রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ এগ্রিমেন্ট’-এর নামে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোপন বা নন-ডিসক্লোজার চুক্তি স্বাক্ষরের তৎপরতা বন্ধ এবং এনবিআর কর্মকর্তাকে বরখাস্ত ও মামলা দায়েরের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ এক বিবৃতিতে অবিলম্বে এই ধরণের জাতীয় স্বার্থ, সার্বভৌমত্ব বিরোধী ও মার্কিন বশংবদ হওয়ার অধীনতামূলক চুক্তি থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ বলেন, দেশবাসীকে আঁধারে রেখে এমন জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি করার কোন এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর তা ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। পূর্ব থেকেই বাংলাদেশের প্রায় সব ধরণের রপ্তানি পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপিত আছে। সবমিলে এখন বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর প্রায় ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার কথা বলছে মুক্ত বাজার অর্থনীতির অন্যতম প্রবক্তা যুক্তরাষ্ট্র। আসলে এর পেছনে লুকায়িত আছে ভিন্ন উদ্দেশ্য।
রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপের নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। একইসঙ্গে দেশটি চীনের ক্রমবর্ধমান রপ্তানি প্রবৃদ্ধির লাগাম টানতে আমদানিকারক দেশগুলোকে চাপে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক, অর্থনৈতিক, ভূরাজনৈতিক আধিপত্যকে নিরঙ্কুশ এবং চীনকে মোকাবেলায় বাংলাদেশকে মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক সামরিক পরিকল্পনায় আষ্টেপৃষ্টে রাখা। এর অংশ হিসেবেই ‘রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ এগ্রিমেন্ট’ নামে একটা গোপন চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এরইমধ্যে মার্কিন বাণিজ্য সংস্থা ইউএসটিআর একটা গোপনীয় চিঠি বা চুক্তির খসড়া বাংলাদেশকে পাঠিয়েছে। ২১ পাতার চিঠির কপিটি মোটা দাগে ৬ ভাগে বিভক্ত। অর্থাৎ ৬ ধরনের শতাধিক শর্ত সংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে চুক্তিতে। এগুলো হলো- কর সংক্রান্ত শর্ত, অশুল্ক বাধা সংক্রান্ত শর্ত, ডিজিটাল বাণিজ্য ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত শর্ত, রুলস অব অরিজিন সংক্রান্ত শর্ত, অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত শর্ত এবং বাণিজ্যিক শর্ত। এই চুক্তির নানাশর্ত নিয়ে মার্কিন প্রশাসন, বিভিন্ন আমদানিকারক সংস্থার সাথে আলোচনা চালালেও বাংলাদেশের মানুষকে এ বিষয়ে কিছুই অবগত করা হয়নি।
এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ বিষয়ে বাংলাদেশের নন-ডিসক্লোজার বা গোপনীয়তার চুক্তি রয়েছে ফলে তা প্রকাশ করা সম্ভব নয়! অথচ কেন এই গোপনীয়তার চুক্তি, এই চুক্তি কার স্বার্থ রক্ষা করছে কোন কিছুই দেশের মানুষ অবগত নয়। অবিলম্বে এধরণের গোপনীয়তার চুক্তি বাতিলের দাবি জানান তিনি।
এমন নীল নকশার পরিকল্পনাকে গোপন রাখতে বর্তমান অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার পূর্বের ফ্যাসিস্ট সরকারের মতো চূড়ান্ত দমন নীতির আশ্রয় নিচ্ছে বলে মনে করেন বজলুর রশীদ ফিরোজ।
তিনি আরো বলেন, এরইমধ্যে এই চুক্তির শর্তাবলী প্রকাশ করায় ‘বাংলা আউটলুক’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন সরকারের প্রেস উইং চাপ দিয়ে প্রত্যাহার করিয়ে নিয়েছে। সম্প্রতি এনবিআরের উপকমিশনার মুকিতুল হাসানকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নথি ফাঁসের অভিযোগে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। একজন সরকারি কর্মচারী জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। দেশের স্বার্থবিরোধী এহেন গোপন পরিকল্পনা জনগণের কাছে উন্মোচনা করা কখনোই অপরাধ হতে পারে না। অবিলম্বে এনবিআর কর্মকর্তা মুকিতুল হাসানকে চাকরিতে পুনর্বহাল, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি পরিহার এবং জাতীয় স্বার্থ বিরোধী সব পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।