দেশ-মহাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রস্তুতি হিসেবে সফর করছে ইউরোপীয় ক্লাবগুলো। এমন ১৫টি ক্লাব সাম্প্রতিক সময়ে এক লাখ ৮৩০৯৫ কিলোমিটার ভ্রমণ করেছে বলে জরিপ চালিয়েছে ব্রাজিলিয়ান সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবো’।
তাদের দাবি, আকাশপথে ক্লাবগুলোর লম্বা ভ্রমণের কারণে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ কেজি কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণে ভয়াবহ পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইংলিশ ক্লাব আর্সেনাল প্রাক-মৌসুমের দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে স্পেন ও সিঙ্গাপুরে ভ্রমণ করেছে। এরপর হংকং হয়ে তারা ইংল্যান্ডে ফিরে। সব মিলিয়ে তাদের ভ্রমণ ছিল ২৪,৬৫৭ কিলোমিটার।
ইউরোপ জায়ান্টদেরও গন্তব্য ছিল মূলত এশিয়া মহাদেশ। অবশ্য ১৫ ধনী ক্লাবের সবগুলোই আবার দূরপাল্লার ভ্রমণ করেছে তা নয়। সর্বশেষ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৭.৬ বিলিয়ন ব্রাজিলিয়ান ডলার রাজস্ব আয় করা রিয়াল মাদ্রিদ কেবল অস্ট্রিয়ার বিমানে চড়েছে। বায়ার্ন মিউনিখ, চেলসি ও পিএসজির মতো ক্লাব আবার এই সময়ে দেশের বাইরে ভ্রমণ করেনি।
প্রাইভেট বিমান বা বাণিজ্যিক বিমান, যে কোনো উড়োজাহাজই আকাশে উড়তে ব্যাপক জ্বালানি পোড়ায়। এই জ্বালানি পোড়ানোর ফলে তৈরি হয় কার্বন ডাই-অক্সাইড, যা অন্যতম ক্ষতিকর গ্রিনহাউজ গ্যাস। ফুটবল ক্লাবগুলো পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলার অন্যতম বড় কারণ এটি। ক্লাইমেট অবজারভেটরির গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ অনুমান ও অপসারণ ব্যবস্থার সমন্বয়ক ডেভিড সাই জানিয়েছেন, ‘বিমান জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে গ্রিনহাউজ গ্যাস তৈরি করে বিমান কেরোসিন।
এই বিমানগুলো থেকে নির্গত কার্বন বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বড় অবদান রাখে।‘
প্রাক-মৌসুমের প্রস্তুতিতে ক্লাবগুলো কেন এই ভ্রমণ করে এমন প্রশ্নও এসে যায়। এর উত্তরও অজানা নয়- মূলত বেশি অর্থ পাওয়ার লক্ষ্যেই এসব আয়োজন। বিভিন্ন দেশে সফর ক্লাবগুলোর আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। যেমন- ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ২০২৪/২৫ মৌসুম-পরবর্তী মালয়েশিয়া সফর থেকে প্রায় ১ কোটি ইউরো আয় করেছে। বার্সেলোনা এবার এশিয়ায় ১.৫ কোটি ইউরো আয় করেছে। নতুন বাজারে পৌঁছানো ও ব্র্যান্ডকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করাই তাদের লক্ষ্য। ক্লাবটি জানিয়েছে, জাপানে তাদের ৩.৬ মিলিয়ন এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ২.৩ মিলিয়ন সমর্থক আছে।
এদিকে, ক্লাবগুলোর কারণে ইতিমধ্যেই জলবায়ু সংকট তৈরি হয়েছে। তাই ‘কার্বন ফুটপ্রিন্ট’ কমাতে তাদের দায়িত্ব নিতে হবে বলে দাবি ফুটবল ও পরিবেশের সম্পর্ক নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা। বেসরকারি সংস্থা ‘ফসিল ফ্রি ফুটবল’ -এর কর্মী পিটার ক্রিস্প বলেন, ‘ক্লাবগুলোকে প্রাক-মৌসুম সূচি স্থানীয়ভাবে করতে হবে। কাছাকাছি এলাকায় খেললে খেলোয়াড়দের ওপর চাপ কমবে এবং দরিদ্র ক্লাবগুলোর জন্যও উপকারী হবে।’