এশিয়া কাপকে সামনে রেখে পাওয়ার হিটিংয়ের ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে ইংলিশ কোচ জুলিয়ান রস উডকে নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। নেদারল্যান্ডস সিরিজ ও এশিয়া কাপের আগে লিটন দাস, জাকের আলী অনিক, তানজিদ হাসান তামিম ও শামীম হোসেন পাটোয়ারিদের নিয়ে কাজ করছেন তিনি। চুক্তি মাত্র ২৮ দিনের হলেও, উড জানিয়ে দিয়েছেন পাওয়ার হিটিং আয়ত্ত করা কোনো এক সপ্তাহের কাজ নয়, বরং এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া।
আধুনিক ক্রিকেটে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের হাত ধরে টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের ধরন আমূল বদলে গেছে। চার-ছক্কা মারার ক্ষমতা ছাড়া আজকের দিনে ব্যাটারদের টিকে থাকা কঠিন। নিকোলাস পুরান, আন্দ্রে রাসেল, লিয়াম লিভিংস্টোন কিংবা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরা যেমন ব্যাটিংকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট এখনো সেই তাল মেলাতে পারেনি। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে এসে সেই ঘাটতি প্রকটভাবে ধরা পড়ে। তাই বিসিবির আশ্রয় এখন উডের মতো বিশেষজ্ঞের কাছে।
বাংলাদেশে এসেই স্থানীয় কোচদের সঙ্গে ক্লাস নিয়েছেন তিনি। বিকেএসপিতে নারী ক্রিকেটারদের নিয়েও কাজ করেছেন। মিরপুরে ফিটনেস ক্যাম্প শেষে এখন লিটন-শামীমদের সঙ্গে চলছে তার পাওয়ার হিটিং অনুশীলন। নিজস্ব বিশেষ টুলস ব্যবহার করে ক্রিকেটারদের উন্নতির চেষ্টা করছেন এই ইংলিশ কোচ।
অনেকে মনে করেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের মতো বড় শারীরিক গঠন না থাকায় বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে পাওয়ারের ঘাটতি রয়েছে। তবে উডের চোখে এটি নিছক একটি ভ্রান্ত ধারণা। তার মতে, “বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের যথেষ্ট পাওয়ার আছে, শুধু সেটিকে ম্যাচে কিভাবে ব্যবহার করতে হবে সেটাই মূল বিষয়।”
সিলেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উড বলেন- “একটা মিথ চালু আছে, বাংলাদেশের ব্যাটারদের পাওয়ার নেই। আসলে তাদের মধ্যে যথেষ্ট শক্তি রয়েছে। মূল ব্যাপার হলো, সেই পাওয়ারকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা। যারা শারীরিকভাবে একটু ছোট গড়নের, তারা রিদম, টাইমিং আর মুভমেন্টের ওপর নির্ভর করে। যখন এগুলো ঠিক থাকে, ভেলোসিটি বেড়ে যায়। আমাদের কাজ হচ্ছে তাদেরকে বুঝানো, শরীর আর হাতের সমন্বয়ে কিভাবে শক্তি কাজে লাগাতে হবে।”
উড মনে করেন, এ ক্ষেত্রে মানসিকতার ভূমিকা সবচেয়ে বড়। খেলোয়াড়দের যদি বারবার বলা হয় তারা পারবেন না, তবে তারাও বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে আসলেই পারবেন না। তাই তিনি ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলতেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
“এটা পুরোপুরি মানসিকতার খেলা। আমি তাদের সেই মাইন্ডসেট তৈরির চেষ্টা করছি। যখন ব্যাটাররা নিজেরাই বিশ্বাস করবে তারা পারে, তখন সেটাই মাঠে কাজে দেবে। আর বিশ্বাস করুন, তারা সেটা করতে পারবে,”
চার সপ্তাহের সংক্ষিপ্ত এই ক্যাম্পে বড় পরিবর্তনের আশায় কেউ থাকলেও উড বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের শরীরে যেমন শক্তি আছে, তেমনি মনেও আছে দৃঢ়তা। সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে সেটিই হতে পারে বাংলাদেশের পাওয়ার হিটিং ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার পথ।
এসএস/টিকে