১৯৭১ স্বাধীনতা অর্জনের আর ২০২৪ তা রক্ষার যুদ্ধ: তারেক রহমান

১৯৭১ সাল ছিল স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধ, আর ২০২৪ সালে ছিল স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ কথা বলেছেন। এ সময় যারা কৌশলে ফ্যাসিবাদী শাসনের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা করতে চায়; তাদের ৫ আগস্টের এই দিনটি মনে করিয়ে দেন তারেক রহমান।

তিনি বলেন, আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে ২০২৪ সালের এই দিনে ফ্যাসিস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়েছে। রাহুমুক্ত হয়েছে দেশ। স্বাধীনতা প্রিয় গণতন্ত্র প্রিয় জনগণের জন্য দিনটি আনন্দের। দিনটি বিজয়ের।

তারেক রহমান বলেন, একুশ শতকের এই বাংলাদেশে পলাতক স্বৈরাচার এক বিভীষিকার রাজত্ব কায়েম করেছিল। গুম, খুন, অপহরণ, হামলা, মামলা, নির্যাতন নিপীড়ণকে সাধারণ এবং স্বাভাবিক ঘটনায় রূপান্তর করেছিল।

তিনি অভিযোগ করেন, গণতন্ত্রকামী মানুষের কণ্ঠ রুদ্ধ করতে পলাতক স্বৈরাচারের নির্দেশে দেশে শত শত গোপন বন্দিখানা ‘আয়নাঘর’ বানানো হয়েছিল। সেই আয়নাঘরের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে জলজ্যান্ত মানুষকে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত, বছরের পর বছর আটকে রাখা হতো। অনেককে চিরতরে গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। বিএনপির সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী কিংবা কমিশনার চৌধুরী আলমের আজও খোঁজ মেলেনি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিপর্যস্ত করে দেওয়া হয়েছিল দেশের অর্থনীতি। ব্যাঙ্কগুলোকে দেউলিয়া করে ফেলা হয়েছিল। দেশ থেকে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করে দেওয়া হয়েছে। অন্যায়, অনিয়ম, অনাচার, দুরাচার, লুটপাট দৈনন্দিন চিত্র হয়ে উঠেছিল। দেশে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল ব্যক্তিতন্ত্র।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সাল ছিল স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধ। আর ২০২৪ সালে ছিল স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ। ৭১ সালের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বাংলাদেশ ভোলেনি। ২৪ এর গণঅভ্যুথানের শহীদদেরও বাংলাদেশ ভুলবে না।

তারেক রহমান বলেন, একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রথম এবং রাজনৈতিক উদ্যোগ হচ্ছে জনগণের সরাসরি ভোটে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ জবাবদিহিমূলক একটি রাষ্ট্র এবং সরকার প্রতিষ্ঠা। জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একটি সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করছে।

ডাকাতি করে কিছু সম্পদ চ্যারিটি করলেও জনগণের চোখে ডাকাত যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা খুঁজতে গিয়ে কৌশলে পলাতক ফ্যাসিস্টয়ের পক্ষে সাফাই গাওয়াও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যারা কৌশলে ফ্যাসিবাদী শাসনের সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তুলনা করতে চান, তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলতে চাই, ৫ আগস্ট বাংলাদেশে যা ঘটেছে, এটি শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের ইতিহাসেও মনে হয় নিজিরবিহীন।

তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্ট গণভবন ছেড়ে ফ্যাসিস্ট পালিয়েছে। সংসদ ভবন রেখে সাংসদ পালিয়েছে। আদালত ছেড়ে প্রধান বিচারপতি পালিয়েছে। বায়তুল মোকাররম ছেড়ে প্রধান খতিব পালিয়েছে। ক্যাবিনেট ছেড়ে মন্ত্রীরা পালিয়েছে।

ফ্যাসিস্টের দোসররা গা ঢাকা দিয়েছে। তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, পলাতক এই ফ্যাসিস্ট চক্রের মনে এখনও কোনও অনুতাপ-অনুশোচনা নেই।

দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, হাজারও শহীদের রক্তস্নাত রাজপথে ফ্যাসিবাদবিরোধী অভূতপূর্ব জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশে আর কখনোই ফ্যাসিবাদ কায়েম হবে না, কাউকে গণতন্ত্র হত্যা করার সুযোগ দেওয়া হবে না, বাংলাদেশকে আর কখনোই তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে দেওয়া হবে না। আমি মনে করি, এসব প্রশ্নে জাতীয় ঐক্য বহাল আছে, থাকবে।

তিনি উল্লেখ করেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে যার যার দলীয় আদর্শ এবং লক্ষ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইস্যুভিত্তিক ভিন্নমত থাকবে। এটি বিরোধ নয় বরং ভিন্নমত। এটিই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে ভিন্নমত কিংবা বিরোধের মাত্রা যেন ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থার উত্থান কিংবা পুনর্বাসনের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়, সে ব্যাপারে প্রতিটি রাজনৈতিক দল এবং গণতন্ত্রকামি জনগণের প্রতি সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই।

তিনি বলেন, আমি মনে করি, প্রতিটি রাজনৈতিক দল, যার যার দলীয় কর্মসূচি কিংবা এজেন্ডা নিয়ে জনগণের আদালতে যাবেন। জনগণ কোনটি গ্রহণ করবেন কিংবা বর্জন করবেন এটি সম্পূর্ণ জনগণের এখতিয়ার। এভাবেই প্রতিদিনের রাজনৈতিক চর্চার মধ্য দিয়েই রাষ্ট্রে জনগণকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে।

স্থানীয় সরকার থেকে আরম্ভ করে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে জনগণ যতদিন সরাসরি নিজের পছন্দের প্রার্থীকে নিজের ভোট প্রয়োগ করে প্রতিনিধি নির্বাচন করে সরকার গঠন কিংবা সরকার পরিবর্তনের ক্ষমতা অর্জন করতে না পারবে ততদিন পর্যন্ত রাষ্ট্র এবং সরকারে জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

টিকে/

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আম্পায়ারের সমালোচনা করে শাস্তি পেলেন অলরাউন্ডার অজি Aug 06, 2025
img
‘পতি পত্নী ও পাঙ্গা’-তে হিনা-রকির দুষ্টু-মিষ্টি কেমিস্ট্রি Aug 06, 2025
img
‘আভান জাভান’ গানে কিয়ারার রঙিন ঝলক Aug 06, 2025
img
দুপুরের মধ্যে ঢাকাসহ দেশের ১২ জেলায় ৬০ কি.মি. বেগে ঝড়ের শঙ্কা Aug 06, 2025
img
৫ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাচ্ছে আনুশকার ‘ঘাটি’ Aug 06, 2025
img
'৭১-কে' ২৪-এর মুখোমুখি দাঁড় না করানোর আহ্বান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের Aug 06, 2025
img
পুরো গাজা দখল করা হবে কিনা তা নির্ভর করছে ইসরাইলের ওপর: ট্রাম্প Aug 06, 2025
বিচারের আগে রাজাকারদের চিহ্নিত করতে হবে, বললেন শিবির নেতা! Aug 06, 2025
img
ঢাকায় বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস, তবে বাড়বে তাপমাত্রা Aug 06, 2025
img
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা গণতন্ত্র ধ্বংস করে এককভাবে রাজত্ব কায়েম করেছিল : আমীর খসরু Aug 06, 2025
img
দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ? Aug 06, 2025
img
আজ ঢাকায় যেসব কর্মসূচি রয়েছে Aug 06, 2025
img
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার Aug 06, 2025
img
আজ দেশব্যাপী বিজয় র‍্যালি করবে বিএনপি Aug 06, 2025
img
দীপিকা-সন্দীপ বিতর্কে মুখ খুললেন রুবিনা Aug 06, 2025
img
গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে বার্লিনে বিএনপির বিজয় উৎসব পালন Aug 06, 2025
img
চাঁদে প্রথম পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনে নেতৃত্ব নিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র Aug 06, 2025
img
৩৫ বছর পর একই পরিবারের ৪ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল বিএসএফ Aug 06, 2025
img
পর্তুগালে বাংলাদেশ দূতাবাসে ‘গণঅভ্যুত্থান দিবস’ পালিত Aug 06, 2025
img
গাজাবাসীর জন্য ৬ কোটি ডলারের খাদ্য সহায়তা ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের Aug 06, 2025