দক্ষিণ চীন সাগরে চীন তার সামরিক উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াচ্ছে। সেখানে তারা তিন হাজার ২০০ হেক্টরজুড়ে একটি সামরিক ঘাঁটির নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এর কিছু ঘাঁটি পারমাণবিক বোমারু বিমান চালানোর সক্ষমতাও রাখে। নতুন স্যাটেলাইট ছবি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
এশিয়ার সামুদ্রিক নিরাপত্তা সমস্যা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এশিয়া মেরিটাইম ট্রান্সপারেন্সি ইনিশিয়েটিভের (এএমটিআই) মিসচিফ প্রবাল প্রাচীরের নতুন স্যাটেলাইট ছবিতে উন্নত সামরিক অবকাঠামোর মধ্যে বিশাল রানওয়ে, ক্ষেপণাস্ত্র ছাউনি, বড় আকারের বিমান হ্যাঙ্গার দেখা গেছে। জায়গাটিকে একটি সুবিন্যস্ত নগরীর মতো মনে হচ্ছে।
এএমটিআইয়ের পরিচালক গ্রেগরি পোলিং বলেছেন, ‘প্রধান তিনটি দ্বীপঘাঁটিতে রয়েছে বন্দরের সুবিধা, বিশাল রানওয়ে, যুদ্ধবিমানের জন্য ৭২টির বেশি হ্যাঙ্গার, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ও জাহাজবিধ্বংসী ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের অবস্থান এবং প্রচুর রাডার, সেন্সর ও যোগাযোগব্যবস্থা।’
এএমটিআই জানিয়েছে, চীন বর্তমানে পারাসেল দ্বীপপুঞ্জে ২০টি ও স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জে সাতটি ফাঁড়ির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এর মধ্যে চারটি পূর্ণাঙ্গ নৌ ও বিমানঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে।
২০১২ সালে দখল করা স্কারবোরো শোল এলাকাতেও চীনের কোস্ট গার্ডের নিয়মিত উপস্থিতি রয়েছে। তবে সেখানে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়নি।
দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় পুরো অঞ্চলকেই নিজের সার্বভৌম এলাকা হিসেবে দাবি করে চীন, যার মধ্যে ব্রুনেই, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, তাইওয়ান ও ভিয়েতনামের দাবি করা এলাকাও অন্তর্ভুক্ত। ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের এক রায়ে চীনের এ দাবিকে আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী বলে ঘোষণা করা হয়। তবে বেইজিং তা প্রত্যাখ্যান করে।
ওই অঞ্চলে সামরিক সম্প্রসারণকে কেবল প্রতিরক্ষামূলক ও তাদের ‘সার্বভৌম অধিকার’ রক্ষার জন্য বলে দাবি করে বেইজিং।
চলতি বছরের মে মাসে চীন প্রথমবারের মতো পারাসেল দ্বীপপুঞ্জে তাদের সবচেয়ে উন্নত বোমারু বিমান এইচ-৬ অবতরণ করায়। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়, এ দূরপাল্লার বোমারু বিমানগুলো পারাসেলের উডি আইল্যান্ডে অবস্থান করছে। ২০২০ সালের পর প্রথমবার এ বিমানগুলো সেখানে দেখা যায়।
সিঙ্গাপুরের এস রাজরত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক কলিন কোহ বলেন, ‘এ বিমানগুলোর পারাসেলে মোতায়েন সম্ভবত ফিলিপাইন, যুক্তরাষ্ট্র ও অঞ্চলজুড়ে চলমান অন্যান্য কার্যকলাপের প্রেক্ষাপটে বেইজিংয়ের সর্বদিক থেকে শক্তি প্রদর্শনের বার্তা।’
এইচ-৬ বোমারু বিমানগুলোকে এ অঞ্চলের যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলোর জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হয়। গত অক্টোবরে তাইওয়ানকে ঘিরে চীনের সামরিক মহড়াতেও এসব বিমান মোতায়েন করা হয়েছিল। এমনকি গত বছর জুলাইয়ে এ বিমানগুলো প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডের কাছাকাছি পৌঁছেছিল।
লন্ডনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্রাটেজিক স্টাডিস জানিয়েছে, দক্ষিণ চীন সাগর অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করা চীনের দক্ষিণ থিয়েটার কমান্ড এ বোমারু বিমানের দুটি রেজিমেন্ট পরিচালনা করে।
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা থেকে এ বোমারু বিমানগুলোকে রক্ষা সহজ করতে এগুলোকে সাধারণত চীনের মূল ভূখণ্ডের সুরক্ষিত ঘাঁটিতে রাখা হয়।
কেএন/টিকে