শুল্ক নিয়ে পুনরায় বৈঠকের সময় চেয়ে দফায় দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে মার্কিন প্রশাসনকে। ওয়াশিংটনে গিয়ে সরাসরি বৈঠকের আহ্বান জানানো না হলেও আগামী ২৯ জুলাই বাংলাদেশের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করবে মার্কিন প্রতিনিধিরা। তবে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, ওই ভার্চুয়াল বৈঠকের আগেই শুল্ক বিষয়ে ওয়াশিংটন থেকে বাংলাদেশের জন্য আসতে পারে কোনো সুখবর।
এর আগের টানা তিন দিনের বৈঠকের পর থেকে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে- সে বিষয়গুলো জানিয়ে যেসব ডকুমেন্টস দেওয়া হয়েছে, তার আলোকেই বাংলাদেশের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারে মার্কিন প্রশাসন।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবারই মার্কিন প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ২৯ জুলাই ভার্চুয়ালি বৈঠক করা হবে এবং ওই বৈঠকেই শুল্ক বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হবে। এর পর এখন পর্যন্ত আর নতুন করে মার্কিন প্রশাসন থেকে কিছু জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা প্রত্যাশা করছি, আগামী ২৯ জুলাইয়ের ভার্চুয়াল বৈঠকের আগেই শুল্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নতুন করে কোনো ঘোষণা দিতে পারে। কেননা, আগের টানা তিন দিনের বৈঠকের পর থেকে আমরা যেসব ডকুমেন্ট তাদের দিয়েছি এবং এর পর থেকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বিষয়ে আমরা যেসব উদ্যোগ নিয়েছি, সেগুলোর আলোকেই তারা একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
বিশেষ করে ইউএসটিআরের যেসব কর্মকর্তা আমাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, তারা যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আমাদের দেওয়া ডকুমেন্টের বিষয়গুলো জানান এবং আমরা এখনো পর্যন্ত কী কী উদ্যোগ নিয়েছি- সেগুলো যদি তাকে জানানো হয়- তাহলে হয়ত ২৯ জুলাইয়ের আগেও কোনো ঘোষণা আসতে পারে।
বাংলাদেশের তরফ থেকে দেওয়া ডকুমেন্টগুলোতে কী ধরনের তথ্য দেওয়া হয়েছে এবং বাংলাদেশ আসলে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সে বিষয়ে বাণিজ্য সচিব বলেন, আমরা তো তাদের সঙ্গে যে চুক্তি করব, তার ওপরই প্রস্তুতি নিচ্ছি। চুক্তির খসড়ার ওপরে এবং তাদের চিঠির প্রেক্ষিতে মূলত আমরা তথ্যাদি এবং আমাদের মতামত তুলে ধরেছি। তারা তাদের অবস্থান ঠিক করেছে, আমরা আমাদের অবস্থান ঠিক করেছি।
আমাদের তরফ থেকে যে অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে, তার মধ্যে মূলত চুক্তির খুঁটিনাটি বিষয়গুলো তুলে ধরেছি। এ ছাড়া বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কী কী পণ্য ক্রয় করব- যেমন তুলা, সয়াবিন, গম এবং এয়ারক্রাফট কিনব- এসব বিষয় উল্লেখ করেছি। মাত্র কয়েকদিন আগে তাদের সঙ্গে আমর গম ক্রয়ের চুক্তি করেছি। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে তুলা আমদানি বাড়ানোর কথা বলেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি করে সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমরা চট্টগ্রামের মীরেরশরাই ইপিজেডে ৬০০ একর জমি দিয়েছি।
এসব বিষয় আমরা জানিয়েছি। এ ছাড়া ২৫টি বোয়িং কেনার উদ্যোগ নিয়েছি তাদের কাছ থেকে। এসব উদ্যোগ নেওয়াই তো হয়েছে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য। এ ছাড়া শুল্ক কমানোর বিষয়ে আমরা কিছু পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি, যেগুলো হয়ত এখনই বলা যাচ্ছে না, চুক্তির পরই জানানো যাবে।
তিনি বলেন, মার্কিন প্রশাসন ইন্দোনেশিয়ার বিষয়ে জানিয়েছে, তাদের ওপর ১৯ শতাংশ শুল্ক ধার্য করবে। এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে ২০ শতাংশ শুল্কের বিষয় উল্লেখ করে চুক্তি হতে পারে। আমরাও প্রত্যাশা করছি ৩৫ শতাংশ থেকে কমে ১৮ থেকে ২০ শতাংশের মতো শুল্ক নির্ধারণ করা হতে পারে বা এর চেয়ে কমও হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, আমরা এখন আগামী ২৯ জুলাইয়ের ভার্চুয়াল মিটিংয়ের জন্যই অপেক্ষা করছি। সেই সঙ্গে আমরা আশা করছি ২৯ জুলাইয়ের ভার্চুয়াল মিটিংয়ের পরিবর্তে মার্কিন প্রশাসন থেকে প্রস্তাব আসতে পারে সেখানে গিয়ে সরাসরি বৈঠকের। এই কয় দিনের মধ্যে সে রকম প্রস্তাব আসতে পারে- এমন প্রত্যাশাও রয়েছে আমাদের।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের কাছে বলেন, শুল্ক আলোচনার শেষ পর্যায়ে এসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যদিও আগামী ১ আগস্ট ট্রাম্প প্রশাসনের দেওয়া ৩৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রয়োগ হওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আরেক দফায় আলাপ করার ইচ্ছার কথা বলা হচ্ছিল সরকারের পক্ষ থেকে।
তিনি আরো বলেন, আমি আলোচনায় ভালো ফলাফলের বিষয়ে আশাবাদী। আমাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র একটি অনলাইন মিটিং রেখেছে। সেই মিটিংয়ের হয়ত সেখানে যাওয়ার প্রসঙ্গ আসবে।
ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে থেকে অন্তত দুই ধাপে প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন, এবং সেখানে শুল্ক কমানোর বিষয়ে আলোচনা করেছেন।প্রতিনিধি দলে সরকারের উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রতিনিধি ছিলেন। শুল্ক আলোচনায় বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন প্রচারণা নাকচ করেন উপদেষ্টা।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক কমানোর বিষয়ে বাংলাদেশ আশাবাদী বলেও জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
উপদেষ্টা বলেন, আরোপিত বাড়তি শুল্ক কমানোর ক্ষেত্রে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আবারও বৈঠকের অনুরোধ করা হয়েছে।
আমন্ত্রণের অপেক্ষায় আছি। আশা করছি, বৈঠক হবে, শুল্ক কমবে। তবে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দল অনলাইন মিটিংয়ের একটি শিডিউল দিয়েছে। তাদের শুল্ক পদ্ধতি ও আইনি কাঠামোর কারণে লবিস্ট দিয়ে এই বাড়তি শুল্ক সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।
শেখ বশিরউদ্দীন আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এমন কিছু করা হচ্ছে না, যাতে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়। বরং দেশের স্বার্থ রক্ষার কারণেই সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যদি কোনো কারণে ১ আগস্টের মধ্যে বৈঠক না হয়, তবে পরবর্তীতেও আলোচনার সুযোগ থাকবে।
উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৮ জুলাই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এক চিঠিতে আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন শুল্কহার কার্যকরের কথা জানান। নতুন করে এ শুল্ক কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে গড় শুল্কহার দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে। আগামী ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা।
এমআর