ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকটে পড়েছেন। বুধবার (১৬ জুলাই) দেশটির রাজনীতিতে দীর্ঘদিন প্রভাবশালী ভূমিকা রাখা অতি-রক্ষণশীল দল শাস (Shas) তার নেতৃত্বাধীন জোট সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে ১২০ আসনের কনেসেটে নেতানিয়াহুর জোটের আসনসংখ্যা কমে দাঁড়াবে মাত্র ৫০-এ, যা তাকে সংখ্যালঘু অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছে।
শাস দলের এই পদত্যাগের পেছনে মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে একটি প্রস্তাবিত আইন, যা অতি-রক্ষণশীল ইহুদি ধর্মীয় ছাত্রদের জন্য সেনা নিয়োগ থেকে ব্যাপক ছাড় দেওয়ার কথা বলে। শাসের মন্ত্রী মাইকেল মালকিয়েলি বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সরকারের অংশ থাকা আর সম্ভব নয়।” যদিও দলটি জানিয়েছে, তারা সরকার পতনের চেষ্টা করবে না এবং কিছু কিছু আইন পাশের সময় সমর্থন দিতে পারে। এটিই এখন নেতানিয়াহুর জন্য একমাত্র স্বস্তির জায়গা।
এর আগে মঙ্গলবার, আরেকটি অতি-রক্ষণশীল দল ইউনাইটেড টোরাহ জুডাইয়াজম (United Torah Judaism) একই কারণে জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয়। ফলে, মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হারিয়ে নেতানিয়াহু পড়েছেন গভীর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায়।
তবে, সঙ্গে সঙ্গে সরকারের পতন হচ্ছে না। আইন অনুযায়ী, শাস দলের পদত্যাগ কার্যকর হতে ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগবে। এই সময়ের মধ্যেই নেতানিয়াহুর সামনে সুযোগ থাকবে মিত্রদের ফেরাতে কোনো সমঝোতা খুঁজে বের করার। তাছাড়া, সামনের গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে কনেসেটে তেমন কোনো আইন প্রণয়ন বা ভোটাভুটি হবে না, ফলে সংকট আপাতত থেমে থাকতে পারে।
এই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ইসরায়েলের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসেছে। দেশটি এই মুহূর্তে হামাসের সঙ্গে গাজা যুদ্ধবিরতির শর্ত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও শাসের প্রস্থানে এই আলোচনায় সরাসরি প্রভাব পড়বে না বলে মনে করা হচ্ছে, তবে নেতানিয়াহুকে এখন আরও বেশি চাপে পড়তে হবে কট্টর ডানপন্থী জোটসঙ্গীদের খুশি রাখতে, যারা যুদ্ধ চলাকালীন হামাস নির্মূল না করে শান্তিচুক্তিতে যেতে রাজি নয়।
নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে আরও একটি কারণে। তিনি বর্তমানে দুর্নীতির মামলায় বিচারের মুখোমুখি। অনেক বিশ্লেষকের মতে, তিনি ক্ষমতায় থেকে বিচার ব্যবস্থার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে এবং সমর্থকদের উস্কে দিতে চাচ্ছেন। তাই তিনি যতদিন ক্ষমতায় থাকবেন, ততদিন তিনি তার জোটসঙ্গীদের খেয়ালের ওপর নির্ভরশীল থাকবেন।
ইসরায়েলে বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগ অনেক পুরনো এবং স্পর্শকাতর ইস্যু। প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিওনের সময় থেকেই অতি-রক্ষণশীল ইহুদিদের জন্য কিছু ছাড় ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই ছাড়ের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমান গাজা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীতে জনবল চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ ইসরায়েলির কাছে এই ছাড় অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক মনে হচ্ছে।
নেতানিয়াহুর দল লিকুদ এখনো শাসের পদত্যাগ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে যদি শীঘ্রই কোনো সমঝোতা না হয়, তাহলে যখন কনেসেট আবার অধিবেশনে বসবে, তখন নতুন নির্বাচন ডাকার জোর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। যদিও বর্তমানে নির্বাচন ২০২৬ সালের অক্টোবর মাসে নির্ধারিত রয়েছে।
কেএন/এসএন