যুদ্ধাপরাধের বানোয়াট বয়ানে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের শিকার নিজামী: ব্যারিস্টার মোমেন

অতীতে যারা মতিউর রহমান নিজামীসহ বিচারের নামে সকল মজলুমের পক্ষে, জুলুমের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন, তারাও রাজনৈতিক স্বার্থে কখনো ভিন্ন কথা বলছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে ফ্যাসিস্ট প্রোপাগান্ডার অংশ হয়ে উঠছেন। তা অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন নাজিবুর রহমান মোমেন।

তিনি সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ আমলে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়া মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে।

মঙ্গলবার(৫ আগস্ট) দিবাগত রাতে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে দেয়া এক দীর্ঘ স্টাটাসের শুরুতেই ব্যারিস্টার মোমেন দাবি করেন যে, তার বাবা মতিউর রহমান নিজামী ফ্যাসিবাদী হাসিনার জুডিশিয়াল কিলিংয়ের শিকার। তিনি একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এবং ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

কেবলমাত্র ভারতীয় আগ্রাসন ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদী বয়ানের বিরুদ্ধে তাঁর দৃঢ় ও নির্ভীক অবস্থানের কারণে, শতাব্দীর জঘন্যতম মিথ্যাচারের মাধ্যমে ‘শাহবাগী’ সাজানো যুদ্ধাপরাধের বানোয়াট বয়ান তৈরি করে তাকে হত্যা করা হয়।

তিনি বলেন, 'কিন্তু আজ বেদনার সাথে লক্ষ্য করছি, অতীতে যারা আমার মজলুম পিতার বিরুদ্ধে হওয়া জুলুমের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন, তারাও রাজনৈতিক স্বার্থে কখনো ভিন্ন কথা বলছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে ফ্যাসিস্ট প্রোপাগান্ডার অংশ হয়ে উঠছেন।'

মোমেনের দাবি, নিজামী ও তার রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের হত্যা করে এই দেশে ভারতীয় আধিপত্য সুদৃঢ় করা হয়েছিল, বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছিল, গণতন্ত্র হত্যা করা হয়েছিল, এবং গোটা বাংলাদেশকে কার্যত এক কারাগারে পরিণত করা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, সেই নিরপরাধ শহীদদের বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়ার ধারাবাহিকতা ‘জুলাই বিপ্লব’-এর পরও থামেনি।
তিনি বলেন, বিশ্বের বিবেকবান মানুষ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই সাজানো বিচারের তীব্র সমালোচনা করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত এই বিচারের একটি মামলাকে প্রকাশ্যে ‘বিচারের নামে তামাশা’ বলেছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যদি জনাব আজহার সাহেবের মামলা বিচারের নামে তামাশা হয়ে থাকে, তবে আমার শহীদ পিতা এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনের শুরুর দিকে নিহত সকল ব্যক্তির বিচার ছিল বহুগুণ বেশি তামাশা।

এই প্রেক্ষাপটে আমি নিম্নলিখিত দাবিসমূহ পেশ করছিঃ

১. হত্যার শিকার সকল ব্যক্তিবর্গ এবং হাসিনার আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত সকলের বিচারপ্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করতে হবে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায় একটি ঐতিহাসিক প্রশ্ন। সুতরাং, হত্যার শিকার মৃত ব্যক্তিদের মামলা পুনরুজ্জীবিত করা ঐতিহাসিক সত্য উদঘাটনের জন্য অপরিহার্য।

২. নিরপেক্ষ আদালতে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত হত্যার শিকার ও বর্তমানে কারাবন্দী কোনো ব্যক্তিকে দোষী আখ্যায়িত করে জনমনে ঘৃণা উসকে দেওয়া যাবে না।

৩. আদালতে নির্দোষ প্রমাণ হলে ভুক্তভোগী পরিবারের প্রতি প্রয়োজনীয় ও যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। যারা নির্দোষ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যার সম্মতি তৈরি করেছেন এবং জনতার হাতে তুলে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন, তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে।

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি—এই দাবিগুলো সম্পূর্ণ যৌক্তিক এবং ন্যায়সঙ্গত। ন্যায়বিচারের প্রতি সত্যিকার শ্রদ্ধাশীল ও বিবেকবান কোনো মানুষই এর বিরোধিতা করতে পারে না।

এফপি/ টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
’৭১-কে ’২৪-এর মুখোমুখি না দাঁড় করানোর আহ্বান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের Aug 06, 2025
img
পুরো গাজা দখল করা হবে কিনা তা নির্ভর করছে ইসরাইলের ওপর: ট্রাম্প Aug 06, 2025
বিচারের আগে রাজাকারদের চিহ্নিত করতে হবে, বললেন শিবির নেতা! Aug 06, 2025
img
ঢাকায় বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস, তবে বাড়বে তাপমাত্রা Aug 06, 2025
img
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা গণতন্ত্র ধ্বংস করে এককভাবে রাজত্ব কায়েম করেছিল : আমীর খসরু Aug 06, 2025
img
দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ? Aug 06, 2025
img
আজ ঢাকায় যেসব কর্মসূচি রয়েছে Aug 06, 2025
img
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার Aug 06, 2025
img
আজ দেশব্যাপী বিজয় র‍্যালি করবে বিএনপি Aug 06, 2025
img
দীপিকা-সন্দীপ বিতর্কে মুখ খুললেন রুবিনা Aug 06, 2025
img
গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে বার্লিনে বিএনপির বিজয় উৎসব পালন Aug 06, 2025
img
চাঁদে প্রথম পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনে নেতৃত্ব নিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র Aug 06, 2025
img
৩৫ বছর পর একই পরিবারের ৪ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল বিএসএফ Aug 06, 2025
img
পর্তুগালে বাংলাদেশ দূতাবাসে ‘গণঅভ্যুত্থান দিবস’ পালিত Aug 06, 2025
img
গাজাবাসীর জন্য ৬ কোটি ডলারের খাদ্য সহায়তা ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের Aug 06, 2025
img
বিএনপির নয়, দেশের সাংবাদিক হন : আমীর খসরু Aug 06, 2025
img
নোয়াখালীতে মাইক্রোবাস খালে পড়ে প্রাণ গেল ৭ জনের Aug 06, 2025
img
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে আজ আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে বিএনপি Aug 06, 2025
img
ভুটানকে ৫ গোলে হারিয়ে ম্যাচ সেরা কৃষ্ণা Aug 06, 2025
img
আটকের ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরিবারকে জানাতে হবে : প্রধান উপদেষ্টা Aug 06, 2025