দেব আনন্দ, রাজ কাপুর, যশ চোপড়া ও রাজেশ খান্নার মতো কিংবদন্তি শিল্পীদের সঙ্গে পর্দা শেয়ার করা অচলা সাচদেবের কর্মজীবন ছিল একেবারেই উজ্জ্বল। ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’-তে কাজলের ঠাকুমার চরিত্রে তার অভিনয় আজও দর্শকের মনে গেঁথে আছে।
১৯৬৫ সালের ওয়াক্ত ছবির জনপ্রিয় গান ‘অ্যা মেরি জোহরা জাবী’–এর চিত্রায়ণও হয়েছিল তার ওপর। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মা, ঠাকুমা কিংবা প্রবীণ নারীর চরিত্রে অভিনয় করে গিয়েছেন তিনি।
এমনকি ২০০০-এর দশকের শুরুতেও করণ জোহরের ‘কাভি খুশি কাভি গাম’-এ তাকে দেখা যায়।
১৯২০ সালে পেশোয়ারে জন্মগ্রহণ করেন অচলা সাচদেব। ১৯৫০-এর দশকে কর্মজীবন শুরু করেও এত দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে যাওয়া সত্যিই বিরল। তবে তার জীবনের শেষ অধ্যায়টা সুখের ছিল না।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি পুনের একটি দুই বেডরুমের ফ্ল্যাটে একা থাকতেন, কেবল জনসেবা ফাউন্ডেশনের একজন পরিচারক তার দেখাশোনা করতেন। দুই সন্তানই তার সঙ্গে থাকা তো দূর, তার খোঁজ পর্যন্ত নিতেন না। ছেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং মেয়ে অন্যত্র আলাদা থাকতেন।
২০১২ সালে ৯১ বছর বয়সে পুনেতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অচলা।
মৃত্যুর আগে তিনি নিজের বাড়িটি এনজিওর নামে দান করেন, যেখান থেকে অচলা সাচদেব ইনস্টিটিউট অফ এডুকেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই প্রতিষ্ঠান আদিবাসী অঞ্চলের মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও রোগী সেবার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
জীবনের শেষ কয়েক মাস তিনি পুনে হাসপাতাল ও গবেষণা কেন্দ্রে ভর্তি ছিলেন। তার কর্মজীবনে ছিল মেরা নাম জোকার, জুলি, হকিকত, হিমালয় কি গড ম্যায়, এমনকি ইংরেজি ছবি নাইন আওয়ার্স টু রামা এবং দ্য হাউসহোল্ডার-এর মতো ছবি। তার শেষ সিনেমা ছিল না তুম জানে না হাম।
১৯৫০-এর দশকে মাদার, রাহী, ফুটপাত, চাঁদনী চক, চাকরি, আজাদ, মিস মেরি এবং আদালত-এর মতো প্রশংসিত ছবিতে অভিনয় করলেও, ১৯৬৫ সালের ওয়াক্ত-এর পর থেকেই তার ক্যারিয়ারে মোড় আসে। শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
১৯৭০-এর দশকে ব্রিটিশ নাগরিক ক্লিফোর্ড ডগলাস পিটার্সকে বিয়ে করে পুনেতে বাস করতে শুরু করে। এই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন পরিচালক যশ চোপড়া। তবে স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি একেবারেই একা হয়ে যান।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার তথ্যমতে, জীবনের শেষ দিকে তিনি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির পরিচিতজনদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তেমন সাড়া পাননি। মৃত্যুর সময় কেবল অমিতাভ বচ্চন ও একতা কাপুরই তাকে শ্রদ্ধা জানান। ছেলে জ্যোতিন আমেরিকা থেকে উড়ে এসে কয়েকজন আত্মীয়ের সঙ্গে শেষকৃত্যে অংশ নেন।
এসএন