বিএনপির দপ্তর সম্পাদকের ভূমিকা পালন করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এমন অভিযোগ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণ অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে বিচার চান তিনি।
রোববার (২৪ আগস্ট) নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে এনসিপি নেতা আতাউল্লাহসহ নেতাকর্মীদের মারধরের প্রতিবাদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন এ মন্তব্য করেন তিনি।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা আজকে ন্যাক্কারজনক যে ঘটনাটি দেখলাম যেটার পুরো বাংলাদেশ সাক্ষী হয়েছে। এটি মূলত হচ্ছে আগামী নির্বাচন কেমন হতে পারে এবং সেই নির্বাচনে এই নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কী? নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কী হবে এবং আগামী নির্বাচনে বিএনপি কী ভূমিকা রাখবে এবং পুলিশ কী দর্শকের ভূমিকা রাখবে, কী ভূমিকা পালন করবে সেটির আজকে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।
কীভাবে বিএনপির একজন নেত্রী বলছেন, আমরা চাইলে এখানে গুণ্ডা নিয়ে আসতে পারতাম অর্থাৎ গুণ্ডার পৃষ্ঠপোষকতা উনারা দিয়ে আসছেন। আমরা দেখছি নির্বাচন কমিশনের বাহিরে লাঠিসোটা নিয়ে মহরা দিচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অফিসে যদি এই অবস্থা হয়, সারা বাংলাদেশে এ বিএনপির যারা রয়েছেন এই গুণ্ডাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন, তারা কীভাবে ভোট কেন্দ্র দখল করবে সেটির আজকে হচ্ছে টেস্ট ম্যাচ হয়ে গিয়েছে বলেও জানান তিনি।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বিএনপির আওয়ামী লীগ বিষয়ক সম্পাদক হচ্ছেন রুমিন ফারহানা। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তাবিত সীমানা নিয়ে দাবি-আপত্তি আবেদনের শুনানিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এদিকে, কমিশন বলছে সীমানা পুননির্ধারণে পেশাদারিত্বের সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার চেষ্টা করেছে ইসি। চার দিনের শুনানির প্রথম দিনে কুমিল্লা অঞ্চলের ১৮টি আসনের শুনানি হয়। ৩০ জুলাই ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে খসড়া চূড়ান্ত করে নাসির উদ্দিন কমিশন। এতে বেশ কিছু আসনে পরিবর্তনও আনা হয়। সংসদীয় আসনের খসড়া প্রকাশের পর ৮৩টি সংসদীয় এলাকার সীমানা নিয়ে এক হাজার ৭৬০টি দাবি-আপত্তির আবেদন নির্বাচন কমিশনে জমা হয়।
এদিনে দুপুরে শুনানির প্রথম দিনের শুরুতে অংশ নেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২ এবং ৩ আসনের আপিলকারীরা। শুনানি চলাকালীন অবস্থায় দুই পক্ষ উত্তেজিত হয়ে পড়লে একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তারপর ইসি কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২ এবং ৩ আসনের আপিলকারীরা।
পরে এনসিপির কর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতি প্রসঙ্গে বিএনপির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা বলেন, উনি যেহেতু পরিচিত মুখ নয় সুতরাং উনি জামায়াত না এনসিপি আমার জানা নেই। তবে উনার লোকজন প্রথম আমাকে ধাক্কা দিয়েছেন। আমার লোকজন তো বসে থাকবে না, কারণ আমি একজন নারী। আমার লোকজনকে মারধর করেছে, তখন আমার লোকজন জবাব দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা সবসময় বলেছি ২০০৮ সালের আগের সীমানায় আমরা ফিরতে চাই। আমিও মনে করি ২০০৮ এর আগে যে সীমানা ছিল সেখানেই আমাদেরকে এখন ফিরে যাওয়া উচিত। মাঝখানে ১৫ বছর একটা ফ্যাসিস্ট সরকার ছিল যারা তাদের নিজস্ব ভোট কারচুপির জন্য নিজস্ব সুবিধা অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ করেছে। সেই সীমানা আমরা মানি না। সেজন্য আমরা বলেছি ২০০৮ এর আগে যে সীমানা ছিল, খালেদা জিয়ার ইচ্ছা ছিল সেখানে যাওয়া হোক।
বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হলো এখানে একটি মারামারি হয়েছে। আমি যেহেতু একজন আইনজীবী, আমি মনে করেছি আমার কেস আমি নিজেই প্রেজেন্ট করব।
তিনি বলেন, আমি আশা করেছিলাম নির্বাচন কমিশনের সম্মানের দিকে তাকিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ এ যারা আছেন তারা গুণ্ডাপাণ্ডা নিয়ে ঢুকবে না নির্বাচন কমিশনে। কিন্তু দুঃখজনক হলো আমি দেখলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ৩ এ যিনি প্রার্থী, তিনি তার দলবল মানে ২০ থেকে ২৫ জন গুণ্ডাপাণ্ডার মতন, তারা সেখানে আচার আচরণ করলেন। অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় এটি, অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং আমি মনে করি এটা কমিশনের যে ভাবমূর্তি যে গাম্ভীর্য এবং যে সম্মান সেইটার সঙ্গে এটা যায় না।
এক সাংবাদিদের প্রশ্নের জবাবে রুমিন ফারহানা আরও বলেন, একজন আমাকে ধাক্কা দিয়েছেন। পাঞ্জাবে পরা একজন ধাক্কা দিয়েছেন। তারপরে আমার লোক তো বসে থাকবে না, আমি তো একজন নারী এবং পরে যখন আমার লোকজনকে মারধর করেছে, আমার লোকজন জবাব দিয়েছে। সিম্পল যেটা ১৫ বছরে হয় নাই সেটা আজকে হয়েছে। আমার গায়ে ধাক্কা দিয়ে আমাকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। যেই বিএনপির নেতাকর্মীদের জন্য গত ১৫ বছর লড়াই করলাম তারা আমাকে এখন ধাক্কা দেয়।
এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আতাউল্লাহ বলেন, আমরা জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছি। আজ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সামনে আমাকে যেভাবে পায়ের নিচে লাথি মারা হয়েছে, যেভাবে পেটানো হয়েছে, আমার জামাকাপড় ছিঁড়ে গেছে- সবাই দেখেছেন। আমি বলতে চাই, এই বাংলাদেশের জন্য আমরা জীবন দেইনি, রক্ত দেইনি, যাতে গণতন্ত্র নষ্ট হয়। আমরা চেয়েছিলাম একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকবে, যেখানে সবাই যুক্তি-তর্ক তুলে ধরতে পারবে। কিন্তু আমি আমার কথা বলতেই পারলাম না।
‘প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সামনে, নির্বাচন ভবনে যদি এত বড় একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলে কোথায় আমাদের নিরাপত্তা আছে? আমি নিরাপত্তা চাই’, যোগ করেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামলও কথা বলেন।
সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা এবং বিজয়নগর উপজেলার বুধস্তি, চান্দুয়া ও হরষপুর ইউনিয়ন নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর এবং বিজয়নগর উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া -৩ সন্নিবেশ করে ইসি।
সীমানা পুননির্ধারণে পেশাদারিত্বের সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার চেষ্টা করেছে বলে জানান কমিশন সচিব আখতার আহমেদ । ২৭ অগাস্ট পর্যন্ত শুনানি নিয়ে দাবি-আবেদন নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত সীমানা প্রকাশ করবে ইসি।
কেএন/এসএন