রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনা নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। তবে ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা এককাট্টা হয়ে জোর দিয়ে বলেছেন, যেকোনো আলোচনায় কিয়েভকে অন্তর্ভুক্ত করতেই হবে।
‘ইউক্রেনে শান্তির পথ ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে নির্ধারণ করা যাবে না’—এমনটাই বলা হয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড ও ইউরোপীয় কমিশনের নেতৃবৃন্দের একটি যৌথ বিবৃতিতে।
এই বিবৃতি এমন সময় এসেছে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাস্কায় শুক্রবার এক বৈঠকে বসবেন; যার উদ্দেশ্য ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে একটি সমাধান খোঁজা।
ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে আলোচনার ঘোষণার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে করা যেকোনো সিদ্ধান্ত ‘মৃত সিদ্ধান্ত’ হবে।
শনিবার রাতে হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা জানান, ট্রাম্প পুতিন ও জেলেনস্কি উভয়কে নিয়ে একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে রাজি, তবে বর্তমানে শুধু পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা আছে, এটি রাশিয়ার অনুরোধেই ঠিক হয়েছে।
ট্রাম্প এর আগে বলেছিলেন, তিনি ‘প্রথমে রাশিয়ার সঙ্গে শুরু করতে চান।’ তবে তিনি এটিও বলেছেন, ‘উভয় পক্ষকে নিয়ে একটি ত্রিপাক্ষিক আলোচনা আয়োজনের সম্ভাবনাও আছে।’
কিন্তু পুতিন এতে সম্মত হবেন কি না তা পরিষ্কার নয়। ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে জেলেনস্কির সঙ্গে তার মুখোমুখি কোনো বৈঠক হয়নি।
ট্রাম্প বলেন, আলোচনার অংশ হিসেবে কিছু ‘ভূখণ্ড অদলবদল’ হতে পারে, যাতে উভয় পক্ষই লাভবান হয়।
এতে জেলেনস্কি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলছেন, ‘আমরা রাশিয়ার অপরাধের পুরস্কার দিতে পারি না।
ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে নেওয়া যেকোনো সিদ্ধান্ত শুধু আমাদের বিরুদ্ধে নয়, শান্তির বিরুদ্ধেও।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাশিয়া বারবার ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডকে বিনিময়ের পণ্য বানাতে চাইছে, যার একমাত্র উদ্দেশ্য, আরো সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে ভবিষ্যতে আবার যুদ্ধ শুরু করা।
ইউরোপীয় উদ্বেগ ও প্রতিক্রিয়া
সিবিএস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউস ইউরোপীয় দেশগুলোকে বোঝাতে চাইছে, রাশিয়ার হাতে পুরো ডনবাস ও ক্রিমিয়া ছেড়ে দেওয়ার চুক্তি মেনে নিতে।
এই খবরে ইউরোপীয় নেতারা ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাদের শনিবার রাতে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক সীমান্ত শক্তির মাধ্যমে পরিবর্তন করা যায় না। ইউক্রেন তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণের পূর্ণ স্বাধীনতা রাখে।’
তারা ইউক্রেনকে কূটনৈতিক, সামরিক ও আর্থিক সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এবং বলেন, ‘ইউরোপের নিরাপত্তার স্বার্থেই একটি কূটনৈতিক সমাধান অপরিহার্য।’
ম্যাক্রোঁর কড়া বার্তা
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছেন, ‘ইউরোপকেও এই সমাধানে অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক, কারণ এটা তাদের নিরাপত্তার সঙ্গেও সরাসরি জড়িত।’
জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়াকে আবার ধোঁকা দিতে দেওয়া যাবে না তিনি ম্যাক্রোঁকে ফোনে বলেন, ‘আমরা সবাই একটি প্রকৃত যুদ্ধের অবসান এবং ইউক্রেন ও ইউরোপের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা কাঠামো চাই।’
ভিপি ভ্যান্সের কূটনৈতিক মিশন
শান্তি আলোচনা ঘিরে উত্তেজনার মধ্যেই মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে.ডি. ভ্যান্স শনিবার যুক্তরাজ্য সফরে যান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এবং জেলেনস্কির দুই ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন।
জেলেনস্কির অফিসপ্রধান আন্দ্রেই ইয়ারমাক বলেন, ‘শান্তি শুধু তখনই স্থায়ী ও বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে, যদি ইউক্রেন আলোচনায় থাকে।’
সূত্র: বিবিসি
এমআর/টিকে