ট বর্জন করেছি। ১৯৫৯ সালে বিএনএমের প্রতিষ্ঠালগ্নেই আমরা পরিষ্কারভবে বলেছি যে পাকিস্তানের অধীনে থাকতে আমরা চাই না; এমনকি সীমিত মাত্রায় স্বায়ত্বশাসন বা পাকিস্তানি হিসেবে নামমাত্র অধিকারও চাই না। আমাদের লক্ষ্য পূর্ণ স্বাধীনতা এবং বিএনএম তার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়নি। বেলুচিস্তান কখনও পাকিস্তানের অংশ হবে না।”

নিজেদের স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ হিসেবে বেলুচিস্তানে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং বিভিন্ন সেনাস্থাপনা লক্ষ্য করে গত সপ্তাহের মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ‘অপারেশন বাম’ নামে এক সমন্বিত সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করেছে বিএনএম। বেলুচ ভাষা ‘বাম’ শব্দের বাংলা অর্থ ‘ভোরবেলা’।

এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কাজী রেহান জানান, ‘অপারেশন বাম’ চলার সময় রাজ্যের পাঞ্জগুর, সুরাব, কেচ এবং কাহরান জেলায় সেনাবাহিনীর যোগাযোগ নেটওয়ার্ক, প্রশাসনিক ভবন এবং সামকির চেকপয়েন্টগুলো লক্ষ্য করে সুপরিকল্পিত হামলা পরিচালনা করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, বেলুচিস্তানের এই চার জেলাতেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো অবস্থিত।

এ অভিযানে বিএনএমের যোদ্ধাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ ও যুগপৎভাবে অংশ নিয়েছে বেলুচিস্তানের অপর স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী বালোচ লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএএলএফ)। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বিএলএফের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “আমরা পুরো বেলুচিস্তানে পাকিস্তানের সামরিক উপস্থিতি তছনছ করে দেবো।”

এএনআইকে কাজী রেহান বলেন, বর্তমানে বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রাম অনেকটাই পরিণত এবং তার একটি বড় নিদর্শন হলো এই ‘অপারেশন বাম’। এক সময় স্বাধীনতাকামীরা পাকিস্তানের সেনাসদস্যদের দিকে লক্ষ্য করে হামলা করত, কিন্তু ‘অপারেশন বাম’-এ শুধু পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ সেনা স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, কোনো সেনা কর্মকর্তা বা সদস্যকে নয়।

“আমদের স্বাধীনতা সংগ্রাম যে অতীতের চেয়ে অনেক পরিণত— অপারেশন বাম তার একটি নিদর্শন। আমরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছি যে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের পাশাপাশি রাজনৈতিক সংগ্রামও জরুরি। বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তান এবং তার বালোচ মিত্ররা প্রচার করে যাচ্ছে যে বেলুচিস্তান পাকিস্তান থেকে মুক্ত হলে চরম বিশৃঙ্খলায় পড়বে। এ অভিযানের মধ্যে দিয়ে আমরা ইসলাবাদ ও তার মিত্রদের বার্তা দিতে চাই যে— বেলুচিস্তানের জনগণ স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতার পরবর্তীতে সুশৃঙ্খলভাবে দেশ পরিচালনার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।”

“তাছাড়া গত কয়েক বছর ধরে বিএনএম এবং তার মিত্র গোষ্ঠীগুলোর নেতৃত্বে আসছেন আধুনিক গেরিলা কৌশল এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞানসম্পন্ন তরুণরা। এটা আর এখন গতানুগতক গোষ্ঠীগত যুদ্ধ নয়, বরং একটি আধুনিক প্রতিরোধী সংগ্রাম— যার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে।”

ইসলামাবাদ কীভাবে বেলুচিস্তানকে শোষণ করছে— তুলে ধরতে গিয়ে কাজী রেহান বলেন, “গত কয়েক দশকে শত শত কোটি ডলার বেলুচিস্তানে বিনিয়োগ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেসব বালোচ জনগণের কোনো কাজে আসেনি। সাধারণ জনগণের ছিটেফোঁটা উন্নতিও হয়নি; দিনের পর দিন তারা আরও বেশি দারিদ্র্য, নিপীড়ন ও বঞ্চনার শিকার হয়েছে।”

“আমাদের কথা একটাই— বেলুচিস্তানের বালোচদের এবং এই অঞ্চলের মালিক বালোচ জনগণ। পাঞ্জাব বা পাকিস্তানের অন্য কোনো অংশের জনগণ নয়।”

বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলন-
বেলুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদ কিংবা স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু ১৯৪৭ সালের আগস্টে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের পর থেকে। ব্রিটিশ আমলে এই প্রদেশে মোট ৪টি করদ রাজ্য বা প্রিন্সলি স্টেট ছিল— মাকরা, লাস বেলা, খারান এবং কালাত। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় মাকরা, লাস বেলা এবং খারান পাকিস্তান ইউনিয়নে যোগ দিলেও খালাতের তৎকালীন রাজা আহমেদ ইয়ার খান বালোচ তখন পাকিস্তানে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরের বছর ১৯৪৮ সালে তিনি পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন, কিন্তু এবার বেঁকে বসেন আহমেদ ইয়ার খান বালোচের ভাই প্রিন্স আগা আবদুল করিম খান বালোচ। পাকিস্তানে যোগদানের পরিবর্তে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তার এই ঘোষণা থেকেই বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূত্রপাত।

সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রাবিতে কোডিং পদ্ধতিতে খাতা মূল্যায়নের উদ্যোগ, থাকবে না রোল Jul 15, 2025
যারা সাহসিকতার সাথে লড়াই করলো, তারা কেন মুখ লুকিয়ে ফেললো? Jul 15, 2025
⁠বিএনপি এখন চাঁদাবাজের দলে পরিণত হয়েছে, মন্তব্য নাহিদের Jul 15, 2025
img
মাত্র ১৫ বলে ৫ উইকেটের রেকর্ড স্টার্কের Jul 15, 2025
img
সারাদেশের সঙ্গে খুলনার রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক Jul 15, 2025
দলে ফেরাতে সাকিবের সঙ্গে কথা বলবেন বিসিবি সভাপতি Jul 15, 2025
তৃতীয় বিয়ে নিয়ে মুখ খুললেন আমির Jul 15, 2025
img
পুলিশের অভিযানে ফুলবাড়িয়ায় আওয়ামী লীগের দুই নেতা গ্রেফতার Jul 15, 2025
দীপিকার পোশাক ও ওজন নিয়ে কটাক্ষ, নতুন রূপ নিয়ে সমালোচনার ঝড় Jul 15, 2025
৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যা করতে যাচ্ছে এনসিপি Jul 15, 2025
ব্যক্তিকেন্দ্রিক অশালীন স্লোগানে উদ্বিগ্ন মির্জা ফখরুল Jul 15, 2025
কোথায় ছিলেন জামায়াত ইসলাম চরমোনাই আপনারা লম্বা লম্বা কথা বলেন Jul 15, 2025
img
খুলনায় ট্রেন-ট্রাক সংঘর্ষ: ৩ তিন ঘণ্টা পর ছেড়ে গেল সুন্দরবন এক্সপ্রেস Jul 15, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রফেরত আওয়ামী লীগ নেতাকে বিমানবন্দরে গ্রেফতার Jul 15, 2025
img
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করলেন দুই উপদেষ্টা Jul 15, 2025
img
৮ ঘণ্টা পর পুলিশ পাহাড়ায় ক্যাম্পাস ছাড়লেন অবরুদ্ধ ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ Jul 15, 2025
img
‘জুলাই উইমেন্স ডে’: ঢাবিতে ড্রোনের আলোয় নারীদের অবদান Jul 15, 2025
img
কাদের সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমি দখল ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ Jul 15, 2025
img
১৪ জুলাই স্মরণে ঢাবিতে রাতব্যাপী কনসার্ট Jul 15, 2025
img
১৪ জুলাই স্মরণে মধ্যরাতে রাজপথে নারী শিক্ষার্থীদের মিছিল Jul 15, 2025