যুক্তরাজ্যে বসবাসরত কয়েকটি দেশের নাগরিকদের কোনও অপরাধের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার করা হলে, তাদের আপিল শুনানির আগেই নিজ দেশে নির্বাসনের নিয়ম রয়েছে। এবার সেই সব দেশের তালিকায় ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করেছে ব্রিটেনের সরকার। এই সংক্রান্ত ১৫টি দেশের নতুন তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে ভারতের নামও। যদিও এই তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশ বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তানের নাম নেই। এর ফলে বাংলাদেশি-পাকিস্তানিরা ছাড় পেলেও ভারতীয়দের বিচারের আগেই ফিরতে হবে নিজ দেশে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র দপ্তর ‘‘এখন বহিষ্কার, পরে আপিল’’ প্রকল্পে নতুন করে ১৫টি দেশ যুক্ত করায় অপরাধীদের বহিষ্কারের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানির আগেই আরও অধিকসংখ্যক বিদেশি অপরাধীকে প্রত্যাবাসন করতে পারবে।
স্বরাষ্ট্র দপ্তরের নীতি অনুযায়ী, কোনও ভারতীয় নাগরিক ব্রিটেনে অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে আপিল শুনানির আগেই তাকে প্রথমে নির্বাসিত করা হবে। অর্থাৎ, নির্বাসন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করে সেই ব্যক্তি নির্বাসন বিলম্বিত করতে পারবেন না এবং তিনি ব্রিটেনে থাকতে পারবেন না। যুক্তরাজ্য সরকার বলছে, কারাগারে ওপর চাপ কমানো এবং অপরাধ সম্পর্কে জনসাধারণের উদ্বেগ প্রশমনই এই নীতির লক্ষ্য।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, তালিকায় থাকা দেশগুলোর নাগরিকরা ব্রিটেনে কোনও অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে প্রথমে তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। তারপর ওই ব্যক্তি সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে নির্বাসিত ব্যক্তি ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে নিজ দেশ থেকে বহিষ্কারের বিরুদ্ধে যে কোনও আপিল শুনানিতে অংশ নিতে পারবেন। তবে বহিষ্কারের বিষয়টি বিবেচনা করার আগে সন্ত্রাসী, খুনি এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ব্রিটেনে তাদের সাজাও ভোগ করতে হবে।
এই নীতি অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে অপরাধ করা বিদেশিদের আপিল করার সুযোগ পাওয়ার আগেই নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যাবে। কানাডা, ভারত ও অস্ট্রেলিয়াসহ নতুন যুক্ত হওয়া দেশগুলো মিলিয়ে মোট দেশের সংখ্যা ২৩টিতে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতে আরও কিছু দেশ এই তালিকায় যুক্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র দপ্তর।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার বলেছেন, এই কর্মসূচি সম্প্রসারণের উদ্দেশ্য হলো বিদেশি অপরাধীদের ‘‘আমাদের অভিবাসন ব্যবস্থার অপব্যবহার’’ রোধ এবং তাদের দ্রুত নির্বাসন। যেসব বিদেশি নাগরিকের দাবি খারিজ হবে, তারা যুক্তরাজ্য থেকে বহিষ্কৃত হবেন এবং নিজ দেশ থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে আপিল শুনানিতে অংশ নিতে পারবেন।
• তালিকায় আছে কোন কোন দেশ
• কানাডা
• ভারত
• অস্ট্রেলিয়া
• অ্যাঙ্গোলা
• বতসোয়ানা
• ব্রুনেই
• বুলগেরিয়া
• গায়ানা
• ইন্দোনেশিয়া
• কেনিয়া
• লাতভিয়া
• লেবানন
• মালয়েশিয়া
• উগান্ডা
• জাম্বিয়া
এর আগে, কুপার বলেছিলেন, অপরাধীরা আপিল প্রক্রিয়া চলার সময় ‘‘মাসের পর মাস বা এমনকি বছরের পর বছর’’ ধরে যুক্তরাজ্যে থাকতে পারতেন। তিনি বলেন, এটা বন্ধ করতে হবে। যারা আমাদের দেশে অপরাধ করবে, তাদের আইনি ব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ দেওয়া যাবে না। তাই আমরা নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনছি এবং স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছি—আমাদের আইনকে সম্মান জানাতে হবে এবং তা কার্যকর হবে।
বহিষ্কারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তা দেশটির কারাগারে অতিরিক্ত চাপ কিছুটা লাঘব করবে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির মন্ত্রীরা। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের বিভিন্ন কারাগার বর্তমানে প্রায় পূর্ণ ধারণক্ষমতায় চলছে। চলতি বছরের জুনে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে বিদেশি বন্দির সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৭৭২ জন; যা মোট বন্দির ১২.৩ শতাংশ। স্কটল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ড তাদের নিজস্ব কারা ব্যবস্থা পরিচালনা করে।
জাতীয়তার দিক থেকে ২০২৫ সালের জুনে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে সর্বাধিক বন্দি ছিলেন আলবেনিয়ার নাগরিক। দেশটির ১ হাজার ১৯৩ জন নাগরিক ব্রিটেনের কারাগারে বন্দি আছেন। এরপর আয়ারল্যান্ডের ৭০৭, ভারতের ৩২০ ও পাকিস্তানের ৩১৭ নাগরিক।
নতুন যুক্ত হওয়া ১৫ দেশের বন্দি সংখ্যা ৭৭৪ জন; যা বিদেশি বন্দিদের মোট সংখ্যার প্রায় ৭ শতাংশ । নতুন দেশগুলোর মধ্যে কেবল ভারতীয়রাই সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষে আছেন।
ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি সরকারের এই সিদ্ধান্তে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, যুক্তরাজ্য আরও অধিকসংখ্যক দেশে অপরাধীদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা বৃদ্ধির বিষয়ে কাজ করছে।
নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে যাদের নির্দিষ্ট মেয়াদের কারাদণ্ড দেওয়া হবে, তাদের অবিলম্বে বহিষ্কার ও পুনরায় যুক্তরাজ্যে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। দেশটির বিচার বিষয়ক মন্ত্রী শাবানা মাহমুদ বলেন, যারা আমাদের আতিথেয়তার অপব্যবহার করবে এবং আইন ভাঙবেন, তাদের ‘বিদায়’ জানানো হবে। ব্রিটেনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে বিদেশি অপরাধীরা মোট কারাগারের প্রায় ১২ শতাংশ দখল করে আছেন। যেখানে একজন বন্দির পেছনে সরকারের বার্ষিক গড় ব্যয় হয় প্রায় ৫৪ হাজার পাউন্ড।
সূত্র: বিবিসি, হিন্দুস্তান টাইমস।
এসএন