শুভমান গিলের হাতে টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব তুলে দেয়ায় নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখানো লোকের সংখ্যা নেহায়েত কম ছিল না। তবে, প্রথম পরীক্ষায় লেটার মার্কস নিয়েই পাশ করেছেন গিল। সবাইকে বিস্মিত করে ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট সিরিজ ড্রয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছে ভারত। ব্যাট হাতে রানের বন্যা বইয়ে দিয়ে সিরিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছেন গিল। মাঠে তার নেতৃত্বগুণও কেড়েছে নজর।
লাল বলের পরীক্ষায় প্রত্যাশা ছাড়ানো ফল এনে দেয়ার পর শুভমান গিল এখন ভারতীয় ক্রিকেটকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে নতুন এক মোড়ে। রোহিত শর্মার হাত থেকে ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্বের ব্যাটন নিয়ে সেটা গিলের হাতে তুলে দেয়ার এটাই মোক্ষম সময় বলে মনে করছেন অনেকেই। এই দলে আছেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমানে ধারাভাষ্যকার মোহাম্মদ কাইফও।
ভারতের পক্ষে ১৩ টেস্ট ও ১২৫টি ওয়ানডে খেলা কাইফ মনে করেন, ইংল্যান্ড সফরে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর গিল এখন ওডিআই দলের অধিনায়কত্ব নেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মতো সিনিয়র খেলোয়াড়দের অবসরের পর কেউই আশা করেননি যে গিলের নেতৃত্বে তরুণ দলটি ইংল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ ড্র করতে পারবে। কিন্তু ২৫ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন এবং সমালোচকদের ভুল প্রমাণ করেছেন।
সম্প্রতি কাইফ গিলের নেতৃত্বগুণের প্রশংসা করে তাকে 'একজন শান্ত মেজাজের অধিনায়ক' বলে আখ্যা দেন। একই সঙ্গে তিনি গিলকে শিগগিরই রোহিত শর্মার জায়গায় ওডিআই দলের অধিনায়ক হিসেবেও দেখতে চান।
তিনি বলেন, 'ও খুবই শান্ত স্বভাবের অধিনায়ক। চাপের মধ্যে থেকেও ধৈর্য বজায় রেখেছে। ও নিশ্চয়ই ওডিআই অধিনায়কত্বও পাবে, কারণ আমরা জানি না রোহিত শর্মা আর কতদিন নেতৃত্বে থাকবে। গিল প্রস্তুত। সে সাদা বলের ক্রিকেটেও রান করে, টেস্টেও অধিনায়ক হিসেবে দারুণ পারফর্ম করেছে। তরুণ দল নিয়ে নামলে ব্যাটে রান করাও লাগে, আবার নেতৃত্বেও ভালো দিতে হয়- দুটোই করেছে ও। অসাধারণ এক সফর ছিল এটা ওর জন্য।'
গিলের চাপ সামলানোর দৃঢ় মানসিকতা আর পারফরম্যান্স দিয়ে সমালোচকদের জবাব দেয়ারও প্রশংসা করেছেন কাইফ, 'গিল অধিনায়ক হিসেবে, এই সিরিজে দুই হাতেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে। যখন তাকে অধিনায়ক করা হয়, তখন তার টেস্ট রেকর্ড দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু এক তরুণ অধিনায়ক চাপের মধ্যে তরুণ দল নিয়ে ইংল্যান্ডে পৌঁছায়। সে ব্যাট হাতে জবাব দিয়েছে। এমন এক পর্যায় এসেছিল, যখন তিনি স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের রেকর্ড ভাঙার মতো অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন। ব্যাটে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন করেছে।'
এই সিরিজে গিল ১০ ইনিংসে ৭৫.৪ গড়ে ৭৫৪ রান করেন, যেখানে ছিল চারটি সেঞ্চুরি। সিরিজের শুরুতে হেডিংলিতে করেন ১৪৭ রান করেন। এরপর এজবাস্টনে দ্বিতীয় টেস্টে দুই ইনিংসে ২৬৯ ও ১৬১ মিলিয়ে ৪৩০ রান করেন, যা টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচ অ্যাগ্রিগেট।
চতুর্থ টেস্টে ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ম্যাচ বাঁচানো ১০৩ রানের ইনিংস খেলেন গিল, যার ফলে ভারত ম্যাচটি ড্র করতে সক্ষম হয়। সিরিজজুড়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে তিনি সিরিজের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন এবং লাল বলে দলকে প্রথমবার নেতৃত্ব দিয়েই দারুণ ফলাফল এনে দেন।
কেএন/এসএন