রাষ্ট্রপতির ছবি থাকা না থাকা নিয়ে ব্যস্ত সরকার : রুমিন ফারহানা

বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, রাষ্ট্রপতির ছবি থাকবে কি থাকবে না, সেটা নিয়ে সরকার যত ব্যস্ত, তার চেয়ে যদি বাংলাদেশের ল এন্ড অর্ডার সিচুয়েশনটা ঠিক করার দিকে সরকার মনোযোগী হতো, মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যাপারে সরকার মনোযোগী হতো, তাহলে আমার মনে হয় দেশটা আরেকটু বোধহয় রাইট ট্র্যাকে যেত।

বুধবার (২০ আগস্ট) জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাসুদ কামাল সঞ্চালনায় ‘অন্য মঞ্চে’র অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

রুমিন ফারহানা বলেন, গত এক বছরে রাষ্ট্রকে ঐক্যবদ্ধ রাখা, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা ১৫ বছর যে বিভাজনের চাষ হয়েছে সেটাকে বন্ধ করা, ল এন্ড অর্ডারকে স্থীতিশীল করা, প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা এদিকে মনোযোগ না দিয়ে সরকার অন্যান্য অনেক নিচে গিয়ে ছোট ছোট ব্যাপারে মনোযোগ দিয়েছে। ধরুন, এই যে রাষ্ট্রপতির পোরট্রেটের ব্যাপারটাই ধরুন।

এই পোরট্রেটটি সরানো কেন হলো, আমরা কেউ জানি না। আপনি জানেন না। আমি জানি না, রাজনৈতিক দলগুলো জানে কিনা আমি জানি না। এই যে কেউ না জানলেও চুপে চুপে একটা মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হলো, এটার অর্থটা কি? যদি নো পোর্ট্র্যাট নীতি নিয়ে থাকে তাহলে সেটা প্রজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের জানাও।

তাহলে কারো পোর্ট্রেট থাকবে না, ওয়েল, এনাফ। আর কোনো পলিটিক্যাল পার্টি যদি সেটাকে সাপোর্ট করে তাহলে আমি আশা করব, সেই পলিটিক্যাল পার্টিও যখন ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যদি যায় তাহলে তারাও নো পোর্ট্রেট নীতি নেবে। ডেফিনেটলি আমরা সেটা আশা করব।

তিনি বলেন, আমরা এখন পিস মিল বেসিসে কাজ করছি।

মানে যেটা সামনে আসছে ওটা নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু সরকারের আসল যে গুরু দায়িত্বটা ছিল, ৫ আগস্ট ২০২৪ সাল থেকে আজকে ২৫ সালের আগস্ট মাস অলমোস্ট শেষ হতে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত সেই আসল জায়গাগুলোতে আমরা হাত দিতে দেখলাম না। রাষ্ট্রপতির ছবি থাকবে কি থাকবে না, সেটা নিয়ে সরকার যত ব্যস্ত, তার চেয়ে যদি বাংলাদেশের ল এন্ড অর্ডার সিচুয়েশনটা ঠিক করার দিকে সরকার মনোযোগী হতো, যদি মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যাপারে সরকার মনোযোগী হতো, যদি একজন ভালো উপদেষ্টাকে স্বরাষ্ট্রের দায়িত্ব দেওয়া হতো।

যদি নির্বাচন সামনে রেখে কিভাবে তারা রোডম্যাপ তৈরি করবে সেটা নিয়ে মানুষের সামনে একটা ক্লিয়ার পিকচার দিত।

যদি রাজনৈতিক পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর মধ্যে ঐক্যমতের ব্যাপারে আরেকটু জোর দিত এবং যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের ব্যাপারে একটা ফয়সালা করতে পারত। তাহলে আমার মনে হয়, দেশটা আরেকটু বোধহয় রাইট ট্র্যাকে যেত।

তিনি আরো বলেন, আপনি যদি সাধারণ মানুষের দিকে কান পাতেন, যারা কোনো পলিটিক্স করে না, তারা কিন্তু ভীত এবং তারা বলে, দ্রুত একটা পলিটিক্যাল গভমেন্ট আসুক। সেই গভমেন্ট যেমনই হোক ইজ বেটার দেন আনইলেক্টেড গভমেন্ট। আমরা তো দেখলাম, রাজনৈতিক নেতাদের শাসনও ৫৩ বছর দেখলাম, আবার আমরা অরাজনৈতিক বিশ্ববিখ্যাত অতি উচ্চশিক্ষিত মানুষের শাসনও এই এক বছরে দেখলাম। মানুষ তো তার কম্পেয়ার নিজেরা নিজেদেরটা করতে পারে।

রুমিন ফারহানা বলেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে কিনা এটা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করার অনেক কারণ আছে। নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের প্রত্যাশা অপেক্ষা ও উচ্ছ্বাস আছে। বাংলাদেশের মানুষ ১৭ বছর কোনো ভোট দিতে পারেনি। এত বছর পর একটা নির্বাচন হবে সেটার যে একটা আমেজ চারপাশে থাকার কথা, আমরা কিন্তু সেই আমেজ এখনো লক্ষ্য করছি না। যদিও ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্টই বলেছেন যে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন হবে এবং ফেব্রুয়ারির প্রথম এক সপ্তাহে হবে। প্রথমে বলেছেন প্রথম দিকে, তারপরে বলেছেন, রমজানের আগেই নির্বাচন হবে। মানে মধ্যভাগের মধ্যে নির্বাচন হয়ে যাবে। কিন্তু মানুষ এই কথাটি বিশ্বাস করছে না।

তিনি বলেন, এখন আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, কেন করছে না? করছে না তার অনেকগুলো কারণ আছে। আপনি জানেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া যেটা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো দফায় দফায় বসছে। ঐক্যমতে পৌঁছবার চেষ্টা করছে। কিন্তু অনেকগুলো ব্যাপারে তারা যেমন একমত হয়েছে, আবার বেশ কিছু ব্যাপারে তাদের মধ্যে অনৈক্য খুব স্পষ্ট। এবং কোনো কোনো পলিটিক্যাল পার্টি যদি সেই অনৈক্যকে পুঁজি করে নির্বাচনটিকে পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে, সেখানে খুব একটা অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

তিনি আরো বলেন, আমি আরো খোলাখুলি বলি। ফর এক্সাম্পল, জামায়াত পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চাইছে। এনসিপি এখনো নিবন্ধন পায়নি। অন্যদিকে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই ঘোষণা করেছেন, এনসিপি তার দল। তার দল বলতে তিনি একটি দল তৈরি করতে বলেছেন ছাত্রদের, যার ফলশ্রুতিতে এনসিপি গঠিত হয়েছে। এবং এনসিপির সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যে ঘনিষ্ঠতা সেটা এখন নতুন করে আর বলবার কিছু নাই। কিন্তু এনসিপির নিবন্ধন এখনো হয় নাই।

রুমিন ফারহানা বলেন, আবার জামাত চাইছে, পিআর পদ্ধতির নির্বাচনটি কীভাবে হবে সেটা নিয়েও কিন্তু এখন পর্যন্ত খুব ঐক্যমতে আসা গেছে, এটি বলা যাবে না। আপনি যদি গ্রাউন্ড রিয়েলিটির কথা চিন্তা করেন, মাঠের পরিস্থিতির দিকে তাকান, আপনি দেখবেন, এমন এমন একটা দিন যায় না যেদিন কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ মবের মাধ্যমে কিংবা কোনো না কোনোভাবে মানে পলিটিক্যাল হত্যাকাণ্ড কিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ব্যবসায়ীরা টাকা-পয়সার জন্য হত্যাকাণ্ড কোথাও না কোথাও হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যতটুকু স্মুথ হলে একটা নির্বাচন বাংলাদেশে হতে পারে আমি কখনোই আশা করব না, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা ইংল্যান্ডের মতো বা ফিনল্যান্ডের মতো বা পশ্চিমের দেশগুলোর মতো হবে। তবে বাংলাদেশের মানদণ্ড অনুযায়ী নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেমন হওয়া উচিত তেমন না।

তিনি বলেন, আজকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, ঢাকায় মব কিছুটা কমলেও যদিও উনি মবজাস্টিস শব্দটা বলেছেন, এই জাস্টিস শব্দটা নিয়ে আমার ভীষণ আপত্তি আছে। আমি জাস্টিস বলব না। এই মবের সহিংসতা ঢাকায় কিছুটা কমলেও ঢাকার আশপাশে এবং দেশের অন্যান্য জায়গায় মব কিন্তু চলমান আছে। মানুষের মধ্যে যে একটা ভীতি একটা আশঙ্কা এগুলো দূর হচ্ছে এবং নির্বাচন যত এগিয়ে আসতে থাকবে, তত কিন্তু আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, আমি আপনাকে আরেকটা বাস্তবতা বলি। ধরুন, জামায়াত আর এনসিপিকে যদি আমরা একপাশে সরিয়েও রাখি, মোটামুটি ৩০০টা আসনের প্রতিটি আসনে বিএনপির পাঁচ থেকে ১০ জন নেতা আছে যারা নমিনেশন প্রত্যাশী। যেই মুহূর্তে একজনকে নমিনেশন দেওয়া হবে সেই মুহূর্তে দুইজন তিনজন স্বতন্ত্র দাঁড়িয়ে যাবে। বাকিরা এক ধরনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা সেই জায়গা থেকেও আমরা করছি। সেই জায়গা থেকেও তৈরি হতে পারে। তারপরে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসবে কি আসবে না। এটা নিয়ে কিন্তু দুই রকমের মত আপনি দেখবেন দেশে প্রচলিত আছে। মানে একটা গ্রুপ অব পিপল বলছে যে আওয়ামী লীগ কোনো পলিটিক্যাল পার্টি না। আওয়ামী লীগ হচ্ছে, এমন একটা দল যেটাকে আমরা মাফিয়া বা গ্যাংস্টারের মতো, মানে গ্রুপ অব পিপল যাদের নির্বাচনে আসা না আসায় আসলে কিছু যায় আসে না। কিন্তু আরেকটা মত হচ্ছে যে না, আওয়ামী লীগ পুরাতন রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগকে ছাড়া যদি আপনি নির্বাচনে যান দ্যাট উইল বি রিপিটেশন অব ১৪ অর ২০২৪ টা যদি বাদও রাখি, ১৪ এবং ২৪ এর ইলেকশনের রিপিটেশন হবে।

এতগুলো ভিন্ন ভিন্ন অসপেক্ট যখন মাঠে ক্রিয়াশীল থাকে, তখন আপনি কিভাবে একটা স্মুথ ইলেকশন আশা করেন? আপনি দেখুন, আমি আজকে লক্ষ্য করছিলাম, অন্ততপক্ষে সরকারের তরফে চারজন -আমি যদি ভুল না করি দুজন উপদেষ্টা এবং দুজন সরকারের রীতি নির্ধারণী মহলের- তারা বারবার কিরা কসম কেটে বলতেছে, ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে। কোন দল কি বলল কোন দল নির্বাচনে আসল বা না আসল তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। সরকার ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করেছে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। অর্থাৎ তারা নিজেরাও জানে যে কতটা ভলেটাইল একটা সিচুয়েশন এখন বাংলাদেশে প্রিভেল করছে। তারা নিজেরাও কিন্তু খুব একটা কনফিডেন্ট না যে কেমন ইলেকশন। বাট তারা রিপিটেডলি কথাটা বলছে।

আপনি যখন একটা কথা বারংবার বলবেন, তখন ওটা আপনার নিজের প্রতি আস্থাহীনতারই একটা বহিঃপ্রকাশ। না হলে একই কথা আসলে বারবার বলার দরকার নাই। এবং বাংলাদেশ বিশ্বের সম্ভবত অল্প কয়েকটা দেশের একটা যেখানে নির্বাচন আসলেই অবাধ সুষ্ঠ নিরপেক্ষ স্মরণকালের সবচেয়ে ভালো ইলেকশন কোনোদিন হয় নাই। আমরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ইলেকশন দেব। এইসব উদ্ভট এবং বাজে কথা নির্বাচনের আগে যুক্ত করা হয়। আরে ভাই, নির্বাচন মানেই তো ফ্রি ফেয়ার ইনক্লুসিভ এন্ড নিউট্রাল হওয়ার কথা। তো এটাকে আবার এতগুলো বিশেষণ দিতে হয় কেন? আমি তো এটাও বুঝি না। 

এসএন  

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মহাখালী সাততলা বস্তিতে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৫ ইউনিট Aug 20, 2025
img
পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি অব্যাহত রাখার দাবি হিলির আমদানিকারকদের Aug 20, 2025
img
আরিয়ানকে নিয়ে কোন স্বপ্ন দেখেন শাহরুখ? Aug 20, 2025
img
১৩২ কর্মকর্তাকে পদোন্নতির সুপারিশ করেনি পর্যালোচনা কমিটি Aug 20, 2025
img
দুদকের আরও এক উপ-পরিচালক সাময়িক বরখাস্ত Aug 20, 2025
img
সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার ঘোষণা, নিউক্যাসলকে ইসাকের কড়া বার্তা Aug 20, 2025
img
মহাখালীর সাততলা বস্তিতে আগুন, যানজটে আটকা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি Aug 20, 2025
img
উভকামী নিয়ে মন্তব্যে ফের বিতর্কে স্বরা ভাস্কর Aug 20, 2025
img
অবসরপ্রাপ্ত ৭৮ কর্মকর্তার পদোন্নতির সুপারিশ করেছে মন্ত্রণালয় Aug 20, 2025
img
৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা Aug 20, 2025
img
কারিগরির উপবৃত্তি সেলের নামে প্রতারণার ফাঁদ, সতর্কতা অধিদপ্তরের Aug 20, 2025
img
‘ধূমকেতু’র সাফল্যের মাঝেই মুম্বাইয়ে বৃষ্টির রঙে রঙিন শুভশ্রী Aug 20, 2025
img
কিংবদন্তি শিলটনকে পেছনে ফেলে ইতিহাস গড়লেন ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক Aug 20, 2025
img
হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেন মির্জা ফখরুল Aug 20, 2025
img
রজনী-কমলকে একসঙ্গে আনার স্বপ্নে লোকেশ কানাগরাজ Aug 20, 2025
img
ভারত মস্কোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, জানাল রাশিয়া Aug 20, 2025
img
কয়লাখনির পটভূমিতে আসছে শ্রুতি-আরাত্রিকার জোয়ার ভাঁটা Aug 20, 2025
img
শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ষষ্ঠ দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে Aug 20, 2025
img
অভিনয়ের পাশাপাশি ব্যবসায়িক মঞ্চে মৌ Aug 20, 2025
img
লাল নয়, ২০২৬ বিশ্বকাপে নীল জার্সিতে দেখা যাবে ব্রাজিলকে! Aug 20, 2025