গত মাসে মিয়ানমারে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের মূল পর্ব নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। এবার আফিদাদের সামনে অ-২০ এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত আসরে খেলার হাতছানি। আগে কখনো বাংলাদেশ বয়স ভিত্তিক অ-২০ টুর্নামেন্টে মূল পর্বে খেলতে পারেনি।
এএফসি অ-২০ নারী টুর্নামেন্টের বাছাইয়ে ৩২ দল আট গ্রুপে খেলছে। আট গ্রুপের চ্যাম্পিয়নের পাশাপাশি সেরা তিন রানার্স আপ দল আগামী বছর চূড়ান্ত পর্বে খেলবে। গতকাল পর্যন্ত আট গ্রুপেই প্রতিটি দল দু’টি করে ম্যাচ খেলেছে। এতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ও সম্ভাব্য তিন রানার্স আপের হিসেব-নিকেশ চলছে নানা দেশের ফুটবলাঙ্গনে।
বাংলাদেশ খেলছে সর্বশেষ এইচ গ্রুপে। এই গ্রুপে সাবেক চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ কোরিয়া থাকলেও টেবিলে সুবিধানজক অবস্থানে বাংলাদেশেই। বাংলাদেশ ও কোরিয়া দুই দলেরই সমান ৬ পয়েন্ট। গোল ব্যবধানও সমান ১০। আগামীকালের ম্যাচ যদি ড্র হয় তাহলে বাংলাদেশই এইচ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হবে।
কারণ টুর্নামেন্টের বাইলজ অনুযায়ী, একাধিক দলের সমান পয়েন্ট হলে হেড টু হেড বিবেচনায় আসবে। কাল ড্র হলে হেড টু একই থাকছে। এরপর গ্রুপের মধ্যে গোল ব্যবধান সেটাও সমান। তখন বাইলজের ৭.২.২.৬ ধারা অনুযায়ী বেশি গোলের হিসেব হবে। বাংলাদেশ দুই ম্যাচে করেছে ১১ গোল আর কোরিয়া ১০। এতে বাংলাদেশ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে।
দক্ষিণ কোরিয়া নারী ফুটবলে বড় পরাশক্তি। গতকাল স্বাগতিক লাওসের বিপক্ষে স্বাভাবিক দিন যায়নি তাদের। মাত্র ১-০ গোলে কষ্টার্জিত জয় পেয়েছে তারা। বাংলাদেশ লাওস যাওয়ার আগে এমনকি লাওসে গিয়েও কোরিয়ার বিপক্ষে ন্যূনতম ব্যবধানের পরাজয়ের কথাই চিন্তা করেছিল। কাল কোরিয়ার বিপক্ষে হারলেও বাংলাদেশের সুযোগ থাকছে মূল পর্বে খেলার। তখন আট গ্রুপের মধ্যে সেরা তিন রানার্স আপ হতে হবে। এজন্য অবশ্য অন্য গ্রুপগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।
আট গ্রুপের মধ্যে ডি গ্রুপ সেরা রানার্স আপের দৌড় থেকে ইতোমধ্যে ছিটকে গেছে। কারণ এই গ্রুপে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে থাকা দলের পয়েন্ট মাত্র ৪। ভারত ও মিয়ানমারে মধ্যে শেষ ম্যাচ। ফলে এই গ্রুপের রানার্স আপ দলের ৬ পয়েন্ট হওয়ার সুযোগ নেই। যেখানে ইতোমধ্যে ৬ পয়েন্টই রয়েছে পাঁচ দলের। ফলে ডি গ্রুপ বাদ দিয়ে অন্য সাত গ্রুপের মধ্যেই মূলত সেরা তিন রানার্স আপ হওয়ার লড়াই চলবে।
বর্তমান পয়েন্ট টেবিল অনুযায়ী ৬ পয়েন্ট নিয়ে রানার্স আপ পজিশনে রয়েছে চাইনিজ তাইপে (সি গ্রুপ +৩), লেবানন (ই গ্রুপ +২), ইরান (এফ গ্রুপ +৫),জর্ডান (জি গ্রুপ +১১),দক্ষিণ কোরিয়া (এইচ গ্রুপ +১০)। গোল ব্যবধানে কোরিয়া ও জর্ডান খানিকটা সুবিধাজনক অবস্থানে। কোরিয়া আগামীকাল জিতলে আর জটিল হিসেবে পড়তে হবে না। তবে বাংলাদেশকে তখন কঠিন সমীকরণে থাকতে হবে।
আগামীকাল কোরিয়ার বিপক্ষে ১ গোলের ব্যবধানে হারলে গোল ব্যবধান থাকবে +৯। বেশি গোলের ব্যবধানে হারলে গোল ব্যবধান কমবে। অন্য গ্রুপগুলোর মধ্যে তিনটি রানার্স আপ দলের পয়েন্ট ৬ ও গোল ব্যবধান বাংলাদেশের চেয়ে বেশি হলে তখন বাংলাদেশের খেলার সুযোগ থাকবে না। পয়েন্ট টেবিলে বর্তমান অবস্থান কিংবা বাস্তবতার বিচারে বাংলাদেশ আট গ্রুপের মধ্যে সেরা তিনে থাকা অনেকটাই নিশ্চিত। এরপরও খেলার মাঠে নানা অঘটন ও জটিল হিসাব-নিকাশ থেকে যায়।
এ গ্রুপে উত্তর কোরিয়া ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আর নেপাল ৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে। উত্তর কোরিয়া ও নেপালের মধ্যে শেষ ম্যাচ। এই ম্যাচে কোরিয়াই স্পষ্ট ফেভারিট। এরপরও নেপাল ড্র করলে সেরা রানার্স আপের দৌড়ে থাকতে পারবে না কারণ তাদের পয়েন্ট দাড়াবে পাঁচ। নেপাল কোরিয়াকে হারালে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে। সেক্ষেত্রে কোরিয়া ৬ পয়েন্ট নিয়েও সেরা তিন রানার্স আপ হতে পারবে কারণ তাদের গোল ব্যবধান এখন ২৫। সেটা নেপালের কাছে অঘটনবশত হারলে ২৩-২৪ হতে পারে।
বি গ্রুপে একটু নাটকীয়তা রয়েছে। ছয় পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ভিয়েতনাম। তাদের শেষ ম্যাচ কিরগিজের সঙ্গে। এই ম্যাচেও ভিয়েতনাম ফেভারিট। এরপরও কিরগিজ জিতলে তখন দুই দলের সমান ৬ পয়েন্ট হলেও হেড টু হেডে কিরগিজ গ্রæপ চ্যাম্পিয়ন হবে। তখন ৬ পয়েন্ট ও ১০/৯ (১/২ গোল পরাজিত হিসেব করে) গোল ব্যবধান নিয়ে সেরা রানার্স আপের দৌড়ে থাকবে ভিয়েতনাম।
সি গ্রুপে অস্ট্রেলিয়া ও চাইনিজ তাইপে দুই দলেরই সমান ৬ পয়েন্ট। দুই দলের মধ্যকার শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া জিতলে চাইনিজ তাইপের গোল ব্যবধান ৭ থেকে আরো কমবে। আবার ড্র হলে তখন দুই দলের সমান ৭ পয়েন্ট দাঁড়াবে। সেক্ষেত্রে তারা এগিয়ে থাকবে। যদিও বাস্তবতার বিচারে অস্ট্রেলিয়াই এগিয়ে রয়েছে।
ই গ্রুপে লেবানন ও চীনের সমান ৬ পয়েন্ট। চীনই স্বাভাবিকভাবে ফেভারিট। চীন জিতলে লেবাননের গোল ব্যবধান +২ থেকে আরো কমবে। আর লেবানন জিতে গেলে চীনের গোল ব্যবধান ১৩ থেকে কমে ১০ এ আসলেও বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকবে। বাস্তবতার বিচারে চীনই এগিয়ে থাকবে গ্রুপ সেরা হতে। এফ গ্রুপেও একই পরিস্থিতি জাপান ও ইরানের।
সেই তুলনায় জি গ্রুপে খানিকটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ জর্ডান ও উজবেকিস্তান দুই দলেরই সমান ৬ পয়েন্ট ও গোল ব্যবধান যথাক্রমে ১১ ও ১৬। প্রায় সমশক্তি দলের ম্যাচটি ড্র হলে জর্ডান ১১ গোল ব্যবধানে সেরা রানার্স আপ হওয়ার দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে থাকবে। জর্ডান-উজবেকিস্তান লড়াইয়ে জয়-পরাজয় হলেও পরাজিত দলের ৬ পয়েন্ট ও গোল ব্যবধান দুই দলেরই ১০ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। জি গ্রুপের রানার্স আপ দল যাচ্ছে এটা নিশ্চিতই।
এমকে/টিকে