হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ অ-২০ নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়দের বেশ ফুরফুরে মেজাজে পাওয়া গেল। গতকাল রাতে সাগরিকা-আফিদারা সাফ অ-২০ টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছেন। সাফের গন্ডি পেরিয়ে সাগরিকাদের চোখ এএফসি অ-২০ টুর্নামেন্টের মূল পর্বে।
২-১০ আগস্ট এএফসি অ-২০ নারী টুর্নামেন্টের বাছাই। বাংলাদেশের গ্রুপে রয়েছে স্বাগতিক লাওস, দক্ষিণ কোরিয়া ও তিমুরলিস্তে। আট গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও সেরা তিন রানার্স আপ আগামী বছর এপ্রিলে মূল পর্বে খেলার সুযোগ পাবে। গত মাসে বাংলাদেশ সিনিয়র নারী ফুটবল দল প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপে খেলা নিশ্চিত করেছে। ঋতুপর্ণা-রুপ্নাদের অনুসরণ করতে চান অনুজরাও।
বাংলাদেশ অ-২০ দলের অন্যতম প্রাণভোমরা মোসাম্মৎ সাগরিকা। তিনি এএফসি বাছাই পর্ব নিয়ে বলেন, 'আসলে আমরা অনেক প্রস্তুত আছে। এর থেকে আরও ভালো কিছু করতে হবে আমাদের। যে কদদিন সময় পাবো, আমাদের আরও ভালোভাবে তৈরি হতে হবে। এর থেকে বেটার পারফরম্যান্স করতে হবে। তাহলে আমরা ভালো কিছু করতে পারবো।'
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল অ-১৬ পর্যায়ে দুই বার মূল পর্বে খেলেছিল। অ-২০ পর্যায়ে চূড়ান্ত পর্বে খেলার রেকর্ড নেই। বিগত সময়ে এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণও কম করেছে বাংলাদেশ। এতে এবার শক্তিশালী কোরিয়ার মতো কঠিন গ্রুপেই পড়েছে। ফলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া খানিকটা কঠিনই। প্রতিপক্ষ নিয়ে সাগরিকার মন্তব্য, 'প্রতিপক্ষ সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। তারা কেমন খেলে তা এখনো দেখিনি। তো আমাদের কোচ যেই নির্দেশনা দেন, সেটা মেনে আমাদের খেলতে হবে। ইনশাআল্লাহ আমরা ভালো কিছু করে আসবো।’
সিনিয়র দল এশিয়া কাপে খেলবে। অ-২০ দল সাফ চ্যাম্পিয়ন। ফলে এএফসি অ-২০ টুর্নামেন্ট বাছাইয়ে বাংলাদেশের প্রতি প্রত্যাশা থাকছে। সেটা চাপ আকারে নিচ্ছেন না সাগরিকা, 'আমরা চাই দেশের মানুষ যেভাবে সাপোর্ট করতেছে, যেভাবে খেলা দেখতেছে তা ধারাবাহিকভাবে করলে ভবিষ্যতে এর থেকে আমরা ভালো কিছু উপহার দিতে পারবো। এএফসিতে চেষ্টা করবো ভালো করার।'
সাগরিকা বয়স ভিত্তিক পর্যায়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেই যাচ্ছেন। এরপরও সিনিয়র দলে একাদশে আসতে পারছেন না। এ নিয়ে তিনি কোচ পিটার বাটলারের দিকেই বল ঠেললেন, 'আমি কেমন পারফরম্যান্স করতেছি তা তো নিজে বলতে পারবো না। এটা নির্ভর করছে কোচের ওপর। কোচের যদি মনে হয় যে আমি ভালো পারফরম্যান্স করতেছি আমাকে সেরা একাদশে নামানো উচিত, তাহলে আমি ভালো কিছু করতে পারব। আর যদি না মনে হয় এটা তো আর কিছু করার নাই। অবশ্যই আমার আত্নবিশ্বাস আছে সিনিয়র দলে খেলার। আপুদের মতো খেলতে পারি না। তবে তার চেয়ে বেটার পারফরম্যান্স করলে অবশ্যই একদিন শুরুর একাদশে থাকতে পারবো।'
সাগরিকা সিনিয়র দলে খেলার জন্য যেমন শামসুন্নাহার-তহুরাদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলেন। তেমনি অ-২০ দলেও রয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এ নিয়ে বলেন, 'তিন ম্যাচে আমার জায়গা তৃঞ্চা খেলেছে। সে ভালো করেছে। আমরা চাই যদি প্রতিটি পজিশনে আমাদের একাধিক প্লেয়ার থাকে, তাহলে আমাদের মধ্যে ভালো করার স্পৃহা বাড়বে, জেদ কাজ করবে। তখন চিন্তা থাকবে যে তার থেকে ভালো করে আমাকে টিমে থাকতে হবে। আমরা টিমমেটরা এক হয়ে লড়াই করতে চাই।’
সাগরিকা হয়ে উঠার পেছনে নারী দলের সাবেক কোচ ছোটনকেও কৃত্তিত্ব দিয়েছেন তিনি, 'ছোটন স্যার আমাকে গড়ায় তুলেছেন। এখন লিড দিচ্ছেন বাটলার স্যার। তো দুইটাই আমার জন্য ভালো ছিল। ছোটন স্যার খুব সাপোর্ট করেছেন আর এখন বাটলার স্যার অনেক সাপোর্ট করতেছেন।'
ঢাকায় নারী ফুটবলে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হলে অনেক ফুটবলারের অভিভাবক খেলা দেখতে আসেন। সাগরিকার বাবা আবাসন সংকটের কারণে এবার আসতে পারেননি, ‘আমার খেলা দেখতে বাবা ঢাকায় আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঢাকায় থাকার কোনো জায়গা নেই বলে তিনি আসেননি। আর মাও একটু অসুস্থ ছিল। তারপরেও সেরা ফুটবলার হওয়াতে আমার বাবা অনেক খুশি।’
জাতীয় দলের এই ফরোয়ার্ড নেইমারকে অনুসরণ করেন। আগের তুলনায় তার ড্রিবলিং ক্ষমতা আরো বেড়েছে বলে মনে করেন। স্মরণীয় গোল নিয়ে বলেন, 'ভারতের সঙ্গে শেষ মুহুর্তে যে গোলটি করেছিলাম সেটা সেরা আর কালকের হ্যাটট্রিকটা স্মরণীয়।'
এসএন