পারমাণবিক ইস্যুতে যে কোনও মন্তব্যের ক্ষেত্রে সবাইকে ‘অত্যন্ত সতর্ক’ হওয়া উচিত বলে জানিয়েছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন নৌবাহিনীকে পারমাণবিক অস্ত্রবাহী দু’টি সাবমেরিন রাশিয়ার আরও কাছাকাছি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার কয়েক দিন পর এই সতর্কবার্তা দিয়েছে রাশিয়া।
সোমবার প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্পের বক্তব্যকে তেমন গুরুত্বই দেয়নি ক্রেমলিন। তবে এই বিষয়ে মস্কো প্রকাশ্য কোনও বিতর্কে জড়াতে চায় না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
এর আগে, গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তিনি মার্কিন নৌবাহিনীর পারমাণবিক অস্ত্রবাহী দুটি সাবমেরিনকে রাশিয়ার কাছাকাছি অঞ্চলে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। গত কয়েকদিন ধরে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক বাগবিতণ্ডায় অংশ নিয়েছেন ট্রাম্প।
রাশিয়াকে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে ৫০ দিনের সময়সীমা কমিয়ে দুই সপ্তাহেরও কমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নামিয়ে আনার পর মেদভেদেভ এক পোস্টে বলেছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে চূড়ান্ত আল্টিমেটামের খেলা খেলছেন... ট্রাম্প। প্রত্যেক বারের নতুন আল্টিমেটাম একটি হুমকি এবং যুদ্ধের দিকে এক ধাপ অগ্রসর হওয়ার সামিল।
এর জবাবে ট্রাম্প লেখেন, ‘‘মেদভেদেভকে বলেন তিনি একজন ব্যর্থ সাবেক প্রেসিডেন্ট। তিনি এখনও ক্ষমতায় আছেন বলে মনে করেন। তাকে সাবধানে কথা বলতে বলেন। তিনি অত্যন্ত বিপজ্জনক এলাকায় প্রবেশ করছেন।’’
পরে আরেক পোস্টে সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি স্বয়ংক্রিয় পারমাণবিক আক্রমণ ব্যবস্থা ‘ডেড হ্যান্ড’র কথা উল্লেখ করেন মেদভেদেভ। হোয়াইট হাউসের প্রধান যে এই হুমকিকে ভালোভাবে নেননি, সেটা পরিষ্কার। এমন পাল্টাপাল্টি মন্তব্যের জেরে চিরবৈরী পারমাণবিক অস্ত্রধারী বিশ্বের দুই পরাশক্তির মাঝে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
এই উত্তেজনার বিষয়ে সোমবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রের সাবমেরিন আগে থেকেই প্রস্তুত অবস্থায় থাকে, এটা চলমান প্রক্রিয়া। আমরা এই বিতর্কে জড়াতে চাই না এবং এ বিষয়ে মন্তব্যও করতে চাই না। আমরা মনে করি, পারমাণবিক বক্তব্য নিয়ে সকলেরই অত্যন্ত সতর্ক হওয়া উচিত।’’
রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে এমন এক সময়ে এই উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, যখন ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেছেন, যদি প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনে সাড়ে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধ না করেন, তাহলে রাশিয়া ও তার জ্বালানির ক্রেতা দেশগুলোর (যেমন ভারত ও চীন) ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন তিনি।
সম্প্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, শান্তি আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, যুদ্ধে রাশিয়ার হাতই এখন শক্তিশালী এবং তার অবস্থানে কোনও পরিবর্তন আসেনি।
ট্রাম্প তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফকে বুধবার অথবা বৃহস্পতিবার রাশিয়ায় পাঠাবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। অতীতে পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় বসলেও তাকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে ব্যর্থ হন উইটকফ।
পেসকভ বলেছেন, আমরা উইটকফকে মস্কোতে স্বাগত জানাই। তার সঙ্গে যোগাযোগকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ ও ফলপ্রসূ বলে মনে করি।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বারবার বলেছিলেন, ক্ষমতায় গেলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করবেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পুতিনের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি। এদিকে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে বোমা হামলা আরও বৃদ্ধি করেছে রাশিয়া। কয়েক দিন আগে তুরস্কে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত শান্তি আলোচনার পরও তেমন কোনও অগ্রগতি দেখা যায়নি।
রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশের কিছু নিরাপত্তা বিশ্লেষক ট্রাম্পের সমালোচনা করে বলেছেন, সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের সঙ্গে অনলাইন বিতর্ককে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছেন ট্রাম্প, যেখানে প্রকাশ্যে পারমাণবিক অস্ত্রবাহী সাবমেরিন মোতায়েনের বিষয়ও উঠে এসেছে।
পেসকভ বলেছেন, আমরা মনে করি না, এটা কোনও উত্তেজনা বৃদ্ধির ইঙ্গিত। তিনি বলেন, এখানে অত্যন্ত জটিল ও সংবেদনশীল বিষয় আলোচনায় এসেছে; যা অনেকের কাছেই আবেগপ্রবণ মনে হয়েছে। মেদভেদেভকে অনলাইন বক্তব্যে সুর নরম করতে বলা হয়েছে কি না— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পেসকভ সরাসরি কিছু বলেননি। তিনি বলেছেন, মূল বিষয় হলো প্রেসিডেন্ট পুতিনের অবস্থান।
সূত্র: রয়টার্স।
এসএন