ফেক পেজ খুলে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা তানভীর আল হাদী মায়েদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে মনোনয়ন নিয়েছেন।
গত বুধবার ছাত্রদল ডাকসু নির্বাচনে বিতর্কিত এ নেতাকে এজিএস প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা দেখা যায়।
বিতর্কিত এ নেতা জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে ডিপার্টমেন্ট অব বাকশাল, ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা’ নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে কয়েক মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, জামায়াত-শিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। পরে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর পেজটির এডমিন হিসেবে তার পরিচয় প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহিল বাকি।
আব্দুল্লাহিল বাকি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে বলেন, বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক (বর্তমান আহবায়ক) তানভীর আল হাদী মায়েদ বিতর্কিত সেই পেজের এডমিন।
সেই ফেসবুক স্ট্যাটাসে অভিযোগ করে তিনি লেখেন, ডিপার্টমেন্ট অব বাকশাল, ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা নামে একটি পেজ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে নানা সময়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার, ব্যাঙ্গাত্মক পোস্ট, কার্টুন, ছবি বিকৃতিসহ নানা কিছু পোস্ট করে আসছে। পেজটি থেকে কিছুদিন আগে এক উপদেষ্টারও ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন ছাপানো হয় দাঁড়ি-টুপি অ্যাড করে কটাক্ষ করে। পরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সেই পোস্ট পেজটি থেকে সরানো হয়। ।
তিনি লেখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক তানভীর আল হাদী মায়েদ পেজটির এডমিন। আবদুল গনি নামের আরেকটি আইডি এই পেজে এডমিন হিসেবে আছে। ওই আইডিটিতে মাত্র একজন ফ্রেন্ড এবং আইডিটি ঢাবির গ্রুপেও অ্যাড আছে। পেজটিতে মোট দুইটা এডমিন আছে ।
তিনি আরও লেখেন, এই কাজগুলো আগে করতো নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের লোকজন। প্রকৃতি সম্ভবত কোনো শূন্যস্থান রাখে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মানুষের নামে বিষোদগার ছড়ানো ঘৃণ্য কাজের সঙ্গে জড়িতরা ছাত্রদলের পোস্টেড নেতা। অবাক করা বিষয় হল- এই টাইপের আরও কিছু পেজ আছে। একটার সঙ্গে আরেকটা কানেক্টেড। সময়মতো সবকিছুই সামনে আনা হবে।
পরে সমালোচনার মুখে ডিপার্টমেন্ট অব বাকশাল, ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা পেজটি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলেও পূর্বের কিছু পোস্টের স্ক্রিনশট এখনো অনেকের কাছেই আছে। এর মধ্যকার একটি পোস্টে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমের মাথায় মহিষের শিং বসিয়ে লেখা হয়, ‘হাতমে গাঞ্জা, কাঁধে কাঁধ লড়কে ল্যাঙে পালংবাদ’। অন্য আরেকটি পোস্টে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) দিয়ে এডিট করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খানের ব্যাঙ্গাত্মক ভিডিও প্রচার করা হয়।
কীভাবে এই পেজটির হিডেন এডমিনদের পরিচয় জানা গেল এ বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল্লাহিল বাকি বলেন, আমরা একটি আইটি এক্সপার্ট ফার্মের সহযোগিতায় এডমিনদের পরিচয় শনাক্ত করেছি, যারা মেটার ডেটা নিয়ে কাজ করেন। তবে প্রাইভেসি পলিসির কারণে ওই ফার্মের নাম প্রকাশ করতে পারছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দিয়ে একটা পেজ থেকে বিভিন্ন মানুষের নামে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে, এটা কারও থেকেই আমরা প্রত্যাশা করি না।
এবিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা তানভীর আল হাদি মায়েদের সাথে কথা বললে তিনি উত্থাপিত অভিযোগটি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন,'আব্দুল্লাহিল বাকির ছড়ানো তথ্য গুলোর কোনো ভিত্তি নেই। এগুলো আমার বিরুদ্ধে প্রোপাগাণ্ডা হিসেবে ছড়ানোর জন্য পরিকল্পিত ভাবে তৈরি করা হয়েছে।
এদিকে এজিএস পদে বিতর্কিত এ নেতার মনোনয়ন নেয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে নাম প্রকাশ না করে একজন প্রার্থী জানান, 'একজন সাইবার ক্রিমিনাল হিসেবে চিহ্নিত কাউকে ছাত্রদল মনোনয়ন দিয়ে তাদের প্যানেলকে দূষিত করেছে'।
টিকে/