আমেরিকার যে দ্বীপ থেকে হেঁটেই যাওয়া যায় রাশিয়ায়!

আলাস্কার অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত দুটি যমজ দ্বীপ লিটল ডায়োমিড (যুক্তরাষ্ট্রের অংশ) ও বিগ ডায়োমিড (রাশিয়ার অংশ) একে অপরের থেকে মাত্র ২.৪ মাইল দূরে। শীতকালে বরফে জমে যাওয়া সাগর পার হয়ে এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে হাঁটা সম্ভব হলেও আইনত এই যাতায়াত নিষিদ্ধ। দুই দ্বীপের মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক তারিখরেখা (International Date Line) চলে গেছে। ফলে লিটল ডায়োমিড ও বিগ ডায়োমিডকে স্থানীয়রা ডাকেন “ইয়েস্টারডে অ্যান্ড টুমরো আইল্যান্ডস”।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আলাস্কার আংকারেজে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক বৈঠককে ঘিরে এই দ্বীপদ্বয়ের ইতিহাস ও ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব আবার আলোচনায় এসেছে। উল্লেখ্য, আলাস্কা ১৭৯৯ থেকে ১৮৬৭ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার উপনিবেশ ছিল এবং মাত্র ৭.২ মিলিয়ন ডলারে যুক্তরাষ্ট্র সেটি কিনে নেয়।

একসময় দুই দ্বীপে ইনুপিয়াত ও ইউপিক আদিবাসীরা বসবাস করতেন এবং তারা মুক্তভাবে নৌকা, কুকুরের স্লেজ বা হাঁটাপথে যাতায়াত করতেন। কিন্তু ১৯৪৮ সালে ঠান্ডা যুদ্ধ শুরুর সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন বিগ ডায়োমিডের অধিবাসীদের সাইবেরিয়ায় সরিয়ে নেয় এবং দুই দ্বীপের মাঝখানে “আইস কার্টেন” নামক সীমান্ত তৈরি হয়। এতে একই পরিবারের সদস্যরা দুই দেশে বিভক্ত হয়ে যায়।

১৯৮৮ সালে “ফ্রেন্ডশিপ ফ্লাইট”-এর মাধ্যমে আলাস্কার নোম থেকে একটি চার্টার ফ্লাইট রাশিয়ার প্রোভিদেনিয়াতে গিয়ে দুই দেশের মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন পর যোগাযোগ পুনঃস্থাপিত হয়। এরপর থেকে দুই দেশের মানুষ ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও ব্যবসায়িক বিনিময়ে অংশ নেয়, তবে ২০০০ সালের পর পুতিন ক্ষমতায় আসার পর সম্পর্ক আবার শীতল হয়ে পড়ে।

বর্তমানে বিগ ডায়োমিডে কেবল রাশিয়ান বর্ডার গার্ডরা অবস্থান করছে, আর লিটল ডায়োমিডে প্রায় ৮০ জন ইনুপিয়াত জনগোষ্ঠী বসবাস করে। তারা মাছ ধরা, সীল ও ওয়ালরাস শিকার এবং পাখি ধরার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। দ্বীপে নিয়মিত হেলিকপ্টারে ডাক ও কিছু পণ্য সরবরাহ করা হলেও তীব্র ঝড় ও কুয়াশার কারণে যোগাযোগ প্রায়ই ব্যাহত হয়।

এখন লিটল ডায়োমিডের বাসিন্দারা নিজেদের একদিকে রাশিয়ার আত্মীয়দের সাথে ইতিহাসগতভাবে যুক্ত মনে করলেও, অন্যদিকে তারা রাশিয়ার সামরিক গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের তথ্য সরবরাহ করে থাকে। আর্কটিক অঞ্চলে বরফ গলে যাওয়ায় সম্ভাব্য নতুন শিপিং রুট তৈরি হওয়ায় এ দ্বীপগুলোর কৌশলগত গুরুত্ব আরও বেড়েছে।

আইআর/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ইউক্রেনের উচিত পুতিনের সঙ্গে চুক্তি করা: ট্রাম্প Aug 17, 2025
img
স্বৈরাচারের পুনর্জাগরণকে প্রতিহত করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ: তারেক রহমান Aug 17, 2025
img
জন্মাষ্টমীতে পূজা করে ফের ট্রলের শিকার নুসরাত জাহান Aug 17, 2025
মালিবাগে অগ্নিকাণ্ড; যা জানালো প্রত্যক্ষদর্শীরা Aug 17, 2025
চীনের সহায়তায় ইরানের প্রতিরক্ষা জাগরণ, উদ্বেগে ইসরাইল Aug 17, 2025
পদ টিকিয়ে রাখতে স্ত্রীকে গার্লফ্রেন্ড পরিচয় দিতেন ছাত্রদল নেতা Aug 17, 2025
img
নিধি আগারওয়ালের জন্মদিনে 'দ্য রাজা সাব' টিমের উষ্ণ শুভেচ্ছা Aug 17, 2025
img
ব্যাটিং বিপর্যয়ে হারল বাংলাদেশ Aug 17, 2025
img
মানুষ এখন আপনাদের ফাঁকিবাজি ভালোভাবেই বুঝতে পারে : বাঁধন Aug 17, 2025
img
৩ ফরম্যাটে এক অধিনায়ক নীতিতে ফিরছে টিম ইন্ডিয়া! Aug 17, 2025
img
শিবাকার্থিকেয়ানের মতে ইয়াশ হবে রাবণ চরিত্রের জন্য একদম উপযুক্ত Aug 17, 2025
img
দল ঘোষণা করল বিসিবি, নেই সোহান-বিজয় Aug 17, 2025
img
সেন্সর বোর্ডের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে 'পরম সুন্দরী' টিম Aug 17, 2025
img
কনসার্ট বাতিলে আর্টসেলের কাছে ১৪ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি Aug 17, 2025
img
আল্লু অর্জুন নাকি রণবীর কাপুর! কে থাকবে ‘ডিস্কো ড্যান্সার ২’ তে Aug 17, 2025
img
নিউইয়র্কে রেস্তোরাঁয় বন্দুক হামলা, নিহত অন্তত ৩ Aug 17, 2025
img
ক্ষমতা পালাবদলের সঠিক পদ্ধতি আমরা ৫৪ বছরেও পাইনি : শিবির সেক্রেটারি Aug 17, 2025
img
পাওয়ান কল্যাণের বিপরীতে ‘ওজি’-তে প্রিয়াঙ্কা আরুল মোহন Aug 17, 2025
img
অভিনয় নয়, এবার প্রযোজক রূপে অজয় দেবগন Aug 17, 2025
img
রাজধানী ঢাকায় আওয়ামী লীগের আরও ৫ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার Aug 17, 2025