চীনের ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিং সফর শেষ করলেন ২৩ সদস্যের বাংলাদেশি সাংবাদিক প্রতিনিধি দল। তিন দিনের এই সফরে তারা দুই দেশের স্বাস্থ্যখাতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদারের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
শনিবার (৯ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব ও বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, শুক্রবার সফরের শেষ দিনে প্রতিনিধি দল কুনমিং টংরেন হাসপাতাল ও কুনমিং আই হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা অত্যাধুনিক চিকিৎসা সুবিধা এবং রোগী সেবার উচ্চমান প্রত্যক্ষ করেন।
কুনমিং টংরেন হাসপাতালে সাংবাদিকরা জানতে পারেন, প্রতিষ্ঠানটি একটি লেভেল-৩ বহুমুখী বিশেষায়িত বেসরকারি জেনারেল হাসপাতাল, যা ক্লিনিক্যাল চিকিৎসা, প্রতিরোধ, পুনর্বাসন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, মেডিকেল শিক্ষা এবং আন্তর্জাতিক একাডেমিক বিনিময়সহ বিস্তৃত সেবা দিয়ে থাকে।
এক ঘণ্টাব্যাপী উপস্থাপনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, তারা এরইমধ্যে কিছু বাংলাদেশি রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন যারা জটিল রোগে ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধকতায় ভুগছিলেন।
প্রতিনিধি দলকে তারা তাদের আন্তর্জাতিক স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি সেন্টার ঘুরে দেখান, যেখানে তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী মেরুদণ্ডের আঘাতে অত্যাধুনিক সার্জারি এবং নিবিড় পুনর্বাসন কর্মসূচি পরিচালিত হয়। এ সুবিধাগুলো চলমান নিউরো-রিজেনারেটিভ গবেষণার মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে।
কুনমিং টংরেন হাসপাতালের ভাইস প্রেসিডেন্ট শেন লিং বলেন, আমরা আমাদের হাসপাতালে উৎকৃষ্ট চিকিৎসা সুবিধা গড়ে তুলেছি এবং আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত করেছি।
তিনি জানান, হাসপাতালে ১০০-এর বেশি চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ এবং ৩৭টি ক্লিনিক্যাল বিভাগ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে কার্ডিওলজি, নেফ্রোলজি ও এন্ডোক্রাইনোলজি, রেসপিরেটরি মেডিসিন, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ও এন্ডোস্কোপি সেন্টার, অনকোলজি, নিউরোসার্জারি, জেনারেল সার্জারি, অর্থোপেডিকস, ইউরোলজি, গাইনোকোলজি এবং এক্সক্লুসিভ হেলথ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার।
এছাড়া হাসপাতালে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা ইমেজিং, আল্ট্রাসাউন্ড ডায়াগনস্টিক এবং ল্যাবরেটরি সরঞ্জাম রয়েছে, যা সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য শক্তিশালী প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
আন্তর্জাতিক রোগীদের জন্য তারা দক্ষ ও মানসম্মত চিকিৎসা প্রক্রিয়া তৈরি করেছে, যেখানে বহুবিধ বিশেষজ্ঞের সমন্বিত সেবা রোগীর নিরাপত্তা ও চিকিৎসার মান নিশ্চিত করে। এর ফলে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের রোগী চিকিৎসা নিতে পারছেন।
আন্তর্জাতিক মেডিকেল বিভাগ জটিল জন্মগত হৃদরোগের মাইনিমালি ইনভেসিভ চিকিৎসা, জটিল অর্থোপেডিক সার্জারি ও অভ্যন্তরীণ চিকিৎসার দুরারোগ্য রোগ মোকাবিলায় সফল অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে শেন লিং জানান, টংরেন হাসপাতাল দ্বিতীয় ধাপের প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে, যেখানে আন্তর্জাতিক মেডিকেল আউটপেশেন্ট, ইনপেশেন্ট এবং অনকোলজি ট্রিটমেন্ট সেন্টার স্থাপন করা হবে, যাতে বিদেশি রোগীরা আরও উন্নত সেবা পেতে পারেন।
সাংবাদিকরা কুনমিং আই হাসপাতালও পরিদর্শন করেন, যেখানে লেজার সার্জারি, উন্নত ডায়াগনস্টিক ইমেজিংসহ বিশেষায়িত চক্ষু চিকিৎসা প্রযুক্তি ও পূর্ণাঙ্গ রোগী সেবা প্রত্যক্ষ করেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছেন, বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা প্রক্রিয়া সহজ করতে তারা কাজ করছে- যোগাযোগ, ভর্তি প্রক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক রোগী সেবা ব্যবস্থাকে আরও সহজ করা হবে।
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদারের নেতৃত্বে এ সফর চীনা সরকারের আমন্ত্রণে অনুষ্ঠিত হয়।
এ সফরে চীনের স্বাস্থ্য অবকাঠামো সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ধারণা পাওয়া গেছে এবং দুই দেশের চিকিৎসা সহযোগিতার নতুন সম্ভাবনা উন্মুক্ত হয়েছে।
কুনমিং আই হাসপাতালের সিইও ঝাং মিন সাংবাদিকদের জানান, যদিও তারা বেসরকারি হাসপাতাল, তবু চিকিৎসা অভিজ্ঞতা সরকারি হাসপাতালের মতোই। তিনি বলেন, প্রতি বছর আমরা ভারত ও রাশিয়াসহ বিদেশি শত শত রোগী গ্রহণ করি। বাংলাদেশি চক্ষু রোগীদেরও আমরা সাশ্রয়ী মূল্যে চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত।
২৮ বছরের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে ঝাং বলেন, এখানে উচ্চ দক্ষ চিকিৎসক ও কর্মীরা কাজ করেন এবং আধুনিক সরঞ্জাম রয়েছে।
তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, আমাদের চিকিৎসকরা বিদেশি রোগী চিকিৎসায় অভিজ্ঞ এবং সাবলীল ইংরেজি বলতে পারেন। তাই বাংলাদেশি রোগীদের ভাষাগত সমস্যার ভয় নেই। তিনি বাংলাদেশি রোগীদের ইমেইলে তাদের চক্ষু সমস্যার বিবরণ পাঠাতে আমন্ত্রণ জানান।
কেএন/টিএ