পুরনো আইনে আমরা আর এই বাংলাদেশকে পরিচালিত হতে দেব না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
রোববার (২৭ জুলাই) দুপুরে এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে নেত্রকোণা শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় পুরাতন কালেক্টরেট মাঠে আয়োজিত পথসভায় এ কথা বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই-আগস্টে আমরা বলেছিলাম, এক নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা হবে। আমাদের নতুন বন্দোবস্ত লাগবে। পুরোনো সিস্টেমে, পুরোনো আইনে আমরা আর এই বাংলাদেশকে পরিচালিত হতে দেব না। আমরা একটি ন্যায়ভিত্তিক ও জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র তৈরি করতে চাই। যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব ক্ষেত্রে মানুষ মানবিক মর্যাদা পাবে।
তিনি বলেন, এই নেত্রকোণায় নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। এখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্যের বেহাল দশাসহ কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে। আমরা এনসিপি এসব সমস্যা দূর করতে চাই। আমরা দেশব্যাপী সংস্কারের দাবিতে নেমেছি। আমরা এমন একটা নতুন সংবিধানের দাবিতে নেমেছি, যে সংবিধানের জন্য আমাদের একটা গণপরিষদ নির্বাচন লাগবে।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, যে গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ, বাংলাদেশের অভ্যুত্থানকারী জনতা বাংলাদেশের আগামীর নতুন সংবিধান নির্ধারণ করবে। ঠিক এক বছর আগে জুলাই মাসে জীবন দিয়ে বাংলাদেশ থেকে শেখ হাসিনাকে উৎখাত করা হয়েছে। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের যেসব নেতারা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
নাহিদ বলেন, তরুণদের উদ্দেশ্যেই আমাদের এই জাতীয় নাগরিক পার্টি গঠিত হয়েছে। আমরা তরুণদের ক্ষমতায়িত করে বাংলাদেশের সব শ্রেণির, সব বয়সের মানুষের জন্য একটি সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দিতে চাই। এখানে তরুণেরা দায়িত্ব গ্রহণ করতে এসেছে। যাঁরা বয়োজ্যেষ্ঠ রয়েছেন, তারা আমাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করবেন। জাতীয় নাগরিক পার্টিকে পরামর্শ দেবেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি সাধারণ মানুষের অধিকার এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করবে। মুজিববাদ এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম শুরু হয়েছে, সেই সংগ্রাম চলবে।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যে স্বপ্ন নিয়ে তরুণ সমাজ রাজপথে নেমে এসেছিল, শহীদ ভাইয়েরা জীবন দিয়েছিল, সেই স্বপ্নের কথা, সেই আকাঙ্ক্ষার কথা বলতেই আমরা প্রতিটি জেলায় জেলায় যাচ্ছি। আমরা মনে করি, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘটনা। যে ফ্যাসিস্ট সরকার মানুষকে নির্যাতন করেছে, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গুম-খুন করেছে, জনগণের অধিকার হরণ করেছে, সেই সরকারের বিরুদ্ধে তরুণ ও সাধারণ মানুষ রাজপথে নেমে এসে জুলাই অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। এই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল, যে ফ্যাসিস্ট সরকার ও বাহিনী ১৬ বছরে মানুষকে নির্যাতন করেছে, অসংখ্য গণহত্যা করেছে, মানুষের টাকা লুট করেছে, সেই ফ্যাসিস্ট সরকার এবং তার বাহিনীর বিচার করা। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবির পাশাপাশি দেশব্যাপী সংস্কারের দাবি নিয়ে, নতুন একটা সংবিধানের দাবি নিয়ে আমরা পথে নেমেছি।
পথসভায় এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) প্রীতম সোহাগ, কেন্দ্রীয় সদস্য ফাহিম খান পাঠান প্রমুখ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম প্রমুখ উপস্থিত থাকলেও বক্তব্য দেননি। পথসভা শেষে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা শেরপুরের উদ্দেশে রওনা হন।
ইউটি/এসএন