হাসিনা আমলে পুলিশে যেভাবে রাজনৈতিক মেরুকরণ করা হয়েছে, তার একটি চিত্র উঠে এসেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজবন্দি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ মামুনের বয়ানে। জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, ২০১৮ সালের রাতের ভোটের পরামর্শ আসে, তৎকালীন পুলিশ প্রধান জাবেদ পাটোয়ারির কাছ থেকে। গোপালগঞ্জের পুলিশ কর্মকর্তারা কিভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেয়াড়া হয়ে ওঠেন তাও বলেছেন আইজিপি মামুন।
দেশের আইন-শৃঙ্খলারক্ষার প্রধান দায়িত্বে থাকা বাহিনী, পুলিশকে যতভাবে হীন স্বার্থে ব্যবহার করা যায়, শেখ হাসিনা তার সবটাই করেছেন। যে বাহিনীর সদস্যদের হওয়ার কথা সৎ-দায়িত্বশীল ও জনগণের বন্ধু তাদের অনেকেই হয়ে ওঠেন মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের হন্তারক।
গেল দেড় দশকে স্বজনপ্রীতি, এলাকা কোটা আর অনিয়মের ঘুণপোকা কিভাবে পুলিশকে কুঁড়ে খেয়েছে তার কিছুটা উঠে এসেছে বাহিনীটির সাবেক আইজিপি মামুনের জবানবন্দীতে। তিনি বলেছেন, ২০১৪ সালের পর থেকে মূলত পুলিশের রাজনৈতিক মেরুকরণ ও গোপালগঞ্জকেন্দ্রীক বিভিন্ন বলয় গড়ে ওঠে। অনেক পুলিশ কর্মকর্তাই আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে হাসিনা সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর ছিল।
২০১৮ সালের পর পুলিশে আরও বাড়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। প্রভাবশালী কর্মকর্তারা সিনিয়রদের নির্দেশ মানতেন না বলে জবানবন্দীতে উল্লেখ করেন আইজিপি মামুন। নিজের ইচ্ছেমত চলতেন তারা। আবার গোপালগঞ্জের পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যেও ছিল স্বার্থের দ্বন্দ্ব। যা বাহিনীতে একরকম ওপেন সিক্রেটই ছিল। এসব দ্বন্দ্ব মীমাংসায় আইজিপি হিসেবে কপাল খোলে মামুনের। তাকে দু’দফায় ২২ মাস আইজিপির দায়িত্বে রাখা হয়।
জবানবন্দিতে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, সাবেক পুলিশ প্রধান জাবেদ পাটোয়ারিই ২০১৮ সালের কুখ্যাত রাতের ভোটের পরিকল্পনাকারী।
ব্যালট বাক্স অর্ধেক ভরে রাখার পরামর্শ আসে জাবেদ পাটোয়ারির কাছ থেকে। তিনিই শেখ হাসিনাকে বলেন, প্রশাসন ও দলীয় কর্মীদের ব্যবহার করে ভোটের বাক্স ভরে রাখতে। আইজিপি মামুনের এ জবানবন্দির ফলে, এই প্রথম ২০১৮’র বিতর্কিত নির্বাচনের প্রক্রিয়া নথিবদ্ধ হলো আইনি পরিসরে।
এমআর/টিএ