জলাশয় ভরাট ও অনুমোদন ছাড়াই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মাইলস্টোন স্কুল, দাবি বিআইপির

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্যাম্পাস নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যানার্স (বিআইপি) এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, স্কুলটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিমান চলাচলের এপ্রোচ লাইনের মধ্যেই নির্মিত হয়েছে।


ফলে এটি একটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে এবং দ্রুত ক্যাম্পাসটি সরিয়ে নেওয়ার দাবি উঠেছে।

বিআইপি’র তথ্যমতে, মাইলস্টোন স্কুলটির জন্য রাজউক থেকে কোনো ধরনের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। বিশেষ করে যেই ভবনে সম্প্রতি একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিশুদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, সেই ভবনটিরও অনুমোদনের কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি।

পরিকল্পনাবিদরা বলেন, যেসব ভবন অনুমোদন ছাড়া নির্মিত হয়, সেগুলো বাংলাদেশ জাতীয় ভবন নির্মাণ বিধিমালা (BNBC) কিংবা ইমারত বিধিমালা মেনে চলে না। এতে ভবনগুলো আরও বেশি ভবন ও জননিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি করে।

মাইলস্টোন স্কুলের অবস্থান এমন এক এলাকায়, যেটি বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য ব্যবহৃত এপ্রোচ লাইন হিসেবে পরিচিত। স্কুলটির আকাশপথ দিয়ে প্রতিনিয়ত যাত্রীবাহী ও সামরিক বিমান চলাচল করে। এমন পরিস্থিতিতে ভবনটি এবং এর শিক্ষার্থীরা সর্বক্ষণ মারাত্মক বিপদের মুখে রয়েছে।

২১ জুলাইয়ের ভয়াবহ দুর্ঘটনার সময় একটি সামরিক প্রশিক্ষণ বিমান স্কুলটির কাছাকাছি বিধ্বস্ত হয়ে বহু শিশুর মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনার পর তদন্তে নেমে বিআইপি জানায়, শুধু মাইলস্টোন স্কুল নয়, এই অঞ্চলে আরও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, এবং সভা-সমাবেশের স্থান রয়েছে, যেগুলো একই রকম ঝুঁকিতে।

বিআইপি মনে করে, এই দুর্ঘটনার পেছনে বহু স্তরে পরিকল্পনা ও দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতা ছিল। তারা বলেন, রাজউক, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি, ও সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসমূহের উচিত ছিল এই এলাকার উন্নয়ন ও নির্মাণ কাজের সময় ঝুঁকি যাচাই করা। বিশেষ করে বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণে সিভিল এভিয়েশন অথরিটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও এমন অননুমোদিত স্থাপনা কিভাবে নির্মিত হলো, তা নিয়ে সুস্পষ্ট তদন্ত জরুরি।

পরিকল্পনাবিদরা মনে করেন, শুধু তদন্ত করলেই হবে না, এখন সময় হয়েছে ব্যবস্থাগত পরিবর্তন আনার। তাদের দাবি, যেসব প্রতিষ্ঠান বিমান চলাচলের এপ্রোচ লাইনে অবস্থিত এবং যেখানে নিয়মিত মানুষের ভিড় হয়, যেমন স্কুল, কলেজ, মসজিদ ও বাজার ইত্যাদি, সেগুলোকে ধাপে ধাপে অন্যত্র পুনর্বাসন করতে হবে।

তারা আরও বলেন, ভবিষ্যতে ঢাকার উন্নয়ন পরিকল্পনায় বিমান চলাচলের নিরাপত্তা, ভূমির যথাযথ ব্যবহার ও ভবনের অনুমোদন প্রক্রিয়াকে আরও 'জবাবদিহিমূলক ও শক্তিশালী' করতে হবে।

এমআর 


Share this news on:

সর্বশেষ

img
শহীদ পরিবারের সদস্যরা ভিক্ষা চান না, তারা সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চান: জামায়াত আমির Jul 27, 2025
img
কিশোরগঞ্জ রাষ্ট্রপতি পেয়েছে বটে, কিন্তু পায়নি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা: নাহিদ ইসলাম Jul 27, 2025
img
বাশার ও রাজ্জাকদের ম্যাচ রেফারি হওয়া নিয়ে মুখ খুললেন বিসিবি সভাপতি Jul 27, 2025
img
বিমানবন্দর থেকেই আরও ৮০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল মালয়েশিয়া Jul 27, 2025
img
শেষ ওভারে হেনরির দুর্দান্ত বোলিং, ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড Jul 27, 2025
img
সৌদি আরবে এক সপ্তাহে ২২ হাজারের বেশি অবৈধ প্রবাসী গ্রেপ্তার Jul 26, 2025
img
সকালের মধ্যে দেশের ৭ জেলায় ৬০ কি.মি. বেগে ঝড় ও বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস Jul 26, 2025
img
মানুষের কাছে পরিষ্কার করতে হবে আমরা কীভাবে আগামীর বাংলাদেশ গড়বো: আমীর খসরু Jul 26, 2025
img
৩ যোদ্ধার লড়াইয়ের কাহিনি ‘ওয়ার টু’, প্রথম দিনেই ১০০ কোটি আয়ের প্রত্যাশা Jul 26, 2025
ইউএস-বাংলাকে ২৭ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ নেপালের Jul 26, 2025
img
কুবির নতুন ক্যাম্পাসের জমি ও নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ, তথ্য চাইলো দুদক Jul 26, 2025
টেস্ট কেমন? খেয়ে দেইখা পরে কন টেস্ট কেমন! | স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Jul 26, 2025
img
নিষেধাজ্ঞা পেয়ে ‘খুবই হতাশ’ মেসি Jul 26, 2025
img
চীন থেকে জরুরি চিকিৎসা সহায়তা পেল বাংলাদেশ Jul 26, 2025
img
৫ আগস্ট সরকারের মতবিনিময় কর্মসূচি বয়কট করা উচিত : সারজিস আলম Jul 26, 2025
img
টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরে যেতে পারেন বুমরাহ! Jul 26, 2025
img
মালয়েশিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ, অংশ নিয়েছেন শতবর্ষী মাহাথির Jul 26, 2025
img
মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধদের দেখতে বার্ন ইনস্টিটিউটে প্রধান উপদেষ্টা Jul 26, 2025
img
তুরস্কের সাবেক এমপির সঙ্গে জামায়াত আমিরের বৈঠক Jul 26, 2025
img
দেশের প্রতি মানুষের ভালোবাসার প্রমাণ জুলাই বিপ্লব : জ্বালানি সচিব Jul 26, 2025