জনদুর্ভোগ কমাতে কাজের মাধ্যমে প্রমাণ দিতে হবে: চসিক মেয়র

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, জনগণের দুর্ভোগ কমাতে হলে শুধু কথায় নয়, কাজের মাধ্যমে প্রমাণ দিতে হবে। কেউ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে ছাড় দেওয়া হবে না।

বুধবার (৬ আগষ্ট) লালদিঘীর চসিক পাবলিক লাইব্রেরি সম্মেলন কক্ষে টিসিবি কার্ড বিতরণ ও নগর পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মেয়র বলেন, আজকে মূলত আপনাদের সঙ্গে যে মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়েছে তার কারণ হলো সম্প্রতি কিছু সমস্যা আমার চোখে পড়ছে। যেগুলো অত্যন্ত জনসম্পৃক্ত। যেগুলোর কারণে আমি মনে করছি করপোরেশনের ভাবমূর্তি অ্যাজ ওয়েল অ্যাজ আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে ঝুঁকিপূর্ণ স্ল্যাব ও ম্যানহোল, খাল-নালা পরিষ্কারে গাফিলতি, ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারে গাফিলতি, মশক নিধন অভিযানে শৈথিল্য, রাস্তার গর্ত। এ সমস্যাগুলোর সমাধান করতে চাই।

তিনি বলেন, যেহেতু খাল-নালার স্ল্যাবগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে সম্পর্কিত আর স্ল্যাব খুলে কিন্তু ময়লাগুলো নিতে হচ্ছে এবং সম্প্রতি নালাগুলো আমরা ক্লিন করেছি। সেহেতু আমি আপনাদের সতর্ক করতে চাই, যেন দ্রুত এগুলো ক্লিন করার পরে আবার ঢেকে দেওয়া হয়। যেকোনো মুহূর্তে যেগুলো অ্যাক্সিডেন্ট করতে পারে। আজকে আমি চকবাজার, কাপাসগোলা, উর্দুগলি, মুন্সিপুকুর পাড়, কাতালগঞ্জ, বৌদ্ধ মন্দির এসব জায়গায় ঘুরেছি। আমি দেখেছি বিভিন্ন নালা পরিষ্কার করার জন্য স্ল্যাবগুলো তারা খুলছে। উন্মুক্ত খাল-নালা জীবনের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। এজন্য সিভিল এবং পরিচ্ছন্নতা বিভাগের সুপারভাইজাররা এ বিষয়টির সমাধান করবেন।

পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে গাফিলতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে মেয়র বলেন, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের পারফরম্যান্স দিন দিন খারাপ হচ্ছে। শুরুতে দুই-তিন মাস ভালো ছিল। কিন্তু এখন স্ট্যান্ডার্ডের নিচে নেমে গেছে। প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তাকে বলছি, সুপারভাইজারদের নিয়ে বসে ওয়ার্ডভিত্তিক কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখুন। কোনো অজুহাত শুনবো না। আমি যে কোনো সময় না বলে রাতে ওয়ার্ড পরিদর্শনে যেতে পারি। সেখান গিয়ে যদি দেখি পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে কেউ নেই, তাহলে দায় আপনাদের নিতে হবে। চাকরি হারালে আর কোনো অজুহাত গ্রহণযোগ্য হবে না।

মশকনিধন অভিযানেও অসন্তোষ প্রকাশ করে মেয়র বলেন, অনেক ওয়ার্ডে মশকনিধনের কার্যক্রম এখন অনেকটাই কমে গেছে। আগ্রাবাদে গিয়ে দেখলাম, যতক্ষণ আমি ছিলাম ততক্ষণ স্প্রে করা হয়েছে, পরে কাজ বন্ধ। এভাবে হবে না। অভিযানগুলো তদারকি করে নিয়মিত চালাতে হবে। প্রয়োজনে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার প্রয়োগ করতে হবে।

টিসিবি কার্ড বিতরণের ধীরগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে মেয়র বলেন, টিসিবির মাত্র ৪০ হাজার কার্ড অ্যাকটিভ হয়েছে। আমি নিজেই ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে দেখব কী অবস্থা। কার্ড বিতরণের সংখ্যা এক হাজারের নিচে থাকা ওয়ার্ডগুলো তালিকা করে পরিদর্শনে যাবো। প্রতিদিন অন্তত দুইটি করে ওয়ার্ড ভিজিট করব। পারফরমেন্স যদি ভালো না হয়, আমি নিজেই যাচাই করব। টিসিবি কার্ড বিতরণে শুধু প্রকৃত গরিবদের নাম থাকতে হবে। নিম্ন-মধ্যবিত্তরাও প্রাধান্য পাবে। ধনী মানুষকে কার্ড দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি অনিয়ম করে, সে আমার ছোট ভাই হলেও ছাড় দেওয়া হবে না। দুর্নীতি করলে চাকরিও থাকবে না।

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া পরিস্থিতি নিয়ে মেয়র বলেন, চিকনগুনিয়া ও ডেঙ্গু- দুটোই মশার মাধ্যমে ছড়ায়। পরিষ্কার পানিতে জমে থাকা লার্ভা থেকে এই রোগের বিস্তার ঘটে। তাই বাড়ির আঙিনায়, নির্মাণাধীন ভবনে, পলিথিন, প্লাস্টিক, ডাবের খোসা- যেখানেই পানি জমে সেখানে সতর্ক হতে হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চিকুনগুনিয়ায় জয়েন্টে ব্যথা বেশি হয়, ডেঙ্গুতে সারা শরীরে ব্যথা হয় ও শক হয়ে মৃত্যুঝুঁকি থাকে। তাই জ্বর হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রকৌশল বিভাগের উদ্দেশে মেয়র বলেন, আমি নিউমার্কেট থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত রাস্তার গর্ত দেখে এসেছি। এটা সহ্য করা যায় না। তাই দ্রুত তালিকা করে ৪১ ওয়ার্ডে রাস্তার গর্ত সংস্কারের কাজ শুরু করতে হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরুর প্রস্তুতি নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যেসব বাড়ি খালের পাশে অবস্থিত, যেসব গার্মেন্টস আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে, সেগুলো খাল-নালায় বর্জ্য ফেললে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। খাল-নালার তালিকা করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ জোরদার করতে হবে।

মেয়র সবগুলো বিভাগকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা শতভাগ আন্তরিকভাবে জনগণের জন্য কাজ করতে চাই। দায়িত্ব পালনে কেউ অবহেলা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন চসিকের সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী আনিসুর রহমানসহ চসিকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

কেএন/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক Aug 07, 2025
img
জুলাই শহীদের তালিকা থেকে ৮ জনের নাম বাতিল করে গেজেট প্রকাশ Aug 07, 2025
img
আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলা : অভিযোগ গঠনে আসামিপক্ষের শুনানি ১৩ আগস্ট Aug 07, 2025
img
জামায়াত আমিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্বাস্থ্যের খোঁজ নিলেন মুফতি ফয়জুল Aug 07, 2025
img
গ্রেপ্তার দেখানো হলো মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিনকে, চাওয়া হবে রিমান্ড Aug 07, 2025
img
শতবছর অপেক্ষা করলেও জামায়াত রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে পারবে না: হাবিব Aug 07, 2025
img
১২ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের ১২ সাফল্য তুলে ধরলেন প্রেস সচিব Aug 07, 2025
img
তিন নায়িকা, এক আয়ুষ্মান, আসছে নতুন কমেডি ঝড় Aug 07, 2025
img
রামপুরায় আমিরকে হত্যার ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল Aug 07, 2025
img
৭৫০ কোটি টাকায় লিভারপুল তারকাকে দলে নিচ্ছে আল হিলাল Aug 07, 2025
img
দ্বিতীয় সন্তানের বাবা হচ্ছেন আরবাজ, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে এলেন প্রকাশ্যে Aug 07, 2025
img
গত এক বছরের কাজের তালিকা দিলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় Aug 07, 2025
img
চড়া মূল্য দিতে হবে, তবু আমি প্রস্তুত : মোদি Aug 07, 2025
img
নোয়াখালীতে অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কায় প্রাণ গেল জামায়াত নেতার Aug 07, 2025
img
সিরাজের সাফল্যে কোহলির বোনের শুভেচ্ছা বার্তা Aug 07, 2025
img
শ্রীদেবীকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন রজনীকান্ত Aug 07, 2025
img
চট্টগ্রামে ভারী বর্ষণে ভেঙে গেল ব্রিজ, যানবাহন চলাচল বন্ধ Aug 07, 2025
img
জুলাই ঘোষণাপত্রে শাপলা গণহত্যা উপেক্ষিত: হেফাজতে ইসলাম Aug 07, 2025
img
পুতিন-উইটকফ বৈঠকে খুব ভালো আলোচনা হয়েছে: ট্রাম্প Aug 07, 2025
img
টঙ্গীতে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে দগ্ধ স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু Aug 07, 2025