যুক্তরাষ্ট্র তাদের বাজারে আমদানি হওয়া মেক্সিকান টমেটোর ওপর ১৭ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করেছে। সিদ্ধান্তটি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার।
এদিকে এই শুল্কের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে টমেটোভিত্তিক পণ্যের দাম বাড়তে পারে। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মেক্সিকোর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর একটি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর এই নতুন শুল্ক কার্যকর হলো। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, সেই পুরোনো চুক্তিটি “মার্কিন টমেটো চাষিদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে”, কারণ মেক্সিকো কম দামে টমেটো রপ্তানি করে মার্কিন কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, “বহুদিন ধরেই আমাদের কৃষকরা অন্যায্য বাণিজ্যচর্চার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, বিশেষ করে টমেটোর মতো পণ্যে যার দরপতন ঘটেছে।”
তবে মেক্সিকো এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটি বলেছে, তারা টমেটো কম দামে দিচ্ছে না বরং মেক্সিকান টমেটোর জনপ্রিয়তার কারণ এর মান ও স্বাদ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শুল্কের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে টমেটোভিত্তিক পণ্যের দাম বাড়তে পারে। সুপারমার্কেট থেকে শুরু করে পিজ্জার দোকান ও মেক্সিকান রেস্তোরাঁ— সবখানেই দাম বাড়ার সম্ভাবনা আছে। বিশেষ করে পিজ্জার সস ও সালসা জাতীয় পণ্য এতে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে।
মেক্সিকোর অর্থনীতি ও কৃষি মন্ত্রণালয় এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, “যে পরিমাণ টমেটো যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়, তা দেখে স্পষ্ট যে মেক্সিকান টমেটোর বিকল্প খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব।”
ফ্লোরিডা টমেটো এক্সচেঞ্জ নামের একটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে টমেটো ব্যবহারের প্রায় ৭০ শতাংশই আসে মেক্সিকো থেকে।
এদিকে যারা নতুন শুল্কের পক্ষে, তাদের দাবি, এটি মার্কিন ভোক্তাদের স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত টমেটোর প্রতি আগ্রহ বাড়াবে, যার ফলে দেশীয় কৃষকরা লাভবান হবেন।
মেক্সিকো জানিয়েছে, তারা শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই নতুন একটি চুক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায়। পাশাপাশি দেশটি তাদের টমেটো উৎপাদকদের জন্য বিকল্প বাজার খুঁজতেও কাজ শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, মার্কিন টমেটো চাষিরা ১৯৯৬ সাল থেকেই অভিযোগ করে আসছেন, মেক্সিকান উৎপাদকরা টমেটো খুব কম দামে রপ্তানি করে তাদের বাজার ধ্বংস করছে। এর জবাবে সে সময় যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকান টমেটোর ওপর অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছিল, যাতে দেশীয় টমেটো বেশি প্রতিযোগিতামূলক হয়।
এরপর দুই দেশের মধ্যে পাঁচটি চুক্তি হয়েছিল, যাতে শুল্ক স্থগিত রাখা হয় এবং মেক্সিকো ন্যূনতম দামে টমেটো রপ্তানি করতে সম্মত হয়। ২০১৯ সালে হওয়া সর্বশেষ এই চুক্তি থেকে এখন যুক্তরাষ্ট্র সরে এসেছে।
এর পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী ১ আগস্ট থেকে মেক্সিকোর সব পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে যদি না তারা যুক্তরাষ্ট্রের ‘মাদক পাচার রোধে’ কার্যকর ব্যবস্থা নেয়।
এছাড়া ব্রাজিল, চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
এসএন