দীর্ঘ সাত বছর পর চীনের মাটিতে পা রেখেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সফর শুরুর পরই তিনি বৈঠক করেছেন দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে, কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গেও। তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল।
মোদির প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপেই ছায়ার মতো পাশে থাকেন দোভাল। চলতি বছরের মে মাসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময়ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। পাকিস্তানের ভেতর-বাইরের খবর যেন তার নখদর্পণে। কারণ, এই অজিত দোভালই একসময় পাকিস্তানে কাটিয়েছেন টানা আট বছর, গোপনে চালান করেছেন গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য। সেখান থেকেই শুরু তার ‘সুপার স্পাই’ খ্যাতির যাত্রা।
এরই মধ্যে ভূরাজনীতির অঙ্গনেও আলোচনায় ভারত। আচমকা যুক্তরাষ্ট্রের বিরাগভাজন হয়ে দেশটির ওপর শুল্ক চাপিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া, হাত বাড়িয়েছে চীনও। একসময় সীমান্ত সংঘাতে জড়ালেও এখন নয়াদিল্লিকে কাছে টানতে চাইছে বেইজিং। তাই এত বছর পর মোদির চীন সফরকে ঘিরে কূটনৈতিক হিসাব-নিকাশ আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
কিন্তু কূটনীতির এই মঞ্চে আলো কাড়ছেন দোভাল। পাঁচ বছর আগে তার কূটনৈতিক কারিশমাই ভারতকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছিল। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এসসিও’র অনলাইন বৈঠকে পাকিস্তান যখন নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশ করে কাশ্মীর ও জুনাগড়কে নিজেদের অংশ দেখায়, তখনই তীব্র আপত্তি জানায় ভারত। রাশিয়ার বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও পাকিস্তান মানচিত্র সরায়নি। শেষমেশ কঠোর বার্তা দিতে বৈঠক থেকেই বেরিয়ে যান দোভাল। তার এই পদক্ষেপেই ভারত স্পষ্ট বার্তা দেয় সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
অজিত দোভালের জীবন যেন গোয়েন্দা উপন্যাসের রোমাঞ্চকর কাহিনি। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত পাকিস্তানে আন্ডারকাভার এজেন্ট হিসেবে ছিলেন তিনি। মুসলিম ধর্মীয় নেতার বেশ ধরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন গোপন তথ্য সংগ্রহ করেছেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নানা পরিকল্পনা ভারতে পৌঁছে দিয়েছেন। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই ভারত নিয়েছিল গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সিদ্ধান্ত। নিজ দেশে দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে শান্তি প্রতিষ্ঠা সবক্ষেত্রেই নেপথ্য কারিগর হিসেবে কাজ করেছেন এই অভিজ্ঞ গোয়েন্দা।
সাত বছর পর মোদির চীন সফর যেমন কূটনীতির নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে, তেমনি আলোচনায় ফের উঠে এসেছেন ভারতের এই ‘সুপার স্পাই’।
এসএস/টিকে