বিদেশে বাংলাদেশের সব কূটনৈতিক মিশন, কনস্যুলেট, কূটনীতিকদের অফিস ও বাসভবন থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি সরানোর নির্দেশনা দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে ৮০টির মধ্যে ৭০টি মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানো হয়েছে। তবে, কেন বা কি কারণে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর এই নির্দেশনা, তা নিয়ে স্পষ্ট করে কেউ কিছু বলতে পারেনি।
জানা যায়, গত ১১ই আগস্ট রাষ্ট্রীয় সফরে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় যান পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রের দাবি, পরিবেশ উপদেষ্টা জেনেভায় বাংলাদেশি দূতাবাসে গিয়ে সেখানে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি টানানো দেখতে পান। পরবর্তীতে তিনি বিষয়টি নিয়ে উষ্মাও প্রকাশ করেন। সেখানেই তিনি জানান যে তিনি বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাবেন। সুইজারল্যান্ড সফর শেষে শনিবার দেশে ফিরেছেন পরিবেশ উপদেষ্টা।
তবে রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, জেনেভা দূতাবাসে তিনি রাষ্ট্রপতির কোনো ছবি দেখেননি, কিংবা এ নিয়ে তার সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো কথাও হয়নি।
সাবেক কূটনীতিকেরা বলছেন, রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে সরকারি আদেশে রাষ্ট্রপতির ছবি ব্যবহার করা হতো। সেই হিসেবে আনুষ্ঠানিক কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় এতদিন কোনো কোনো দূতাবাসে রাষ্ট্রপতির ছবি ছিল।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবির বলেন, কার ছবি কোথায় টানাতে হবে সেই নির্দেশ কেবিনেট থেকে এটি ইস্যু করা হয়। সেরকম নির্দেশনার ভিত্তিতেই হয়তো ছবি সরানো হয়েছে। সরকার যে কোনো সময় যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতেই পারে।
মৌখিকভাবে হঠাৎ এই নির্দেশনা কেন দেয়া হয়েছে, এ নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র সচিব ও মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের সাথে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ চেষ্টা করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। অফিসে ছবি ব্যবহারে আইনে কি বলা আছে?
রাষ্ট্রপতির ছবি টানানো নিয়ে আইনি বিধান কি আছে, সেটি নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠছে মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি সরানো নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর।
বাংলাদেশের সংবিধানের চার অনুচ্ছেদে সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রধান ও শাখা কার্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ব্যবহারের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এর বাইরে সরকার প্রধানের ছবি ব্যবহার করা নিয়ে কোনো আইন, বিধি বা সাংবিধানিক নির্দেশনা শেখ হাসিনার শাসনামলে হয়নি।
তবে, ২০০২ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রীদের কার্যালয়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস ও সব স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতি কিংবা ছবি টাঙানোর নির্দেশ দেয়া হয়।
ওই নির্দেশ মোতাবেক সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও পরবর্তীতে শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার হয়ে আসছিল।
পাঁচই আগস্টের পট পরিবর্তনের পর অবশ্য সরকার প্রধান হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেননি।
এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এরইমধ্যে ৭০টি মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানো হয়েছে। বাকি মিশনগুলো থেকেও রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগে থেকে এই ছবি না রাখার কোনো নির্দেশনা ছিল না। তবে রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দেয়ার ‘গুঞ্জন’ উড়িয়ে দিয়েছে সূত্রটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদেশে বাংলাদেশের দু’টি মিশন থেকে জানানো হয়, পরশু (শুক্রবার) সন্ধ্যায় তারা এমন নির্দেশনা পেয়েছেন। আর ছবি সরানোর বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক চিঠি বা ই-মেইল না দিলেও টেলিফোনে অঞ্চলভিত্তিক কয়েকজন রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারকে এই নির্দেশনা দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর যখন ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসে তখন বড় মিশনগুলো রাষ্ট্রপতির ছবি আগেই সরিয়ে ফেলেছিল। কয়েকটি মিশন না সরানোর কারণে সম্প্রতি মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়।
ইউটি/টিএ