বাণিজ্যিক আদালত গঠন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে : প্রধান বিচারপতি

দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘ন্যায়বিচার যেমন স্বাধীনতার ভিত্তি, তেমনি বিশ্ব অর্থনীতিতে টিকে থাকার জন্য বাণিজ্যিক ন্যায়বিচার গুরুত্বপূর্ণ।’


রবিবার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বিচার বিভাগের সংস্কার নিয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিচার বিভাগের প্রধান বলেন, ‘বিচারে দীর্ঘসূত্রতার কারণে ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হাতাশা কাজ করে। সেই দীর্ঘসূত্রতা নিরসনে প্রশিক্ষিত বিচারক, ডিজিটাল ফাইলিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন আদালত গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনাও শুরু হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এই বিশেষায়িত আদালত চালু হলে বাংলাদেশের প্রতি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। চুক্তি বাস্তবায়নে দ্রুততা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত হলে দেশ বিনিয়োগ আকর্ষণে সক্ষম হবে এবং প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাবে। আইন বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, উদ্যোগটির বাস্তবায়ন হলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।’

বিচার বিভাগের সংস্কার নিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচার বিভাগে ঘোষিত সংস্কার কর্মসূচির প্রায় ৮০ শতাংশ ইতিমধ্যেই বাস্তবায়ন হয়েছে। আশা করছি, বাকি পদক্ষেপগুলোও সরকারের সহযোগিতায় বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।’

সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। বিচার বিভাগের কার্যক্রমে আরো স্বচ্ছতা আনতে হবে। বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের আচরণে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে এবং দেশের প্রতিটি আদালতে সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রসার ঘটাতে হবে।’

দেশের বিচার বিভাগ পূর্ণ স্বাধীনতা, শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচার বিভাগকে ন্যায্যতা, সাহস ও সততার সঙ্গে জনগণকে সেবা দিতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের জন্য স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে আশাবাদী প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সরকারের সামনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা। এটি হলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতার পৃথককরণ সাংবিধানিকভাবে আরো সুদৃঢ় হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিচার বিভাগের বিশ্বাসযোগ্যতা নির্ভর করে বিচারক নিয়োগের ন্যায্যতার ওপর। এ ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হচ্ছে- সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল কার্যকর করা। এর মাধ্যমে কলেজিয়ামভিত্তিক নিয়োগ ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এই পদ্ধতি বিচারক নিয়োগে স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ল্যাটিমার হাউস (গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানবাধিকার নিয়ে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর ঐকমত্য ঘোষণা) নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’

তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিলের মাধ্যমে ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতার মানদণ্ড অনুসরণ করে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বিচার বিভাগের ওপর জনআস্থা পুনরুদ্ধার করেছে। আর তরুণ প্রজন্মকে আশ্বস্ত করেছে, যোগ্যতা ও সততাই এখন বিচারক নির্বাচনের মূল ভিত্তি।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, গণফোরামের কার্যকরি সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

কেএন/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দুর্গাপূজায় বিজ্ঞাপনে একসঙ্গে মিমি-শুভশ্রী Sep 03, 2025
img
নির্বাচনের আগে ২ হাজার এএসআই নিয়োগ, সমান সংখ্যক পদোন্নতি : আইজিপি Sep 03, 2025
img
বেইজিংয়ে কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন পুতিন Sep 03, 2025
img
চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ৩টি সমস্যা চিহ্নিত করেছে রাশিয়া: পুতিন Sep 03, 2025
সত্য উদঘাটন হলে অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাব: সাবেক আইজিপি Sep 03, 2025
জুলাইয়ে আহত ১৫৬০ জনের পরিবারকে ফ্ল্যাট বরাদ্দ Sep 03, 2025
img
সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ডাকসুতে বিজয়ী হবে ছাত্রদল : রিজভী Sep 03, 2025
img
আফগানিস্তানের চেয়ে মানসিকভাবে পিছিয়ে পাকিস্তান : রমিজ রাজা Sep 03, 2025
img
কুড়িলে বেতন ভাতার দাবিতে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ, বন্ধ যান চলাচল Sep 03, 2025
img
নুর ও লুৎফরের ওপর হামলা প্রমাণ করে হাসিনার দোসররা এখনো সক্রিয় : দুদু Sep 03, 2025
img
আলী হুসেনের কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা পায়নি তদন্ত কমিটি Sep 03, 2025
img
কানাডা সুপার সিক্সটিতে মন্ট্রিয়াল টাইগার্সের আইকন ক্রিকেটার সাকিব Sep 03, 2025
img
ডাকসু ভোটে অংশ নিতে বাধা নেই এস এম ফরহাদের: আপিল বিভাগ Sep 03, 2025
img
ভক্তদের সুখবর দিলেন তানজিন তিশা! Sep 03, 2025
img

যাত্রী কল্যাণ সমিতি

আগস্ট মাসে সারা দেশে সড়ক-নৌ ও রেলপথে প্রাণ গেল ৫৬৩ জনের Sep 03, 2025
img
ডাকসু নির্বাচনে বাধা নেই Sep 03, 2025
img
কৌশলগত ভারসাম্যে আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান-রাশিয়ার সম্পর্ক! Sep 03, 2025
img
ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়াতে ইনবক্সে মেসেজ, পুলিশের নম্বর দিয়ে দিলেন পিয়া Sep 03, 2025
img
জামিন আবেদন করলেন সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী, শুনানি দুপুরে Sep 03, 2025
img
ম্যানচেস্টার সিটি ছেড়ে তুরস্কের ক্লাবে যোগ দিলেন গুন্ডোগান Sep 03, 2025